কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি: রাফি-পিয়াসকে নিয়ে বিতর্ক
২১ মার্চ ২০২৪ ১৭:৩৫
কুমিল্লা: দীর্ঘ নয় বছর পর কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সোমবার (১৮ মার্চ) আগামী এক বছরের জন্য সভাপতি মিনহাদুল হাসান রাফি ও ইসরাফিল পিয়াস সাধারণ সম্পাদক করে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ।
নতুন কমিটি ঘোষণার পর পর নতুন দুই মুখ রাফি ও পিয়াসসহ একাধিক নেতাদের নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কর্মী-সমর্থকদের মাঝে। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের মদতে কমিটিতে একাধিক বিবাহিতসহ চাঁদাবাজি, মাদক সেবন, বিবাহিত, ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার লোকজনই নতুন কমিটিতে স্থান পেয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সাবেক দক্ষিণ জেলার অর্ধশতাধিক ছাত্রলীগ নেতা জানান, দীর্ঘদিন ধরে যারা ত্যাগী নেতা-কর্মী তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক দুজনই বুড়িচং উপজেলার। এতে বাকি ৯ উপজেলার নেতা-কর্মীদের পদ বঞ্চিত করা হয়েছে। চাঁদাবাজি, মাদক সেবন, বিবাহিতরা স্থান পেয়েছে নতুন কমিটিতে। এতে ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। এ ছাড়া কমিটিতে আরও কয়েকজনের জেলা কমিটিতে সদস্যপদও ছিল না। তারা পদ পেয়েছেন। এ কমিটিকে পকেট কমিটি উল্লেখ করে তারা বলেন, আমরা এই অবৈধ কমিটি চাই না।
খুঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন কমিটিতে সভাপতি হিসেবে স্থান পাওয়া মিনহাদুল হাসান ওরফে রাফি বিবাহিত। যার বিয়ের প্রমাণপত্র স্বরূপ কাবিননামা ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভাইরাল হাওয়া রাফির সেই কাবিননামায় সাক্ষী হিসেবে রয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের ভাতিজা ও লালমাই উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুল হাসান শাহীনের স্বাক্ষর।
অভিযোগের বিষয় জানতে সদ্য ঘোষিত কমিটির সভাপতি মিনহাদ রাফিকে একাধিক কল দিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইসরাফিল পিয়াসের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক অভিযোগ। দুই বছর আগে বুড়িচং উপজেলার নিমসার বাজারের ইজারাদার আবদুল্লাহ আল মামুন কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেওয়ায় পিয়াস ইজারদার আবদুল্লাহ আল মামুনসহ তার কর্মীদের সন্ত্রাসী হামলা চালান।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নিমসার বাজারের সাবেক ইজারাদার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমি এ বিষয় থানায় মামলা করেছি। পিয়াস প্রভাবশালী হওয়ায় আর বিচার পেলাম না।
অভিযোগের বিষয় সদ্য ঘোষিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইসরাফিল পিয়াসের পিতা বুড়িচংয়ের মোকাম ইউনিয়নের যুবলীগের সভাপতি মো মাসুদ বলেন, আমরা ছেলে বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে। রাজনীতি করতে গেলে এমন মামলা থাকতে পারে। যে মামলা করেছে সেই মাদক মামলার পলাতক আসামি।
এদিকে কমিটি ঘোষণার পর পরই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানকে হত্যার হুমকি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন নবগঠিত কমিটির দ্বিতীয় সহ-সভাপতি আবু মূছা খান। মো. আবু মূছা খান তার ফেসবুক ওয়ালে লেখেন, ‘প্রথমে শেখ ইনানকে (শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক) মারবো, পরে নিজে মরবো।’
আবু মূছার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইনান টাকা খেয়ে কমিটি দিয়েছেন। একই উপজেলায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক,এটা কিভাবে সম্ভব? জীবনভর আমরা রাজপথে ছিলাম অথচ তিনি কমিটির নেতৃত্ব দিলেন বিবাহিত আর মাদক ব্যবসায়ীকে।
এ সময় এই ছাত্রলীগের এই নেতা কেঁদে ওঠে বলেন, জীবনটা শেষ করে দিয়েছে আমার। ছোট ভাইকে বিয়ে করালাম, নিজে করিনি। অথচ সভাপতি দিলো একটা বিবাহিত লোককে। আর সাধারণ সম্পাদক দিয়েছে মাদকসহ পাঁচ মামলার আসামিকে।
দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের আগের কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নতুন কমিটিতে চতুর্থ সহ-সভাপতি এম রুবেল হোসেন বলেন, যে কমিটিতে কর্মীকে সম্মানিত করে নেতাকে অসম্মানিত করা হয়, সেটি কোন ধরনের শিষ্টাচার? বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে ধিক্কার জানাই। এমন কমিটির সঙ্গে আমাদের বা আমার কোনো সম্পর্ক নেই। সদ্য সাবেক কমিটিতে আমার অনেক কর্মী জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিল, আমার অনেক কর্মী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্পাদক, উপ-সম্পাদক, সদস্য পদে দায়িত্ব পালন করেন- আর আমাকে আপনারা অসম্মানিত করলেন? এটা কোন ধরনের অপরাজনীতি? মাননীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সাহেব, এটা কী জেলা ছাত্রলীগের কমিটি করলেন নাকি বুড়িচং উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি দিলেন?
অভিযোগের বিষয় কথা বলতে সদ্য ঘোষিত কমিটির সভাপতি মিনহাদুল ইসলাম রাফিকে একাধিক কল ও মেসেজ দিলেও তিনি সাড়া দেননি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু ইউনূস বলেন, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র ভেঙ্গে কাউকে পদ দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বড় একটি সংগঠন তাই এখানে সবাইকে পদ দেওয়া সম্ভব নয়।
গঠনতন্ত্র ভেঙ্গে কমিটির দেওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগগুলোর বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেউ হয়তো পদবঞ্চিত হয়ে নানা কথা বলতে পারে। আমরা গঠনতন্ত্রের বাইরে কাউকে কমিটিতে স্থান দেইনি। যদি উপযুক্ত প্রমাণ দিতে পারে তাহলে বিষয়টি বিবেচনা নেওয়া হবে। যারা পদ প্রত্যাশী ছিল সবাই কুমিল্লার ত্যাগী ছাত্রলীগ কর্মী এটি অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে সবাইকে তো আর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা যাবে না ।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২৩ জুলাই এক বছরের জন্য কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি দেয় বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।পরে ২০২২ সালে ১৩ মে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা শাখা কর্তৃক মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা শাখা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে। গত বছর সর্বশেষ গত ২৯ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতাদের উপস্থিততে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে সেখানে প্রার্থিতা করেন মোট ৪৩ জন।
সারাবাংলা/আইই