ওয়ারীতে রেস্টুরেন্টে পুলিশের অভিযান, আটক ১৬
৪ মার্চ ২০২৪ ২১:১৬ | আপডেট: ৪ মার্চ ২০২৪ ২২:০৫
ঢাকা : বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের পর হোটেল-রেস্টুরেন্টে অভিযান শুরু করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। রোববার (৩ মার্চ) থেকে শুরু হওয়া অভিযানের ধারাবাহিকতায় আজ সোমবার (৪ মার্চ) ওয়ারীর র্যানকিন স্ট্রিটে অভিযান চালানো হয়। এদিন ১৪টি রেস্টুরেন্টে অভিযান চালিয়ে ১৬ জনকে আটক করা হয়। তারা সবাই রেস্টুরেন্ট কর্মচারী। তবে অভিযানে কোনো রেস্টুরেন্ট বা ভবন মালিককে আটক বা সতর্ক করা হয়নি।
সোমবার রাজধানীর র্যানকিন স্ট্রিটের রেস্টুরেন্টগুলোতে অভিযান পরিচালনা করেন ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইকবাল হোসাইন। এ সময় ন্যূনতম নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা ১৪ প্রতিষ্ঠানের ১৬ জন কর্মীকে আটকের পাশাপাশি জব্দ করেছে বেশ কয়েকটি গ্যাস সিলিন্ডার।
সরেজমিনে দেখা যায়, র্যানকিন স্ট্রিটের দুই পাশের আবাসিক ভবনে একাধিক রেস্টুরেন্ট ও পোশাকের দোকান। এ ছাড়াও, রাস্তার দুই পাশে বিকেলে খোলার অপেক্ষায় রয়েছে একাধিক স্ট্রিট ফুড ভ্যান। সড়কের রোজভ্যালি নামক শপিং মলের নিচের দিকে চারটি ফ্লোরজুড়ে রেস্টুরেন্ট ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির দোকান আর উপরের সব ফ্লোর আবাসিক। এখানেই রয়েছে জনপ্রিয় মেজ্জান হাইলে আইয়ুন, বার্গার এক্সপ্রেসসহ একাধিক রেস্টুরেন্ট।
রোজভ্যালির শুধুমাত্র একটি ফ্লোরেই রয়েছে ছয়টি রেস্টুরেন্ট। দোতলায় শিশুদের ইনডোর খেলার জায়গা বাবুল্যান্ড আর নিচতলায় মোবাইল ও অন্যান্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির শো-রুম। ভবনের তৃতীয় তলার একটি রেস্টুরেন্টে দু’দিন আগেই আগুন লেগে সব পুড়ে গেলেও পাশেই সবগুলো রেস্টুরেন্ট খোলা। এই রেস্টুরেন্টগুলোর কোথাও কোথাও পাওয়া গেল সিলিন্ডার। এ ছাড়া, ভবনের একটি সিঁড়ি খোলা থাকলেও এমার্জেন্সি এক্সিটের আরেকটি সিঁড়ি এমনকি ব্যালকনির দরজা পর্যন্ত তালাবদ্ধ।
আই লাভ মেজ্জান গিয়ে দেখা যায়, আগেই সবকিছু সরিয়ে রেখেছে সেখানের কর্মীরা। তাই কয়েকটি হাড়িপাতিল ছাড়া আর কিছু দেখা যায়নি। তবে ওই ভবনের এক্সিট গেটে প্রতিবন্ধকতা থাকায় ভবন কর্তৃপক্ষকে দায়ী করা হয়েছে। বার্গার এক্সপ্রেসে গিয়ে দেখা যায়, চার ফুট বাই ছয় ফুট সাইজের কিচেনে ৭-৮ জন শেফ কাজ করছেন। সেখানে ছোট একটি ফায়ার এক্সটিংগুইশার রয়েছে। তবে সেটি অকেজো বলেই মনে হয়েছে। এ ছাড়া, কিচেনে যাওয়ার পথে রয়েছে প্রতিবন্ধকতা।
শেফ টায়েফের এক্সিট পয়েন্টে তৈরি করা হয়েছে রিয়েলমি নামে একটি মোবাইল কোম্পানির শোরুম। এই ভবনের সিড়ি সর্বোচ্চ দেড় মিটারের বেশি হবে না। টিউন অ্যান্ড বাইটের কর্মীরা অভিযানের খবরে পুরো দোকান বন্ধ করে রেখেছিল। পরে পুলিশ ভেতরে ঢুকে দেখে অনন্ত মিনিট দশেক আগেও এটি খোলা ছিল। রেস্টুরেন্টের ২/১টি টেবিলে খাবারও রাখা ছিল। রান্না ঘরে কোনো সিলিডার পাওয়া যায়নি। তবে তাপ অনেক বেশি ছিল। পরে জানা গেলে, কিছু সময় আগেই তারা সিলিন্ডার সরিয়ে ফেলেছে। ডাইনিং লাউঞ্জের কিচেনে একাধিক এক্টিভ সিলিন্ডার পাওয়া গেছে। অভিযান পরিচালনা করা বাকি রেস্টুরেন্টগুলোর বাকিদেরও একই অবস্থা।
