‘পাটের নতুন পণ্য আবিষ্কার করে বাজার খুঁজতে হবে’
১৪ মার্চ ২০২৪ ১৪:০৫
ঢাকা: পাটের নতুন নতুন পণ্য আবিষ্কার করে নতুন বাজার খুঁজে বের করার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রফতানিজাত বা কৃষি পণ্য হিসেবে পাটের প্রণোদনা পাওয়ার ব্যাপারে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ নেওয়া কথাও জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) জাতীয় পাট দিবস-২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত বহুমুখী পাটপণ্য প্রদর্শনী ও মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এবার জাতীয় পাট দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে— ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার দেশ, স্মার্ট পাটশিল্পের বাংলাদেশ’।
অনুষ্ঠানে ইজারার জন্য নির্ধারিত বিজেএমসির ৬টি মিলের বাণিজ্যিক উৎপাদন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে তিন দিনব্যাপী বহুমুখী পাটপণ্য প্রদর্শনী ও মেলা পরিদর্শন করেন তিনি।
দেশের পাটকল ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা পাটকলগুলোকে ভাড়া ভিত্তিতে লিজ দিয়ে পুনরায় চালু করার ব্যবস্থা করি। যার ফলে আমাদের অনেক পুরনো শ্রমিকও কাজ পেয়ে গেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় খবর রাখি ইন্ডাস্ট্রি কে নিলেন, কতটুকু চালালেন, কি করল? সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হয়। পুরনো মিলগুলো যারা চালাচ্ছেন চালাতে পারেন, কিন্তু এটার উপর নির্ভরশীল হয়ে বসে থাকলে হবে না। এখানে যে আলাদা জায়গা আছে, সেখানে আরও নতুন নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয় করতে হবে। পাটজাত পণ্যকে বহুমুখী করা এবং সেই পণ্যগুলো রফতানি করা। আমাদের দেশের ব্যবহারের জন্য কি কি পণ্য উৎপাদন করা যায় সে দিকে যত্নবান হতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ পর্যন্ত যারা পাটকলগুলো লিজ নিয়েছেন। তাদের অনেকেই বলেছেন বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসবেন, যৌথভাবে চালাবেন এবং উৎপাদন ও রফতানি বাড়বেন। তাই অনুরোধ, আপনারা যার যার ইন্ডাস্ট্রির প্রতি যত্নবান হবেন এবং যথাযথভাবে পরিচালনা করবেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পাটের নতুন নতুন পণ্য আবিষ্কার করে নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে। পাশাপাশি রফতানি বাড়ানোর দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। কারণ পরিবেশ বান্ধব এই পণ্যের বিশাল বাজার অপেক্ষা করছে।’
সরকারপ্রধান আরও বলেন, ‘আমাদের অনেক পণ্য রফতানিতে প্রণোদোনা দেই। দুর্ভাগ্যের বিষয় পাট কৃষিপণ্য হিসেবে সে সুযোগ পায় না। আবার রফতানিযোগ্য পণ্য হিসেবে যে সুযোগ পাওয়ার কথা সেটাও তেমন পাচ্ছে না। এবারে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, রফতানিজাত পণ্য বা কৃষি পণ্য হিসেবে পাটের যে প্রণোদনা পাওয়া উচিত, সে প্রণোদনার ব্যবস্থা করব। এ ব্যাপারে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাট ও পাটজাত পণ্য যত বেশি উৎপাদন করতে পারব তা যেমন দেশের কাজের লাগবে, তেমনি রফতানির ক্ষেত্রেও বিরাট সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে। পাট পণ্য রফতানি ক্ষেত্রে কোনো দেশে কি ধরনের চাহিদা আছে তা দেখা এবং সে ধরনের পণ্য উৎপাদনে দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।’
এই সোনালী আঁশ বাংলাদেশের জন্য সোনালী দিনের হাতছানি দিচ্ছে বলে মনে করেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘পাটের শাড়ি ছাড়া একসময় বিয়েই হতো না দেশে। এখন তো সেসব হারিয়ে গেছে। আমি নিজেও এখন যে শাড়িটা পরে আছি, সেটিও পাটের তৈরি। পাটের তৈরি পণ্যের প্রচার প্রয়োজন। বর্তমানে মার্সিডিজ বেঞ্জ, বিএমডব্লিউয়ের মতো গাড়ির ইন্টেরিয়র লাইনার বানানো হয় পাট থেকে। পাট এক সময় রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হতো। আমাদের দেশে সবচেয়ে উন্নত মানের পাট চায়। যা সোনালি আঁশ নামে পরিচিত। অর্থনীতি বিরাট অবদান রাখতে পারে এটি।’
অনুষ্ঠানে পাটখাতে বিশেষ অবদানের জন্য ১১ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক। আর পাটকল ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পাটকল সমিতির চেয়ারম্যান আবুল হোসেন।
সারাবাংলা/এনআর/এনএস