যেভাবে দুদকের নজরে ইবি— জমা একের পর এক অভিযোগ
২৩ মার্চ ২০২৪ ১২:৫২
ইবি: শুরুটা ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগে নিয়োগ বোর্ডকে কেন্দ্র করে। বিভাগটির প্রভাষক নিয়োগ নির্বাচনি বোর্ডের সাক্ষাৎকার শেষে প্রার্থী চূড়ান্ত করার সময় অন্য সদস্যদের সঙ্গে বিভাগের সভাপতি ড. বখতিয়ারের মতবিরোধ দেখা দেয়। এসময় চূড়ান্ত স্বাক্ষর না করেই বোর্ড থেকে বের হয়ে যান তিনি।
এদিকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে নিয়োগ বাণিজ্য ও দুর্নীতি সংক্রান্ত ইবি উপাচার্যের অন্তত ১৪টি অডিও ফাঁস হয়। পরে ওই বোর্ডের এক নিয়োগপ্রার্থী শাহাবুব আলম ২০২৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষক নিয়োগে ঘুষগ্রহণ, দুর্নীতি ও অবৈধ লেনলেনসহ বিভিন্ন অভিযোগ দায়ের করেন দুদকে। অভিযোগে তিনি বিভাগটিতে নিয়োগ হয়ে যাওয়া দুই শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের দাবি জানান।
এদিকে উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, নিয়োগবাণিজ্য, মেগাপ্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতি, নিয়মবহির্ভূত অর্থ উত্তোলনসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মকবুল নামের এক ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ করেন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। অভিযোগ দায়েরের পর মার্চ মাসের শুরুর দিকে সেগুলো আমলে নেয় দুদক।
পরে ক্যাম্পাস কুষ্টিয়া অঞ্চলে হওয়ায় কুষ্টিয়া জেলার সমন্বিত কার্যালয়কে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে। সে সময় জেলার দুদকের সহকারী পরিচালক নীল কমলকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি ক্যাম্পাসে সশরীরে এসে অভিযুক্তদের সাক্ষ্যগ্রহণসহ তদন্তের বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তদন্ত কর্মকর্তা বদলে আরেক সহকারী পরিচালক সাইদুর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি বর্তমানে এসব অভিযোগের তদন্ত করছেন।
ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট অনেককেই কুষ্টিয়া জেলার সমন্বিত কার্যালয়ে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দফতর থেকে প্রয়োজনীয় রেকর্ড সংগ্রহ করা হয়েছে।
এবার অভিযোগ উঠেছে মেগাপ্রকল্পের কাজের সোয়া ৬ কোটি টাকার ভুয়া বিল উত্তোলন ও ভাগবাটোয়ারার মাধ্যমে আত্মসাতের। এই অভিযোগ পড়েছে কমিশনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। আর এটিও অভিযোগের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে আছেন কুষ্টিয়া জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাইদুর রহমান। ইতোমধ্যে এই তদন্তের অংশ হিসেবে ভুয়া বিল উত্তোলন সংক্রান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনসহ সংশ্লিষ্ট কাজের প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত মূলকপি আহ্বান করা হয় রেজিস্ট্রারের কাছে। তদন্ত প্রতিবেদন ব্যতীত অন্য তথ্য তিনি ইতোমধ্যে পাঠিয়েছেন।
কুষ্টিয়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। চিঠিতে অভিযোগের সংক্ষিপ্ত বিবরণে লেখা রয়েছে।
জানা গেছে, গত বছরের নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক সমিতি, শাপলা ফোরামসহ বিভিন্ন দফতরে এ সংক্রান্ত একটি উড়ো চিঠি আসে। সেই চিঠিতে আর্থিক সুবিধাভোগী ও সহযোগিতাকারী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান প্রকল্প পরিচালক-প্রকৌশলীসহ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমানে পদে রয়েছেন এমন ৭ জন নেতাকর্মীর নাম ছিল। একই অভিযোগ দায়ের হয় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। এদিকে বিষয়টি নিয়ে গঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটিও অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে বলে জানা গেছে।
রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এইচ এম আলী হাসান বলেন, ‘দুদক যেসব তথ্য চেয়েছে সেগুলো দিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন সিন্ডিকেট সভা ছাড়া খোলা যাবে না। তাই তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হয়নি।‘
দুদক কুষ্টিয়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের হেড অফিসে একটা অভিযোগ জমা পড়েছিল। সেই প্রেক্ষিতে হেড অফিস তদন্ত পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছিল তারা সেগুলো পাঠিয়েছে। তবে এখনও তা খুলে দেখতে পারিনি।’
জানা গেছে, তিন পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্ত ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্টদের অনিয়মের বিষয়টি উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে আর্থিক অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে। তদন্ত কমিটির কাছে অভিযুক্ত ঠিকাদাররাসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই বিষয়টি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে স্বীকার করেছেন। প্রতিবেদনে সেসব সাক্ষাৎকার এবং তথ্য-উপাত্ত রয়েছে।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমরা সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। প্রতিবেদন সিন্ডিকেটে যাবে। তারপর যা ব্যবস্থা নেওয়ার, ওখান থেকেই নেওয়া হবে।’
সারাবাংলা/এমও