Wednesday 04 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চিনি ‘কারসাজিতে’ চেম্বার নেতার প্রতিষ্ঠান, অভিযানে ম্যাজিস্ট্রেট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১০ মার্চ ২০২৪ ১৯:২৪ | আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৪ ১৯:৫৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো : ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে দু’টি বড় প্রতিষ্ঠানে তেল-চিনি নিয়ে কারসাজির তথ্য পেয়ে অভিযান চালিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। পরে কারসাজির প্রমাণ পাওয়ায় উভয় প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে ‘আর এম এন্টরাপ্রাইজ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক আলমগীর পারভেজ চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক। তিনি দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)’র সভাপতি মাহবুবুল আলমের ভাই।

বিজ্ঞাপন

দীর্ঘসময় ধরে চট্টগ্রাম চেম্বারসহ বিভিন্ন সংগঠনে নেতৃত্ব দিয়ে আসা প্রভাবশালী ব্যবসায়ী পরিবারটির একটি প্রতিষ্ঠান জরিমানার মুখে পড়া নিয়ে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে জোর আলোচনা চলছে।

রোববার (১০ মার্চ) দুপুরে খাতুনগঞ্জে এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত। একই অভিযানে তেল-চিনি বিক্রিতে অনিয়মের জন্য নাবিল গ্রুপকে এবং আমদানি মূল্যের প্রায় দ্বিগুণ দামে এলাচ বিক্রির জন্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এ বি ট্রেডার্সকেও জরিমানা করা হয়েছে।

আর এম এন্টারপ্রাইজ চট্টগ্রামে ভোজ্যতেল ও চিনির অন্যতম শীর্ষ পাইকারি প্রতিষ্ঠান। নাবিল গ্রুপও একই পণ্যের অন্যতম বড় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। আর অমর কান্তি দাশের মালিকানাধীন এবি ট্রেডার্স এলাচসহ গরম মশলা আমদানি ও পাইকারি বিক্রির জন্য সুপরিচিত।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত সারাবাংলাকে বলেন, ‘এস আলমের চিনির গুদামে আগুন লাগার পর খুচরা পর্যায়ে কেজিপ্রতি দাম দুই থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। পাইকারি পর্যায়েও চিনির বাজার কিছুটা অস্থিতিশীল হয়েছিল। আমরা সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করে পাইকারি পর্যায়ে কিছু কারসাজির তথ্য পাই। এর পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে চিনি সবচেয়ে বেশি যারা পাইকারিতে সরবরাহ করেন, তাদের মধ্যে আর এম এন্টারপ্রাইজ ও নাবিল গ্রুপ সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান। আমরা তাদের কাছে চিনির ক্রয়মূল্য ও বিক্রয়মূল্য যাচাইয়ের জন্য এসেছিলাম। কিন্তু দুটি প্রতিষ্ঠানই আমাদের কেনা-বেচার কোনো রশিদ দেখাতে পারেননি। তারা ক্রয়-বিক্রয় রশিদ সংরক্ষণ করেন না। ফলে কত টাকায় উনারা কিনছেন এবং কত টাকায় বিক্রি করছেন সেটার সঠিক কোনো তথ্য ভোক্তাপর্যায়ে পাওয়া যাচ্ছে না। আর এ সুযোগটা তো কেউ না কেউ নিচ্ছেই।’

বিজ্ঞাপন

আর এম এন্টারপ্রাইজকে ৩০ হাজার টাকা এবং নাবিল গ্রুপকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী মাজিস্ট্রেট।

আর এম এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী আলমগীর পারভেজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ক্রয়রশিদ দেখাতে না পারায় আমাদের জরিমানা করা হলো। অথচ আমরা বারবার বলে আসছি যে, আমাদের কোনো ফার্স্ট পার্টি অর্থাৎ কোনো মিল মালিক বিক্রয় রশিদ দেয় না। আমরা তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকিয়ে দিই, তারা আমাদের মাল দিয়ে দেয়। বিশ্বাসের ওপর আমরা তাদের টাকা দিই, তারা মাল দেয়। শুধু চট্টগ্রাম নয়, ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারাদেশের কোনো মিল মালিক বিক্রয় রশিদ দেয় না।’

