Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এস আলম’র আগুন: এক রাতেই অস্থির চিনির বাজার

রমেন দাশ গুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৫ মার্চ ২০২৪ ২১:৪৮

চট্টগ্রাম ব্যুরো: এস আলম গ্রুপের সুগারমিলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার একদিনের মধ্যেই চট্টগ্রামে চিনির বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, এক রাতের মধ্যেই আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা মজুত চিনি প্রায় সরিয়ে নিয়েছেন। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে চিনির দর মণপ্রতি ২০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, চট্টগ্রামের চিনির বাজার মূলত এস আলমের সুগার মিলনির্ভর। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এস আলম চিনি সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। এর প্রভাব বাজারে পড়েছে। অন্যান্য মিল মালিকরাও প্যাকেটজাত চিনি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় দাম বাড়ছে।

সোমবার (৪ মার্চ) বিকেল ৪টার দিকে চট্টগ্রামের এস আলম সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, নৌ ও বিমানবাহিনী এবং কোস্টগার্ডের সদস্যদের চেষ্টায় রাত ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে ২৪ ঘন্টা পার হলেও আগুন এখনও নেভাতে সক্ষম হয়নি ফায়ার সার্ভিস।

এ ঘটনার পর মঙ্গলবার দেশে ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে এস আলমের চিনির দাম মণপ্রতি কোথাও ২০ টাকা, আবার কোথাও অন্তত ১০০ টাকা বেড়েছে। খুচরায় কেজিতে বেড়েছে অন্তত দুই টাকা।

চিনি ব্যবসায়ী মেসার্স প্যারাগন ট্রেডিংয়ের স্বত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ শাহেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল (সোমবার) এস আলমের চিনি মণপ্রতি ৪ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আজ (মঙ্গলবার) ৪ হাজার ৯২৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে।’

আকস্মিক দাম বেড়ে যাবার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে সাধারণত এস আলমের চিনিই বিক্রি হয়। কারণ মিলটা চট্টগ্রামে। এখানে বাজারে চিনি সাপ্লাই পেতে কস্টিংটা কম হয়। দেশের অন্যান্য মিলের চিনি চট্টগ্রামে কম আসে। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর আজ এস আলম তাদের মিল থেকে কোনো চিনি সরবরাহ করতে পারেনি। যেগুলো বাজারে আগে থেকে মজুত আছে, সেগুলো বিক্রি হয়েছে। সেজন্য দাম কিছুটা বেড়েছে।’

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি ও মেসার্স তৈয়বিয়া ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী সোলায়মান বাদশা সারাবাংলাকে বলেন, ‘এক রাতেই চিনি বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে। আজ (মঙ্গলবার) সারাদিন কাস্টমারও কম ছিল, চিনিও ছিল না। গতকাল যে চিনি মণপ্রতি পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেটা আজ আরও ১০০ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হয়েছে। এস আলমের চিনি বিকেলে মণপ্রতি ১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দামে বিক্রি হয়েছে।’

মঙ্গলবার সকালে অগ্নিকাণ্ডকবলিত চিনিকল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ। তিনি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা এর সুযোগ নিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন।

আগুনের ঘটনায় চিনির সরবরাহে কোনো সংকট হবে না জানিয়ে সাইফুল আলম মাসুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুয়েকদিন পর থেকে আমার মিলে ডেলিভারি শুরু হয়ে যাবে। প্রোডাকশন চালু করব। গোডাউনে মাল আছে, সেটা দিয়ে এক সপ্তাহ মিনিমাম চলবে। প্রোডাকশনে যেতে লাগবে দু’দিন। আর সমস্যা হবে না।’

মালিক এমন কথা বললেও কারখানা প্রাঙ্গণে উপস্থিত কর্মকর্তারা পুড়ে যাওয়া চিনির পরিমাণ নিয়ে একেকসময় একেক তথ্য দেন। এতে আগুনের ঘটনায় ঠিক কী পরিমাণ চিনি নষ্ট হয়েছে সেটা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা। সোমবার বিকেলে আগুন লাগার পর এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম গুদামে ৬৫ হাজার মেট্রিক টন অপরিশোধিত চিনি ছিল বলে দাবি করেন।

এরপর সন্ধ্যায় এস আলম গ্রুপের ব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ ও প্রশাসন) হোসাইন রানা দাবি করেন, এক লাখ মেট্রিক টন। মঙ্গলবার সকালে গ্রুপের প্রধান ভূ-সম্পদ কর্মকর্তা মোস্তাফা আদিল দাবি করেন, দেড় লাখ মেট্রিক টন। তবে যে পরিমাণ অপরিশোধিত চিনিই পুড়ে যাক, এক রাতের ব্যবধানে দাম বেড়ে যাওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ দেখছেন না ব্যবসায়ী নেতারা।

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক ও খাতুনগঞ্জের মেসার্স আর এম এন্টারপ্রাইজের মালিক আলমগীর পারভেজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশে তো চিনির মিল শুধু একটা নয়। এস আলমের মিলে আগুন লেগেছে। চিনির মিল তো আরও ছয়টা আছে। বাজারে অগ্নিকাণ্ডের কোনো প্রভাব পড়ার কথা নয়। এস আলমের গোডাউনে ৫০ হাজার মেট্রিক টন রেডি মাল আছে। আরও দুটি গোডাউনে র-মাল আছে। প্রোডাকশন দিলেই বাজারে চিনি আসবে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’

ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শাহেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের বাইরে আরও মিল আছে। মেঘনা গ্রুপের মিল আছে, দেশবন্ধু সুগারমিল আছে। সেখান থেকে যখন মাল আসা শুরু হবে, তখন অটোমেটিক চিনির দাম পড়ে যাবে।’

দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)’র সভাপতি মাহবুবুল আলমও সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন যে, এস আলমের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে চিনির বাজারে প্রভাব পড়বে না। কিন্তু বাস্তবে যে খাতুনগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী সমাজকে একসময় নেতৃত্ব দিয়েছেন মাহবুবুল আলম, সেই বাজারেই চলছে অস্থিরতা।

বছরে বাংলাদেশে ২০ থেকে ২২ লাখ মেট্রিকটন চিনির চাহিদা আছে। চট্টগ্রামের এস আলম সুগারমিল থেকে চাহিদার ১০ শতাংশ চিনি সরবরাহ করা হয়।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

অস্থির এস আলম চিনির কারখানায় আগুন চিনির বাজার টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর