ঠাকুরগাঁওয়ে অর্ধশতাধিক বিদ্যালয়ে মানা হচ্ছে না নীতিমালা
৯ মার্চ ২০২৪ ০৮:০৬
ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ে নিম্ন ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে তার দায়িত্বের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি ও ব্যাপক অনিয়মের ঘটনা বেড়েই চলেছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) নীতিমালা এবং মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র উপেক্ষা করে ‘ভারপ্রাপ্ত’ ওই পদে নানা অনিয়ম ঘটছে। প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে প্রশাসনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের নানা ঘটনা। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে পড়ালেখার পরিবেশ।
দেশের উত্তরের ঠাকুরগাঁও জেলায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭০৭টি। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৬৬টি। এর মধ্যে প্রায় অর্ধশতাধিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ঘটেছে প্রশাসনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের ঘটনা।
২০১১ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী ‘প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে তার দায়িত্বপালন’ সম্পর্কে বলা আছে, বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক না থাকলে জ্যেষ্ঠতম সহকারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করবেন। জ্যেষ্ঠতম সহকারী শিক্ষক নির্বাচনের ক্ষেত্রে এমপিও ভূক্তির তারিখ, এমপিও ভূক্তির তারিখ একই হলে যোগদানের তারিখ, যোগদানের তারিখ একই হলে বয়সের দিক থেকে জ্যেষ্ঠতম সহকারী শিক্ষকের দায়িত্ব দিতে হবে এবং সমবয়সী হলে শিক্ষাগত যোগ্যতাকে প্রাধান্য দিতে হবে।
কিন্তু মাউশি নীতিমালা এবং মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র উপেক্ষা করে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বালাপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বালাপাড়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়সহ জেলার প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে স্বজনপ্রীতি আর অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে।
বালাপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহজাহান আলী বলেন, ‘এই বিদ্যালয়ে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। নিয়মবর্হিভূত ভাবে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। স্কুলের সম্পত্তি বন্ধক রাখা হয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম পরিবর্তন আসবে। কিন্তু আমাদের কাউকে জানানো হলো না। প্রধান শিক্ষক এবং কমিটির সভাপতি মিলে সর্বকনিষ্ঠ শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিলেন। পরিশেষে ফেসবুকে দেখা গেল সবার মতামতের ভিত্তিতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’
বালাপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু তাহের বলেন, ‘সম্পূর্ণ অনিয়ম করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একদিনের সিনিয়র হলে তাকেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়ার নিয়ম।’
বিদ্যালয়ের আরেক সহকারী শিক্ষক তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাবেক প্রধান শিক্ষক এবং কমিটি সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূতভাবে কাজটি করেছে। আমরা এ ব্যাপারে কিছুই জানি না, আমাদের সঙ্গে কোন আলোচনাও করা হয়নি।’
বালাপাড়া দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম সরওয়ার মোর্শেদ, এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি।
বালাপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনোয়ার হোসেন নীতিমালা বহির্ভূতের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের জয়েন্ট সেক্রেটারি। কমিটি যদি মনে করে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে, সে জন্য আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে, তাছাড়া অন্য কিছু না।’
বালাপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মতিয়র রহমান এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মধুপুর কাকলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি বদরুল ইসলাম বিপ্লব বলেন, ‘সিনিয়র শিক্ষক ছাড়া অন্য কাউকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়ার সুযোগ নেই। যদি কোথাও করা হয়, তা নিয়মবর্হিভূত ভাবে করা হয়েছে।’
ঠাকুরগাঁও জেলা শিক্ষা অফিসার মো. শাহীন আকতার বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক না থাকলে সহকারী প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক না থাকলে সিনিয়র শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করবেন। যদি কোথাও এর ব্যতয় ঘটে তাহলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সারাবাংলা/এমও