গাজায় অনাহারকে ইসরাইল যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে বলে দাবি করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল। অঞ্চলটিতে ত্রাণ সরবরাহের অভাবকে ‘মানবসৃষ্ট’ বিপর্যয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি। ইতোমধ্যে অনাহারে ২৭ জন মারা যাওয়ার কথা জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। খবর বিবিসি।
এর আগে গাজার অন্তত পাঁচ লাখ ৭৬ হাজার মানুষ দুর্ভিক্ষ থেকে এক ধাপ দূরে বলে সতর্ক করেছিল জাতিসংঘ। যা মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ। ঠিক তারপর এই মন্তব্য করলেন জোসেপ বোরেল।
গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত দুই সপ্তাহে হাসপাতালে অপুষ্টি ও পানিশূন্যতার কারণে অন্তত ২৭ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে অনেক শিশু। এছাড়া অন্তত দুই হাজার স্বাস্থ্যকর্মী খাদ্য সংকটের মুখোমুখি।
এদিকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বহনকারী একটি স্প্যানিশ জাহাজ গাজার উদ্দেশে সাইপ্রাস ত্যাগ করেছে। তবে জাতিসংঘ জানিয়েছে, তারা স্থলপথ ছাড়া ত্রাণ সহায়তা সরবরাহ করতে পারবে না।
এই অঞ্চলে সাহায্য পাওয়ার দ্রুততম, সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল রাস্তা। কিন্তু সাহায্য সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ইসরাইলি নিষেধাজ্ঞার কারণে যা প্রয়োজন তার একটি ভগ্নাংশ প্রবেশ করছে। তবে বিকল্প হিসেবে সমুদ্র ও আকাশ থেকে ফেলে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
ইসরাইল দাবি করেছে, গাজার খাদ্য সংকটের জন্য তারা দায়ী নয়। কারণ তারা দক্ষিণ গাজার দুটি ক্রসিং দিয়ে ত্রাণ সরবরাহের অনুমতি দিয়েছে।
তবে মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভাষণ দিতে গিয়ে জোসেপ বোরেল বলেন, কার্যকর স্থলপথের অভাবের কারণে এই অঞ্চলে মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখন এমন জনসংখ্যার মুখোমুখি হচ্ছি, যারা নিজেদের বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছেন। গাজায় এখন মানবিক সহায়তার প্রয়োজন। আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন এটি করার জন্য যতটা সম্ভব কাজ করছে।’
ইইউ পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান আরও বলেন, ‘অনাহারকে একটি যুদ্ধের অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যখন আমরা ইউক্রেনে এই ঘটনার নিন্দা করেছি, তখন গাজায় যা ঘটছে তার জন্য আমাদের একই শব্দ ব্যবহার করতে হবে।’
এদিকে গাজায় ইসরাইলের হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩১ হাজার ১৮৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে নারী ও শিশুদের সংখ্যাই বেশি। এছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত ৭২ হাজার ৮৮৯ জন।
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর হামাসের যোদ্ধারা আশ্চর্যজনকভাবে ইসরাইলে হামলা চালায়। এতে করে অন্তত ১ হাজার ২০০ ইসরাইলি নিহত হয়। এছাড়া ২৫৩ জনকে জিম্মি করে। এরপরই হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে গাজায় হামলা শুরু করে ইসরাইল। তবে এই হামলায় নিরীহ ফিলিস্তিনিরাই নিহত হচ্ছেন।