বিদ্যুৎ বিভ্রাটে অতিষ্ঠ নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা
২০ মার্চ ২০২৪ ০৮:৩২
নোবিপ্রবি: ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) আবাসিক শিক্ষার্থীরা। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে পড়ালেখা করতে পারছেন না। ঘুমে সমস্যা, পানি সংকটসহ নানান সমস্যায় অতিষ্ঠ হয়ে দিন পার করছেন বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে ২৪ ঘণ্টা জেনারেটর সুবিধা দাবি করেছেন তারা।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের দুটি ও মেয়েদের তিনটি হলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিত্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বন্ধের দিনে এ ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করে। রমজান মাসে প্রায় সবগুলো বিভাগে ক্লাস ও কিছু কিছু বিভাগে সেমিস্টার চলায় এই দুর্ভোগের মাত্রা আরও বেড়েছে। শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছেন। হলগুলো ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনগুলোতেও একই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ফলে একাডেমিক কার্যক্রমেও প্রভাব পড়ছে।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপিডি দফতর সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল অর্ডারের একটি নির্দিষ্ট সময় জুড়ে জেনারেটর সুবিধা চালু রাখা হয়। অফিসিয়াল অর্ডারের চেয়ে বেশি সময় জেনারেটর চালু রাখতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে এবং অনুমতি পেলে পরবর্তীতে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন তারা।
বঙ্গবন্ধু হলের এক আবাসিক ছাত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পরীক্ষা দিয়ে এসে দেখি বিদ্যুৎ নেই। রুমমেটের কাছ থেকে শুনলাম বিদ্যুৎ গেছে আরও ঘণ্টা খানেক আগে। গরমের মধ্যে বিদ্যুৎ না থাকলে রুমে থাকা খুবই কষ্টকর। শরীর দিয়ে ঘাম ঝরতে থাকে পড়াশোনা করবো কী। তারমধ্যে আবার বিদ্যুৎ না থাকলে পানিও থাকে না। সন্ধ্যার সময় বিদ্যুৎ আসলেও অল্প কিছুক্ষণ পর আবার চলে যায়। ল্যাপটপটা যে চার্জ দেব সেই সুযোগও পায় না কারণ বিদ্যুতের আসা যাওয়া চলতেই থাকে। সব মিলিয়ে খুব অস্বস্তির মধ্যে আছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক স্পিকার আবদুল মালেক উকিল হলের একজন আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, গতবছর পরীক্ষার সময় আমরা পড়াশোনা করেছি তখন লোডশেডিং ছিল না যেটা এই বছর দেখা যাচ্ছে। পাঁচ মিনিট পরপর বিদ্যুৎ আসে আর যায়, যার কারণে আমরা পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারছি না। পরীক্ষা থাকায় উপায় না পেয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে আমাদের পড়তে হচ্ছে যা একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের জন্য দুঃখজনক।
বঙ্গমাতা হলের এক আবাসিক ছাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিদ্যুৎ না থাকলে অসহ্য গরম লাগে। পানি পানি সংকট দেখা দেয়। এছাড়া ও ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলোতে চার্জ থাকে না, ফলে রমজানের মধ্যে অনলাইনে ক্লাস করতে অসুবিধা হয়। ওয়াইফাই সুবিধাও থাকে না।
বিদ্যুৎ না থাকায় পানি সংকট চরমে উঠেছে জানিয়ে বিবি খাদিজা হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, ঘন ঘন বিদ্যুত বিভ্রাটের কারণে পানি পাওয়াই যায় না। খাদিজা হলের পানির লাইনগুলো এমনভাবে করা যে পানি আগে সামনের ব্লকে যায় এরপর পেছনের ব্লকে আসে। দেখা যায় সকালে ক্লাসে যাওয়ার সময় পানি নাই আবার দুপুরে এসেও দেখি পানি নাই। মাঝে যেই সময় হঠাৎ অল্প একটু আসে তখন যারা থাকে তারা পায় বা অনেক সময় দেখা যায় জানেও না। গতবছর পুরো গ্রীষ্মকাল এইভাবেই গেছে। সব হলে পানি থাকলেও খাদিজা হলের পেছনের ব্লকে দেখা যায় পানি নাই।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ জামাল হোসাইন বলেন, বিদ্যুৎ তো সরকারের হাতে, তারা কতক্ষণ দিবে না দিবে এটার ওপর আমাদের হাত নেই। বিদ্যুৎ সরকারের হাতে থাকলেও জেনারেটর সুবিধাতো বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে। তবে কেন এ সুবিধা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময় দেওয়া হচ্ছে না।
এ প্রশ্নের জবাবে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, আমাদের অফিসিয়াল একটা অর্ডার আছে কয়টা থেকে কয়টা জেনারেটর চালু রাখবো বা কতক্ষণ চালু থাকবে। তাছাড়া এর চেয়ে বেশি সময় জেনারেটর চালু রাখতে হলে অর্থের ব্যাপার আছে। ভিসি স্যার বা ট্রেজারার স্যার হচ্ছেন এটার অথোরিটি। উনারা যদি অনুমতি দেয় অতিরিক্ত সময় চালানোর তাহলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. দিদার-উল-আলম বলেন, আমরা অফ ডে’তে হল এবং আবাসিক এলাকায় দিনের বেলায় জেনারেটরের ব্যবস্থা করছি। দিনের বেলায় জেনারেটর থাকবে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট দফতরকে বলে দেওয়া হয়েছে।
সারাবাংলা/এনইউ