‘আমি ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম চেম্বার ও এফবিসিসিআইকে লিখিত চিঠি দিয়ে জানিয়েছি যে, মিল মালিকরা বিক্রয় রশিদ না দেওয়ার কারণে আমাদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। আজ (রোববার) আবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলো। তাদের কাছ থেকে ক্রয় রশিদ না পেলেও আমরা কিন্তু যাদের কাছে মাল বিক্রি করি, তাদের রশিদ দিই। আমার দোকানের সামনে বোর্ডে লেখা আছে, কেউ আমার থেকে মাল কিনলে করলে অবশ্যই যেন বিক্রয় রশিদ নেয়’— বলেন আলমগীর পারভেজ।

নাবিল গ্রুপের চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিউল আলম বাদশা সারাবাংলাকে বলেন, ‘রশিদ আদান-প্রদানের সিস্টেমটা আগে চালু ছিল, গত তিন-চার বছর ধরে সেটা আর নেই। এখন গিভ অ্যান্ড টেক সিস্টেমে চলে, আপনি আমাকে রশিদ দিলে আমিও দেবো। এখন জরিমানা করার মাধ্যমে একটা মেসেজ তো অন্তত আমরা পেলাম। এখন থেকে আমরা মাল কিনতেও রশিদ নেব বেচতেও রশিদ দেবো।’

এদিকে, আর এম এন্টারপ্রাইজে অভিযানের খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমেদ। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এটা ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারাদেশের সমস্যা। আমি সরকারের উচ্চপর্যায়ে আবেদন করব, যারা উৎপাদনকারী, তারা বিপনণকারীদের বিক্রয় রশিদ যেন দেয়। আর সেজন্য সরকার যেন যথাযথ ব্যবস্থা নেয়। ছোট-খাট, মাঝারি ধরনের ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন, এটা খুব দুঃখজনক। যারা প্রোডাকশন করে, তারা কোনো বিক্রয় রশিদ দিচ্ছে না, তাহলে আমরা কিভাবে দেবো?’

তিনি আরও বলেন, ‘উৎপাদনকারীরা যেন বিক্রয় রশিদ দেয় সেই পদক্ষেপ সরকারের নিতে হবে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি, এখনও বলছি যে, আমাদের হয়রানি থেকে বাঁচানোর জন্য সরকারই যেন মনিটরিং করে আমাদের ক্রয় রশিদ পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়।’

এদিকে, আমদানি করা এলাচ অতিরিক্ত দামে বিক্রির অভিযোগ পেয়ে এ বি ট্রেডার্স নামে একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। সেখানে ২২০০ টাকা থেকে ৩১০০ টাকায় এলাচ বিক্রি হচ্ছিল। প্রতিষ্ঠানটিকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবি ট্রেডার্স চট্টগ্রামে এলাচের সর্ববৃহৎ আমদানিকারক। নিয়ম হচ্ছে, উনারা আমদানি মূল্যের ওপর সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ লাভ করতে পারবেন। সে হিসেবে উনাদের আমদানি মূল্য, ভ্যাট, পরিবহণ খরচ, খালাসসহ সর্বোচ্চ এক কেজি এলাচ আনতে খরচ হয় দেড় হাজার টাকার মতো। সেক্ষেত্রে উনারা যদি ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকার মধ্যে এক কেজি এলাচ বিক্রি করতে পারেন, তাহলে দামটা যৌক্তিক হয়।’

তিনি বলেন, ‘কিন্তু উনারা বিক্রি করছেন ২২০০ টাকা থেকে ৩১০০ টাকার মধ্যে। এ দামে এলাচ বিক্রির কোনো যুক্তি নেই। আমরা জরিমানা করার পর মালিক অঙ্গীকার করেছেন যে, উনি ১৭০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে বিক্রি করবেন।’

এলাচ আমদানিকারক অমর কান্তি দাশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা যেখানে থেকে আমদানি করি, সেখানে এবার ৩৮ শতাংশ শস্য প্রাকৃতিক কারণে নষ্ট হয়েছে। এখন চাইলেও আমি এলসি করে মাল আনতে পারছি না। সুতরাং ইন্ডিয়ার মার্কেটে যদি এলাচের দাম তিন হাজার টাকা হয়, এখানে চার হাজার হওয়া স্বাভাবিক। আবার এখানে অনেকে শুধু স্লিপ বিক্রি করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। না হলে দুই হাজার টাকার ওপরে দাম হতো না।’

উল্লেখ্য, গত ৪ মার্চ খাতুনগঞ্জে অভিযান চালিয়ে একই অভিযোগে এলাচের অন্যতম প্রধান আমদানিকারক মেসার্স আবু মোহাম্মদ অ্যান্ড কোম্পানিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

অভিযান কারসাজি চিনি চেম্বার নেতা প্রতিষ্ঠান ম্যাজিস্ট্রেট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর