Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দেশে ১০ লাখ ৭০ হাজার শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত: বিবিএস

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৪ মার্চ ২০২৪ ১৭:৩৬

ঢাকা: দেশে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রয়েছে ১০ লাখ ৭০ হাজার শিশু। এর মধ্যে শহরে রয়েছে দুই লাখ ৫০ হাজার এবং পল্লী এলাকায় আট লাখ ২০ হাজার। তবে দেশে সার্বিকভাবে ৩৫ লাখ ৪০ হাজার শ্রম দেওয়ার মতো শিশু রয়েছে। এর মধ্যে শ্রমের বাইরে আছে ১৭ লাখ ৬০ হাজার এবং শ্রমের মধ্যে আছে ১৭ লাখ ৮০ হাজার শিশু।

বাংলাদেশ পরিসংখান ব‍্যুরোর (বিবিএস) জাতীয় শিশু শ্রম জরিপ-২০২২ এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া খাতভিত্তিক শিশু শ্রম জরিপ-২৯২৩ এর হিসাব অনুযায়ী দেখা যায়, পাঁচ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে পাঁচটি খাতে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে ৩৮ হাজার আটজন শ্রমজীবী শিশু। এসব শিশু ৪০ হাজার ৫২৫টি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস- এর অডিটোরিয়ামে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা।

বিবিএস’র মহাপরিচালক মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন, বৃটিশ হাইকমিশনের ডেপুটি হাই কমিশনার ম্যাট ক্যানেল এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কান্ট্রি ডিরেক্টর তমো পুটিয়ানিন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন খান এবং প্রশ্ন উত্তর পর্ব পরিচালনা করেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. দীপঙ্কর রায়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন,বিবিএসের পক্ষ থেকে আমরা শুধু তথ্য তুলে ধরছি। আমরা মাঠ থেকে সত্য তথ্য তুলে এনে তা প্রকাশ করছি। সরকার শিশু শ্রম নিরসনে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। আশা করা হচ্ছে ২০২৫ সালের মধ্যে দেশ থেকে শিশু শ্রম নিরসন করা সম্ভব হবে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, বিবিএস সত্য তথ্য দেয়। এর উপর ভিত্তি করে সরকার পরিকল্পনা প্রণয়ন ও মূল্যায়ন করবে। আমাদেও কাজ হলো মাঠ থেকে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য তুলে নিয়ে আসা। শিশুরা আমাদের ভবিষ্যত। তাই এটি খুব স্পর্শকাতর বিষয়। কিন্তু সব কিছু করতে গেহলে একটা প্রক্রিয়া দরকার। আমরা আশা করব এখন দ্রুত কর্মতৎপরতা চালিয়ে নিয়ে দেশ থেকে শিশু শ্রম নিরসন সম্ভব হবে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রতিবেদনে জাতীয় গণনার সঙ্গে শ্রমজীবী শিশু, শিশুশ্রম এবং ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ ২০২২ অনুসারে পাঁচ থেকে ১৭ বছর বয়সী তিন দশমিক ৫৪ মিলিয়ন শ্রমজীবী শিশু রয়েছে, যার মধ্যে এক দশমিক ৭৬ মিলিয়ন শিশু শ্রমের বাহিরে এবং এক দশমিক ৭৮ মিলিয়ন শিশুশ্রমে রয়েছে, এরমধ্যে এক দশমিক শূন্য সাত মিলিয়ন ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম রয়েছে।

পল্লী এলাকায় দুই দশমিক ৭৩ মিলিয়ন শ্রমজীবী শিশু রয়েছে এবং শহরাঞ্চলে রয়েছে শূন্য দশমিক ৮১ মিলিয়ন, শিশুশ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা পল্লী এলাকায় এক দশমিক ৩৩ মিলিয়ন এবং শহরাঞ্চলে শূন্য দশমিক ৪৪ মিলিয়ন।

অন্যদিকে, ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা পল্লি এলাকায় শূন্য দশমিক ৮২ মিলিয়ন এবং শহরাঞ্চলে শূণ্য দশমিক ২৪ মিলিয়ন রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে পাঁচ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের জনসংখ্যার পরিসংখ্যান বিষয়ক তথ্য রয়েছে। এই বয়সের মোট শিশু জনসংখ্যা ৩৯ দশমিক ৯৬ মিলিয়ন। যেখানে পাঁচ থেকে ১১ বছর বয়সী ৫৫ দশমিক ২ শতাংশ। দেশে ২৭ দশমিক ৬৩ মিলিয়ন খানায় (পরিবারে) পাঁচ থেকে ১৭ বছর শ্রমজীবী শিশু রয়েছে এবং স্কুলে উপস্থিতির হার বর্তমানে ৩৪ দশমিক ৮১ শতাংশ।

জরিপ থেকে প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যায়, শিশু শ্রমিকের ৮২ শতাংশ তাদের নিজস্ব বাড়িতে বসবাস করে, উৎপাদনে ৩৩ দশমিক তিন শতাংশ এবং কৃষি, বনায়ন এবং মাছ ধরায় ২৩ দশমিক ছয় শতাংশ নিযুক্ত রয়েছে। সামগ্রিকভাবে শিশু শ্রমিক কর্মচারী হিসেবে শ্রেণিভুক্ত ৬৮ দশমিক আট শতাংশ এবং স্কুলে যায় ৫২ দশমিক দুই শতাংশ। শিশু শ্রমিকের গড় মাসিক আয় ছয় হাজার ৬৭৫ টাকা।

