Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সাদ এরশাদের ‘দুর্ব্যবহারে’ নেতাকর্মীরা অতিষ্ঠ, জাপায় অস্থিরতা

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৩ মার্চ ২০২৪ ১০:৪১

ঢাকা: দলের চেয়ারম্যানকে অব্যাহতি দিয়ে নিজেকেই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছিলেন দলটির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ। তিন দিন আগে কাউন্সিল আয়োজন করে কমিটিও গঠন করেছেন। কাউন্সিলেও পার্টির চেয়ারম্যান হয়েছেন রওশন এরশাদই। তার ছেলে রাহগির আল মাহি ওরফে সাদ এরশাদ পেয়েছেন কো-চেয়ারম্যান পদ। তবে কমিটি গঠনের সপ্তাহ না পেরোতেই জাতীয় পার্টির এই অংশের মধ্যে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। বিশেষ করে নানা ধরনের প্রশ্ন উঠেছে দলীয় নেতাদের সঙ্গে সাদ এরশাদের ব্যবহার নিয়ে।

বিজ্ঞাপন

দলটির নেতাকর্মীরা বলছেন, সাদ এরশাদের দুর্ব্যবহারে রীতিমতো অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। কমিটি গঠনের দুই দিনের মাথায় পদত্যাগ পর্যন্ত করেছেন কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়া শফিকুল ইসলাম সেন্টু। সাদ এরশাদের আচরণে মহাসচিবের দায়িত্বে থাকা কাজী মামুনুর রশিদও বিরক্ত। আরও কয়েকজন নেতা পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হচ্ছেন না কেউ।

জানুয়ারির শেষ দিকে জি এম কাদেরকে অব্যাহতি দিয়ে নিজেকে জাপা চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন রওশন এরশাদ। গত ৯ মার্চ পার্টির অনুসারীদের নিয়ে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে কাউন্সিল করেন তিনি। কাউন্সিলে রওশন এরশাদ চেয়ারম্যান, কাজী ফিরোজ রশীদ নির্বাহী চেয়ারম্যান ও কাজী মামুনুর রশীদ মহাসচিব নির্বাচিত হন। সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয় সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাকে। আর কো-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন শাহিদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, সাদ এরশাদ, গোলাম সারওয়ার মিলন ও সুনীল শুভরায়।

জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদের অনুসারী নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাদ এরশাদের লক্ষ্য ভবিষ্যতে পার্টির নেতৃত্ব নিজ হাতে নিয়ে নেওয়া। সে কারণে পার্টির নির্বাহী চেয়ারম্যান হতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কাউন্সিলে তাকে কো-চেয়ারম্যান করে নির্বাহী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয় কাজী ফিরোজ রশীদকে। এ বিষয়টিই মেনে নিতে পারছেন না সাদ।

নেতাকর্মীরা বলেন, এর মধ্যেই এক অনুষ্ঠানে কাজী ফিরোজ রশীদকে প্রকাশ্যেই অপদস্থ করেন সাদ এরশাদ ও তার স্ত্রী। এ সময় কাজী ফিরোজ রশীদ তার কোনো জবাব দেননি, একদমই নিশ্চুপ ছিলেন। তবে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানান সেখানে উপস্থিত আরেক কো-চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম সেন্টু।

বিজ্ঞাপন

এদিকে সোমবার (১১ মার্চ) ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণ দেখিয়ে জাতীয় পার্টি থেকে পদত্যাগ করেছেন সেন্টু। মহাসচিব বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তিনি। তাতে ব্যক্তিগত কারণ দেখালেও নেতাকর্মীরা বলছেন, সাদ এরশাদের আচরণই পদত্যাগে প্ররোচিত করেছে সেন্টুকে।

সাদ এরশাদকে ঘিরে জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন অংশে এরকম অস্থিরতা দেখা দিলেও প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে রাজি হচ্ছেন না নেতাকর্মীরা। পার্টির মহাসচিব কাজী মামুনুর রশিদের মোবাইল নম্বরে কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। রওশন এরশাদ এবং সাদ এরশাদকে ফোন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। এসএমএস পাঠালেও তার জবাব দেননি তাদের কেউই।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের একাধিক নেতাকর্মী সারাবাংলাকে বলেন, সাদ এরশাদের দুর্ব্যবহারের বিষয়টি পার্টির মধ্যে প্রকাশ্য হয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে সিনিয়র নেতারা রওশন এরশাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। বৈঠকে পার্টির মহাসচিব কাজী মামুনুর রশিদকে যেকোনো উপায়েই হোক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে বলেছেন রওশন এরশাদ।

জাতীয় পার্টিতে এরকম অন্তর্কোন্দল নতুন কিছু নয়। রওশন এরশাদ এবং জি এম কাদেরের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব এমনকি এরশাদ জীবিত অবস্থাতেও প্রকট ছিল। এরশাদের মৃত্যুর পর ২০১৯ সালে বিরোধী দলের নেতার পদ পেয়ে জি এম কাদেরকে জাপা চেয়ারম্যান হিসেবে মেনে নেন রওশন। তবে তিন বছর পর সে সমঝোতা ভেঙে যায়।

জি এম কাদেরকে নেতৃত্ব থেকে সরাতে ২০২২ সালের আগস্টে কাউন্সিলের ডাক দেন রওশন এরশাদ। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে রওশনকে বিরোধী দলের নেতার পদ থেকে সরানোর চেষ্টা করেন জি এম কাদের। তবে সরকারের সমর্থনে নিজ পদে টিকে যান রওশন। পরে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সরকারের মধ্যস্থতায় সমঝোতা হয়— জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রওশন এরশাদ ও চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদের দায়িত্ব পালন করবেন। তবে সে সমঝোতাও ঠিকঠাক কাজ করেনি। রওশন ও কাদেরের মধ্যে দ্বন্দ্ব নানাভাবেই চলতে থাকে।

এদিকে দ্বাদশ নির্বাচনে মাত্র ১১টি আসন পেয়েছে জাপা। ভোটের পর পার্টিতে ফের অস্থিরতা শুরু হয়। আওয়ামী লীগের কাছ থেকে আসন ছাড় না পাওয়া এবং ছাড় পেয়েও হেরে যাওয়া জাপা নেতারা জি এম কাদেরের সমালোচনায় মুখর হন। এ পরিস্থিতিতে কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায় ও ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহহিয়া চৌধুরীকে অব্যাহতি দেন জি এম কাদের।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর জাতীয় পার্টির নেতারা এমনিতেই হতাশ ছিলেন। জি এম কাদের অব্যাহতি দেওয়ায় তারা শেষ পর্যন্ত রওশন এরশাদের পক্ষে যোগ দেন। রওশন এরশাদও কেন্দ্রীয় এসব নেতাদেরই কাছে টেনে নিয়ে কমিটি করেছেন।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

কাজী ফিরোজ রশীদ জাতীয় পার্টি জাপা রওশন এরশাদ শফিকুল ইসলাম সেন্টু সাদ এরশাদ

বিজ্ঞাপন

খুলনায় যুবকের পেটে মিলল ইয়াবা
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর