এআই দিয়ে তৈরি প্রথম ওষুধ দ্বিতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে
১৩ মার্চ ২০২৪ ১৮:১৯
ফুসফুসের মারাত্মক একটি রোগের ওষুধ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে। ওষুধটি বর্তমানে চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে রয়েছে। এআই-উৎপাদিত ওষুধ হিসেবে এটিই বিশ্বে প্রথম। হংকংভিত্তিক ওষুধ প্রস্ততকারক কোম্পানি ইনসিলিকো মেডিসিন ওষুধটি তৈরি করেছে।
ইনসিলিকো মেডিসিন বলেছে, তারা এআই ব্যবহার করে ওষুধ আবিষ্কারকে আরও দক্ষতাপূর্ণ ও সময়সাশ্রয়ী করে তুলেছে। এআই ব্যবহার করে ওষুধ তৈরিকে শিল্পে রূপান্তরিত করার জন্য জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তির প্রতিশ্রুতিশীল সম্ভাবনার প্রমাণ এটি।
ইনসিলিকো কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও অ্যালেক্স জাভোরনকভ বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জেনারেটিভ এআই ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। কিন্তু তিনি এক দশক ধরে বায়োমেডিকাল গবেষণার জন্য জেনারেটিভ এআইয়ের অ্যাপ্লিকেশনগুলো নিয়ে গবেষণা করছেন।
জাভোরনকভ জেনারেটিভ বায়োলজি, রসায়ন এবং বার্ধক্য ও দীর্ঘায়ু গবেষণায় একজন বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘এআই, রোবটিক্স ও বার্ধক্য সংক্রান্ত গবেষণার একীভূতকরণ আমাদের আলঝেইমারস ও পারকিনসন্সের মতো জটিল রোগের সম্পূর্ণ নিরাময় খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে। এসব রোগ থেকে সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ থাকতে মানুষকে সাহায্য করতে পারে এআই।’
২০১৪ সালে ইনসিলিকো মেডিসিন মানুষের বার্ধক্য বোঝার জন্য ডিপ নিউরাল নেটওয়ার্ককে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করে। মানুষের স্বাস্থ্য ও গতিবিধির তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের জন্য এআই ব্যবহার করে তারা।
জাভোরনকভ বলেন, ‘এআই বার্ধক্য বোঝার মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষকে বুঝতে পারবে। এটি তখন রোগের মৌলিক জীববিজ্ঞান বুঝতে শুরু পারবে। তখন আর রোগ শুধু সারাতে বা থামাতে নয়, রোগগুলো আর হবেই না।’
তিনি বলেন, ‘মানব জীববিজ্ঞান ও আপনার শরীরের হোমিওস্ট্যাসিস (শরীরের সিস্টেমের মধ্যে ভারসাম্যের অবস্থা) সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হ্রাস পায়। একটি রোগ হলে শরীরে সেটাই হয়। রোগগুলো এই প্রক্রিয়াটিকে ত্বরান্বিত করে, বা এই প্রক্রিয়ার কারণে হয়। তাই মানুষের বার্ধক্যের প্রাথমিক প্রক্রিয়া না বুঝে আপনি বেশিরভাগ রোগই বুঝতে পারবেন না।’
ইডিওপ্যাথিক পালমোনারি ফাইব্রোসিসের (আইপিএফ) ফলে ফুসফুসের টিস্যুতে দীর্ঘস্থায়ী দাগ পড়ে। এতে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এই রোগটি দ্বারা বিশ্বব্যাপী ৫০ লাখ মানুষ আক্রান্ত। ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের মাঝে এই রোগে দ্রুত মৃত্যুর হার বেশি। চিকিৎসা না করলে এই রোগে আক্রান্তরা দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারেন।
এই রোগের মূল কারণ এখনো জানা যায়নি। ফলে সরাসরি কোনো চিকিৎসাও জানা নেই। তবে কিছু চিকিৎসা উপসর্গগুলো কমাতে এবং এর অগ্রগতি ধীর করতে সাহায্য করতে পারে। স্টেরয়েড গ্রহণকারী অনেক রোগী ফুসফুসের কার্যকারিতা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পায় এবং শ্বাসকষ্টের শিকার হন।
নতুন গবেষণায়, বিজ্ঞানীরা একটি অ্যান্টি-ফাইব্রোটিক টার্গেট এবং এর ইনহিবিটার খুঁজে পেতে জেনারেটিভ এআই ব্যবহার করেছেন। এতে একটি ওষুধ তৈরিতে সাধারণত যে সময় লাগে তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। সাধারণত এ ধরনের ওষুধ তৈরিতে এক দশকের বেশি সময় লেগে যায়।
ওষুধটির গবেষকরা পিয়ার-রিভিউ জার্নাল ন্যাচার বায়োটেকনোলজিতে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলেন, ‘জেনারেটিভ এআই ব্যবহার করে ওষুধ তৈরিতে টার্গেট ডিসকভারি (ওষুধ তৈরির প্রথম ধাপ) থেকে প্রাক-ক্লিনিক্যাল ক্যান্ডিডেট পর্যন্ত আসতে প্রায় ১৮ মাস সময় লেগেছে।’
গবেষকরা প্রথমে ফাইব্রোসিস সম্পর্কে ডেটা এবং বিভিন্ন প্রকাশনা ব্যবহার করে ইনসিলিকোর এআই প্ল্যাটফর্মে টার্গেট ডিসকভারি ইঞ্জিনকে প্রশিক্ষণ দেন। উল্লেখ্য, ফাইব্রোসিসের কারণে টিস্যু ঘন হয়ে যায় বা দাগ পড়ে যা অঙ্গের স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস করে। ফাইব্রোসিস বার্ধক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। ফাইব্রোসিসের কারণে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ তৈরি হয়।
একটি ভবিষ্যদ্বাণীমূলক এআই পদ্ধতির সাহায্যে, টিএনআইকে (টিনিক) নামের একটি প্রোটিন শীর্ষ অ্যান্টি-ফাইব্রোটিক লক্ষ্য হিসেবে আবির্ভূত হয়। গবেষণা দলটি তখন সর্বোত্তম ইনহিবিটার খুঁজে বের করতে একটি জেনারেটিভ কেমিস্ট্রি ইঞ্জিন ব্যবহার করে প্রায় ৮০টি ছোট-মলিকিউল ক্যান্ডিডেট তৈরি করে। এই ইনহিবিটার আইএনএস০১৮_০৫৫ নামে পরিচিত। ইনহিবিটর বিভিন্ন অঙ্গে উপযুক্ত ওষুধের মতো বৈশিষ্ট্য এবং অ্যান্টি-ফাইব্রোটিক কার্যকলাপ দেখিয়েছে।
গবেষকদল বলেছে, গবেষণাটি প্রমাণ করেছে, জেনারেটিভ এআই প্ল্যাটফর্মগুলো শক্তিশালী অ্যান্টি-ফাইব্রোটিক কার্যকলাপের সঙ্গে নির্দিষ্ট ওষুধ তৈরির জন্য সময়সাশ্রয়ী সমাধান দিচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, এই গবেষণা ওষুধ তৈরিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সক্ষমতা তুলে ধরবে এবং তা ওষুধ আবিষ্কারে বিপ্লব আনবে।
সারাবাংলা/আইই
ইনসিলিকো মেডিসিন এআই এআই-উৎপাদিত ওষুধ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ফুসফুসের রোগ