উপকূল এখনো ১৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে, যোগাযোগের অপেক্ষায় মালিকপক্ষ
১৩ মার্চ ২০২৪ ২১:৪৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজটি এখনো সোমালিয়া উপকূল থেকে ১৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে আছে। জাহাজ জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে নিয়ে যাওয়ার পর যোগাযোগ স্থাপন হবে বলে আশা করছে এর মালিকপক্ষ।
জলদস্যুদের কবলে পড়ার পর সোমালিয়ার পথে থাকা এমভি আবদুল্লাহ নামে জাহাজটির সর্বশেষ অবস্থান বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএমওএ) বুধবার (১৩ মার্চ) রাতে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে।
বিএমএমওএর সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত হোসেন সারাবাংলাকে জানান, গ্রিনিচ সময় ১২টা ৪০ মিনিটে অর্থাৎ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে জাহাজটি ভারত মহাসাগরে সোমালিয়া উপকূল থেকে ১৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছিল। সর্বশেষ পাঁচ ঘণ্টায় জাহাজটির গতি বেড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, জোয়ারের কারণে গতি বাড়ানো হয়েছে।
আরও পড়ুন-
- ‘কী হবে কিছুই তো জানি না, দোয়া করো’
- জিম্মি জাহাজে ৫৫ হাজার টন কয়লায় ‘অগ্নিঝুঁকি’
- উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় জিম্মি জাহাজের নাবিকদের স্বজনেরা
- ‘মুক্তিপণ না দিলে একে একে সবাইকে মেরে ফেলা হবে’
- ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে বাংলাদেশি জাহাজ
- ছেলেকে সুস্থ ফিরিয়ে দিন— জিম্মি নাবিকের মায়ের আর্তি
- নাজমুলকে ফিরে পেতে মায়ের আকুতি, বাবা হাসপাতালে
- জিম্মি জাহাজ সোমালিয়া থেকে এখনো ২৭৫ নটিক্যাল মাইল দূরে
এ গতিতে যাত্রা অব্যাহত রাখলে জাহাজটি বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে সোমালিয়া উপকূলে পৌঁছবে এবং নোঙর করতে সক্ষম হবে বলে জানান শাখাওয়াত হোসেন। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় এ বিষয়ে পরবর্তী তথ্য দেওয়ার কথা জানান বিএমএমওএর এ কর্মকর্তা।
এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম) গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন।
বুধবার দিনভর বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা করেও জাহাজটিতে জিম্মি অবস্থায় থাকা নাবিকদের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন কেএসআরএম গ্রুপের মুখপাত্র মিজানুল ইসলাম। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘সর্বশেষ যে তথ্য আমাদের কাছে আছে, তাতে নাবিকরা সবাই সুস্থ ও অক্ষত আছেন বলে আমরা জানি। এরপর আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সম্ভব হয়নি। জলদস্যুদের পক্ষ থেকেও আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি।’
‘আমাদের ধারণা, জাহাজটি সেফ জোনে নেওয়ার পরই জলদস্যুরা যোগাযোগ করবে। অতীতেও আমাদের জাহাজ জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। আমরা সেই জাহাজটি ১০০ দিনের মধ্যে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলাম। জাহাজে থাকা ২৬ জন সুস্থ ও অক্ষত ছিলেন। এখনো আমাদের প্রথম কাজ আগের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নাবিকদের অক্ষতভাবে ফেরত আনা,’— বলেন কেএসআরএম গ্রুপের মুখপাত্র।
জাহাজ সোমালিয়া উপকূলে পৌঁছানোর পর জলদস্যু বা নাবিকদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন হলে এ বিষয়ে অগ্রগতি হবে বলে আশা করছেন মিজানুল ইসলাম।
এর আগে মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টার দিকে ২৩ নাবিকসহ বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজটি সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। জলদস্যুরা জাহাজের নাবিকদের জিম্মি করে ফেলে।
মঙ্গলবার বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে জাহাজের নাবিকরা তাদের স্বজন ও মালিকপক্ষের কাছে অডিওবার্তা পাঠানোর সুযোগ পান। এসব বার্তায় নাবিকরা জানান, জিম্মি করা হলেও তাদের কোনো ধরনের নির্যাতন করা হচ্ছে না। এক নাবিকের স্বজন বলেছেন, টাকা না দিলে জলদস্যুরা একে একে নাবিকদের সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে।
জাহাজে থাকা নাবিকেরা হলেন— জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্ম শ্মসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুর উদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।
বিএমএমওএ জানিয়েছে, জিম্মি নাবিকদের মধ্যে ১১ জন চট্টগ্রামের ও দুজন নোয়াখালীর। বাকি ১০ জন ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, নওগাঁ, খুলনা, নেত্রকোনা, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও বরিশাল জেলার।
সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের আল-হামরিয়া বন্দরে যাচ্ছিল। ১৯ মার্চ গ্রিনিচ সময় রাত ৮টায় জাহাজটির সেই গন্তব্যে পৌঁছানোর কথা ছিল।
এদিকে ঢাকায় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছেন, ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজের নাবিকদের সুস্থ ও নিরাপদভাবে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সরকার বদ্ধপরিকর। যেকোনো মূল্যে তাদের ফিরিয়ে আনা হবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশনা দিয়েছেন। অন্যান্য জায়গায় তিনি কথা বলেছেন। নাবিকদের নিরাপদে ফেরত আনতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, জাহাজ ও নাবিকদের জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত করতে সেকেন্ড পার্টির মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর
এমভি আবদুল্লাহ জলদস্যু জলদস্যুর কবলে জাহাজ জাহাজ জিম্মি জিম্মি সোমালিয়া উপকূল