এছাড়াও দুই দশমিক শূন্য এক মিলিয়ন শিশু গৃহকর্মী রয়েছে যাদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয় না এবং শূন্য দশমিক শূন্য ৮ মিলিয়ন যারা পারিশ্রমিক প্রাপ্ত। উভয় ক্ষেত্রেই পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি। তিনটি প্রাথমিক সেক্টর যেখানে কৃষি, শিল্প এবং পরিষেবা এক দশমিক শূন্য সাত মিলিয়ন, যথাক্রমে এক দশমিক ১৯ মিলিয়ন এবং এক দশমিক ২৭ মিলিয়ন শিশু শ্রমিক নিয়োগ করে।

এই জরিপের মাধ্যমে দেশের পাঁচ থেকে ১৭ বছর বয়সি শ্রমজীবী শিশু যারা বর্তমানে উল্লিখিত পাঁচটি ঝুঁকিপূর্ণ সেক্টরে কর্মে নিয়োজিত রয়েছে তাদের সঠিক জাতীয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। জরিপের তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম গত বছরের ৩ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত পরিচালিত হয়।

জরিপের মাধ্যমে নির্বাচিত পাঁটটি সেক্টরের প্রকৃতি ও সাধারণ বৈশিষ্ট শ্রমজীবী শিশুদের খানার বৈশিষ্ট্য, আর্থ-সামাজিক এবং কর্মসংস্থানের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। জরিপটি সেক্টর ভিত্তিক ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুশ্রম সংশ্লিষ্ট উপাত্ত তৈরি করেছে। জরিপের প্রাক্কলিত ফলাফল পাওয়া যায় পাঁচ থেকে ১৭ বছর বয়সী মোট ৩৮ হাজার আটজন শ্রমজীবী শিশু উল্লিখিত সেক্টর গুলোর অন্তর্গত ৪০ হাজার ৫২৫টি প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত রয়েছে।

এই ঝুঁকিপূর্ণ সেক্টর গুলোতে কর্মরত সকল শ্রমজীবী শিশুদের মধ্যে ৯৭ দশমিক ছয় শতাংশ ছেলে এবং দুই দশমিক ৪ শতাংশ মেয়ে। পাচটি সেক্টরের মোট শ্রমজীবির শিশুদের মধ্যে শুটকি মাছ উৎপাদনে রয়েছে ৮৯৮ জন, চামড়াজাত পাদুকা শিল্পে রয়েছে পাঁচ হাজার ২৮১ জন, ওয়েল্ডিং কাজ বা গ্যাস বার্নার মেকানিকের কাজে চার হাজার ৯৯ জন, অটোমোবাইল ওয়ার্কশপে রয়েছে ২৪ হাজার ৯২৩ জন, অনানুষ্ঠানিক স্থানীয় টেইলারিং এবং পোশাক খাতে দুই হাজার ৮০৫ জন শ্রমজীবী শিশু রয়েছে। শ্রমজীবী শিশুদের মধ্যে অটোমোবাইল ওয়ার্কশপে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিশু নিযুক্ত রয়েছে।

অঞ্চলভিত্তিক বিভাজনে পাওয়া যায়, ঝুকিপূর্ণ সেক্টরে কর্মরত শ্রমজীবী শিশুদের মধ্যে পল্লিতে বাস করে ৩৫ দশমিক সাত শতাংশ,অপরদিকে শহরে বাস করে ৬৪ দশমিক ৩ শতাংশ। ফলে এই সেক্টর গুলোর বেশির ভাগ শ্রমজীবী শিশুরাই শহরে কাজ করে তা এ জরিপের মাধ্যমে উঠে এসেছে।

ঝুঁকিপূর্ণ কাজ যেমন-ভারী বোঝা বহন করার কাজে ছেলে শ্রমজীবী শিশু কিছুটা বেশি পাওয়া যায় যা ১৯ দশমিক এক শতাংশ। কিছু শিশু আগুন, গরম যন্ত্রপাতি বিপজ্জনক বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এবং সংস্পর্শে আসে যা ২০ দশমিক দুই শতাংশ, ধুলো-বালি, ধোয়া বা ধোঁয়ার কারণে শ্বাস প্রশ্বাস বাধাপ্রাপ্ত হয় এমন কাজে কর্মরত রয়েছে ৩১ দশমিক এক শতাংশ শ্রমজীবী শিশু। বিরতি ছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে রোদে কাজ করে ১৪ দশমিক আট শতাংশ এবং অল্প সংখ্যক শ্রমজীবী শিশু কীটনাশক এবং অন্যান্য রাসায়নিকের সংস্পর্শে এসে কাজ করছে। এই পাচটি সেক্টরে গড়ে শিশুরা প্রতিদিন নয় দশমিক চার ঘণ্টা কাজ করে।

সারাবাংলা/জেজে/এনইউ

টপ নিউজ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

চট্টগ্রামে খালে ভাসছিল অর্ধগলিত লাশ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:৩৩

বিএসইসি‘র চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:৫১

সম্পর্কিত খবর