রাশিয়ার মস্কোতে ক্রোকাস সিটি হল নামে একটি কনসার্ট হলে অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। রাশিয়ার ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস (এফএসবি) জানিয়েছে, গুলি ও বিস্ফোরণে কমপক্ষে ৪০ জন নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
এফএসবি এ ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ বলে অভিহিত করেছে। তবে হামলায় কে বা কারা জড়িত, সে বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি। কোনো দল বা সংগঠনও হামলার দায় স্বীকার করেনি।
রাশিয়ার বার্তা সংস্থা তাস নিউজ ও আরটির খবরে বলা হয়েছে, হামলাকারীরা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করে টানা গুলি চালিয়েছে। পাশাপাশি তারা বিস্ফোরক ব্যবহার করে ক্রোকাস সিটি হলে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
আরআইএ নোভোসতি নিউজ এজেন্সির একজন সাংবাদিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, হামলাকারীরা স্বয়ংক্রিয় বন্দুক দিয়ে গুলি চালাতে থাকেন। একইসঙ্গে গ্রেনেড বা এরকম কিছু ব্যবহার করে বিস্ফোরণ ঘটান। ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে গুলি ছোড়ে হামলাকারীরা। এই সময়ে হলে উপস্থিত ব্যক্তিরা সবাই প্রাণ বাঁচাতে মেঝেতে শুয়ে পড়েন। পরে হামলাকারীরা চলে গেলে তারা হলের বাইরে বের হয়ে যান। কেউ কেউ জানালার কাঁচ ভেঙেও বের হওয়ার চেষ্টা করেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

১৫ থেকে ২০ মিনিট ওই হলে গুলি ও বিস্ফোরণ ঘটানো হয় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ছবি: রয়টার্স
রাশিয়ার জরুরি পরিস্থিতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক বার্তায় বলা হয়, ক্রোকাস হলে আগুন নেভানোর কার্যক্রম ও উদ্ধার তৎপরতা চলছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কমপক্ষে এক শ মানুষকে বেজমেন্ট থেকে উদ্ধার করেছে। ছাদেও অনেক মানুষ আটকা পড়েছেন। তাদের উদ্ধারে কাজ চলছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে আরটি বলছে, ক্রোকাস সিটি হলে একটি কনসার্ট হওয়ার কথা ছিল শুক্রবার। ওই কনসার্টের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। সে হিসাবে ছয় হাজারের বেশি মানুষ ওই হলে থাকার কথা। কারণ কনসার্টের আগে আগে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
আরআইএ নভোসতির বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে, রাশিয়া সরকারের একজন মুখপাত্র মোসকালকোভা এ হামলার ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন রাজধানী শহরটির ছুটির দিনের সব সরকারি অনুষ্ঠান স্থগিত ঘোষণা করেছেন।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা এ হামলাকে ‘দানবীয় অপরাধ’ বলে অভিহিত করেছেন। আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন এই ঘৃণ্য হামলার নিন্দা জানায়।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাসভবন হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাশিয়ার রাজধানীতে সংঘটিত হামলাটি ‘ভয়াবহ’ এবং এ ধরনের হামলার দৃশ্য ‘দেখা কঠিন’।
মস্কোর এই হামলার পেছনে কারা জড়িত, তা নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যই পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ কেউ মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন কাল কায়েদা কিংবা আইএসের জড়িত থাকার কথা জানিয়েছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সঙ্গে এই হামলার যোগসূত্র রয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এই হামলায় ইউক্রেনের সংশ্লিষ্টতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, ইউক্রেন বা ইউক্রেনের কেউ এই হামলায় জড়িত থাকতে পারে, এমন কোনো ইঙ্গিত নেই। খুব তাড়াতাড়ি হলেও আমি এখনই এই হামলায় ইউক্রেনের কোনো যোগসূত্র থাকার বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছি।
হামলাকারী কারা হতে পারে, তা নিয়ে রাশিয়া সরকারের কোনো দফতর থেকে কোনো ধরনের মন্তব্য করা হয়নি।