Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘বছরে হাজার কোটি টাকা চাঁদা দেয় বাস পরিবহণ খাত’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৫ মার্চ ২০২৪ ২০:২৬

ঢাকা: বাংলাদেশে ব্যক্তি মালিকানাধীন বাস পরিবহন খাত আপাদমস্তক অনিয়ম-দুর্নীতিতে নিমজ্জিত বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির বলছে, দেশে ব্যক্তি মালিকানাধীন বাস ও মিনিবাস থেকে বছরে ১ হাজার ৬০ কোটি টাকা চাঁদা আদায় হয়। আর এই চাঁদার ভাগ পায় দলীয় পরিচয়ধারী ব্যক্তি বা গোষ্ঠী, ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কর্মকর্তা-কর্মচারী, মালিক-শ্রমিক সংগঠন ও পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধিরা। ব্যক্তি মালিকানাধীন বাস পরিবহন ব্যবসায় শুদ্ধাচার নিশ্চিতে ১৫ দফা সুপারিশ করেছে টিআইবি।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৫ মার্চ) ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে টিআইবি কার্যালয়ে ‘ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস পরিবহন ব্যবসায় শুদ্ধাচার’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটি এ তথ্য জানায়।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির পক্ষ থেকে বলা হয়, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে মালিক-শ্রমিক সংগঠন ও সিন্ডিকেট এই খাতকে জিম্মি করে রেখেছে। ক্ষেত্রবিশেষে এই আঁতাতের ফলে সরকারও ক্ষমতাহীন হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে।

বাস পরিবহন খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির মূলে থাকা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ও সিন্ডিকেটের ভূমিকা উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ব্যক্তি মালিকানাধীন বাস পরিবহন খাত আপাদমস্তক অনিয়ম-দুর্নীতিতে জর্জরিত। এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতায় বলীয়ান মালিক ও শ্রমিকদের সংগঠনের আঁতাত।

গবেষণালব্ধ তথ্যানুযায়ী, বাস কোম্পানির প্রায় ৯২ শতাংশের মালিক ও পরিচালনা পর্ষদের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ ক্ষমতাসীন দল ও বাকি ১২ শতাংশ অন্যান্য দলের। ফলে এই জনগুরুত্বপূর্ণ খাতটি যাত্রীবান্ধব গণপরিহন হয়ে উঠছে না। বাস্তবে তা জিম্মি হয়ে আছে মালিক-শ্রমিকদের সংগঠনের কাছে। আর এই জিম্মিদশার সুযোগ নিয়ে অনৈতিক সুবিধা ভোগ করছে সিন্ডিকেট। এই জিম্মি দশা এতটাই প্রকট যে, মালিক-শ্রমিকের আঁতাতের কারণে তাদের আচরণ অবস্থাদৃষ্টে সরকারের চেয়ে বেশি ক্ষমতাবান হিসেবে মনে হয়।

টিআইবির গবেষক মুহা. নূরুজ্জামান ফারহাদ, ফারহানা রহমান ও মোহাম্মদ নূরে আলম গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন।

টিআইবির গবেষণায় দেখা যায়, বাস পরিবহন খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির মহোৎসবের কেন্দ্রে রয়েছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য ও সমর্থনপুষ্টদের দ্বারা পরিবহন ব্যবসা নিয়ন্ত্রিত হওয়া। মালিক সংগঠনের নেতাদের অধিকাংশ ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। জরিপে অংশগ্রহণকারী ২২টি (১৩.১%) কোম্পানির কাছে ৮১ দশমিক ৪ শতাংশ বাসের মালিকানা রয়েছে। এ সব বৃহৎ বাস কোম্পানির প্রায় ৯২ শতাংশের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল (৮০ শতাংশ) এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের (১২ শতাংশ) প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তারা মালিক ও শ্রমিক সংগঠনে একচেটিয়া ক্ষমতা চর্চার পাশাপাশি নীতি করায়ত্ব করার মাধ্যমে আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগে প্রতিবন্ধকতা তৈরির মাধ্যমে খাতটিকে জিম্মি করে রেখেছেন।

বিজ্ঞাপন

বাস পরিবহনে অনিয়ম ও দুর্নীতির আরও প্রকট উদাহরণ হলো- জরিপে অংশগ্রহণকারী কর্মী/শ্রমিকদের ৪০ দশমিক ৯ শতাংশের মতে, তাদের সংশ্লিষ্ট কোম্পানির এক বা একাধিক বাসের নিবন্ধনসহ কোনো না কোনো সনদের ঘাটতি আছে। ২৪ শতাংশ কর্মী/শ্রমিকের মতে, তাদের সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কোনো না কোনো বাসের ফিটনেস সনদ নেই এবং ২২ শতাংশ বলেছেন বাসের রুট পারমিট নেই।