রোজভ্যালির সরু সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা স্বাভাবিক সময়েই নিরাপদ নয়। তার উপর দোতলায় একটি পোশাকের শো-রুম তাদের ম্যানিকুইন দাঁড় করিয়ে চলাচলের পথ আরও সংকীর্ণ করে ফেলেছে। ভবনটির কেয়ারটেকার মোহাম্মদ হারুন সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিদিন এই ভবনে অন্তত ২০০-২৫০ মানুষ যাওয়া-আসা করে। বাড়িওয়ালা পাশেই অন্য ভবনে থাকেন।’
রাস্তার দুই ধারে এভাবে নিয়মনীতি না মেনে রেস্টুরেন্ট বানানো নিয়ে সন্তুষ্ট নন স্থানীয় এলাকাবাসীও। তারা বলেন, ধীরে ধীরে কীভাবে যেন চোখের সামনে বাণিজ্য এলাকায় পরিণত হয়ে গেল। এখন প্রতিটি বাড়ির নিচতলায় দোকানপাট তৈরি করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এই এলাকায় এখন সবসময় রিকশার জ্যাম লেগে থাকে। আগে খুব স্বাভাবিকভাবেই এলাকার প্রতিটি গলিতে চলাচল করা যেত। এখন আর সেটি সম্ভব নয়। বাড়িওয়ালারা অতি মুনাফার লোভে ওয়ারী এলাকাটিকে বাণিজ্যিক এলাকায় পরিণত করেছে।
বড় দুর্ঘটনার পরই কেন অভিযান চালানো হয়? এমন প্রশ্ন ব্যাংকার রমা রানী দত্তের। স্বামী ও চার বছরের সন্তানকে নিয়ে পাঁচ বছর ধরে বাস করেন এই এলাকায়। সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘এভাবে অভিযান চালিয়ে লাভ নাই। যেখানে-সেখানে রেস্টুরেন্ট বানিয়ে এলাকাটিকে একদম অনিরাপদ করে ফেলা হয়েছে। এর জন্য দরকার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান। আবাসিক এলাকায় রেস্টুরেন্টের অনুমতি দেওয়া বন্ধ করতে হবে।’
এদিকে, অভিযান শেষে ডিসি মো. ইকবাল হোসাইন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা গতকাল থেকে অভিধানে নেমেছি। বিশেষ করে আমাদের ওয়ারী থানার অধীনের র্যানকিন স্ট্রিট অনেক ব্যস্ত একটি জায়গা। এই একটি রাস্তায় মোর দ্যান ফিফটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এই রেস্টুরেন্টগুলো আমরা ভিজিট করেছি। ভিজিট করতে গিয়ে আমরা যা পেয়েছি তা হলো— বেশিরভাগ রেস্টুরেন্টই আবাসিক ভবনে; গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে তারা রান্নার কাজ চালাচ্ছে। আমরা ভিজিট করে দেখেছি, রেস্টুরেন্টের কাস্টমার সেফটি কোড, কিচেন কোড- কোনো কিছুই তারা নিশ্চিত করতে পারেনি।’
তিনি বলেন, ‘এমনকি এও দেখেছি যে, কিচেন চার ফুট বাই ছয় ফুট জায়গার মধ্যে করা হয়েছে। এমন জায়গার মধ্যে সাত থেকে আট জন শেফ রান্না করছেন। যে দরজা খুলে কিচেন থেকে বের হবে সেই দরজার সামনে চালের বস্তা, আটার বস্তা রাখা। একই পাশে সিলিন্ডার, জেনারেটর একসঙ্গে রেখেছে। মূলত চরম অনিরাপদ অবস্থায় তারা রেস্টুরেন্টগুলো পরিচালনা করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত ১৬ জনকে আটক করেছি। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব। ন্যূনতম সেফটি যারা মেইনটেইন করতে পারেনি এমন রেস্টুরেন্ট থেকে তাদের আটক করা হয়েছে।’
সারাবাংলা/আরএফ/পিটিএম