এ ছাড়া, ব্যক্তিমালিকানাধীন বাসে পেশাদার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও লাইসেন্সধারী চালকের সংকট আছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী ১১ দশমিক ৯ শতাংশ বাস মালিক জানান, তাদের কোম্পানিতে এক বা একাধিক পেশাদার লাইসেন্সবিহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সধারী চালক আছে। জরিপের ২২ দশমিক ২ শতাংশ কর্মী/শ্রমিকের তথ্যানুযায়ী, মদ্যপান বা নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করে চালক গাড়ি চালান এবং কন্ডাক্টর/হেলপার/সুপারভাইজার বাসে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া, চলন্ত বাসে চালকেরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। ফলে অনেক সময় প্রাণহানিসহ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।

টিআইবি জানায়, প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, অতিরিক্ত আসন সংযোজন, নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ইত্যাদি। জরিপে অংশগ্রহণকারী সিটি সার্ভিসের ৮৯ দশমিক ২ শতাংশ এবং আন্তঃজেলার ৬০ দশমিক ৪ শতাংশ কর্মী/শ্রমিকের মতে, তাদের সংশ্লিষ্ট কোম্পনির বাসে নিয়ম অনুযায়ী টায়ার, ইঞ্জিন ওয়েল, ব্রেক সংক্রান্ত সরঞ্জামাদি ইত্যাদি পরিবর্তন ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। বাসের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়মিত না করায় তাদের সংশ্লিষ্ট কোম্পানির গাড়ি সড়ক পথে কালো ধোঁয়া নির্গমন বা নিঃসরণ করে। অনেক ক্ষেত্রে বাস মালিকরা নকশা পরিবর্তন করে বাসে অতিরিক্ত আসন যোগ করে যাত্রী পরিবহন করে থাকে। সিটি সার্ভিসের কর্মী/শ্রমিকদের ৪০ দশমিক ৪ শতাংশ বলেছেন, তাদের সংশ্লিষ্ট কোম্পানির গাড়িতে নকশা পরিবর্তন করে অতিরিক্ত আসন সংযোজন করা হয়েছে।

জরিপে অংশগ্রহণকারী ৩৫ দশমিক ২ শতাংশ নারী বাসযাত্রী যাত্রাপথে কোনো না কোনো সময় যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বা হতে দেখেছেন। এ হার আন্তঃজেলা (দূরপাল্লা ও আঞ্চলিক) বাসের ক্ষেত্রে ৩১ দশমিক ৩ শতাংশ এবং সিটি সার্ভিসের ক্ষেত্রে ৪২ দশমিক ৬ শতাংশ। যৌন হয়রানির শিকার নারীদের মধ্যে ৮৩ দশমিক ২ শতাংশ সহযাত্রী এবং ৬৪ দশমিক ৩ শতাংশ হেলপার দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন।

গবেষণায় আরও দেখা যাচ্ছে, বছরে প্রায় ১ হাজার ৬০ কোটি টাকা চাঁদা বা নিয়মবহির্ভূত অর্থ হিসেবে দিতে বাধ্য হন বাস মালিক ও কর্মী/শ্রমিকরা। এর মধ্যে প্রায় ২৫ কোটি টাকা দলীয় পরিচয়ে সড়কে চাঁদাবাজি হয় বলে উঠে এসেছে গবেষণায়। এ ছাড়া রাজনৈতিক সমাবেশ, বিভিন্ন দিবস পালন, টার্মিনালের বাইরে (রাস্তায়) পার্কিং এবং সড়কের বিভিন্ন স্থানে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন ও ‘টোকেন বাণিজ্যে’র জন্য বাস মালিক ও কর্মী/শ্রমিকরা চাঁদা বা নিয়মবহির্ভূত অর্থ দেয় বা দিতে বাধ্য হয় বাস মালিক। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বড়ো অংশ হলো নিবন্ধন ও সনদ গ্রহণ ও হালনাগাদ বাবদ ঘুষ। বাস মালিক-শ্রমিকদের বিআরটিএকে বছরে ঘুষ দিতে হয় ৯০০ কোটি টাকার বেশি।

ব্যক্তি মালিকানাধীন বাস পরিবহন ব্যবসায় সুশাসন নিশ্চিতে ১৫ দফা সুপারিশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সব বাস কোম্পানিতে অনানুষ্ঠানিক নিয়োগ বন্ধ করে শ্রম আইন, ২০০৬ অনুযায়ী কর্মী/শ্রমিক নিয়োগ; প্রয়োজনীয় নীতিমালা (অর্থ ও প্রশাসন, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, জেন্ডার, অভিযোগ গ্রহণ ও নিরসন, তথ্য উন্মুক্তকরণ, ক্রয়, টিকেট ইত্যাদি সংক্রান্ত) প্রণয়ন এবং তা তদারকির আওতায় আনা; জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন, বিশেষ করে মালিক ও কর্মী/শ্রমিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্দিষ্টকরণসহ নৈতিক আচরণবিধি প্রণয়ন ও তার প্রয়োগ নিশ্চিত করা; সবধরনের প্রভাবমুক্ত হয়ে সড়ক পরিবহণ আইন, ২০১৮-এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।

সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম

চাঁদা টপ নিউজ টিআইবি বাস

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

বিএসইসি‘র চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:৫১

বাড়তে পারে তাপমাত্রা
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:৩৪

গুলশানে দুইজনের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:৫৫

সম্পর্কিত খবর