Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘পঁচাত্তরের পর স্বাধীনতা ঘোষণার ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে’

সারাবাংলা ডেস্ক
২৭ মার্চ ২০২৪ ২২:০০

১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর একাত্তর সালে তার স্বাধীনতার ঘোষণার ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। দলের লোকেরা তা দেশের সব জায়গায় পৌঁছে দিয়েছিল। কিন্তু তাকে হত্যার পর ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে।

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বুধবার (২৭ মার্চ) আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তেজগাঁওয়ে দলের ঢাকা জেলা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হওয়ার আগে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান, যা ইপিআরের ওয়্যারলেস, টেলিগ্রাম, টেলিপ্রিন্টার ও দলের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। অথচ পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর এই ইতিহাসের বিকৃতি ঘটানো হয়।

আরও পড়ুন- ‘বউদের ভারতীয় শাড়িগুলো পুড়িয়ে দিচ্ছে না কেন?’

‘কোনো এক মেজর একটি ড্রামের ওপর দাঁড়িয়ে বাঁশিতে ফুঁ দিলো আর ওমনি বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেল! এভাবে একটি দেশ স্বাধীন হয় না। এখনো ইতিহাস বিকৃতির সেই ভাঙা রেকর্ড তারা (বিএনপি) বাজিয়েই যাচ্ছে,’— বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে সমগ্র জাতিকে স্বাধীনতার জন্য এবং যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। তিনি আগে আক্রমণকারী বা বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত হতে চাননি বলে অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ধাপে ধাপে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ২৫ মার্চ অকস্মাৎ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরীহ জনগণের ওপর আক্রমণ শুরু করলে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তার স্বাধীনতার ঘোষণা তৎকালীন ইপিআরের (বর্তমান বিজিবি) ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশব্যাপী প্রচার করা হয়। সুবেদার মেজর শওকত আলীসহ চারজনের কাছে এই বার্তাটি আগেই পাঠিয়ে দেওয়া ছিল। ওয়্যারলেস ব্যবহার করে সারাদেশে যখন ইপিআর মেসেজ পাঠাচ্ছিল, তখন ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনের পাশাপাশি পিলখানা ও ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনও পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ করে। গ্রেফতার হন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু ওয়্যারলেস, টেলিগ্রাম, টেলিপ্রিন্টার ও পুলিশ স্টেশনের মাধ্যমে মাধ্যমে সারাদেশে এই বার্তাটা ছড়িয়ে যায়। পরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সারাদেশে এটি প্রচার করেন এবং সুবেদার শওকতসহ বার্তা প্রচারকারীরা ধরা পড়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে শাহাদাত বরণ করেন। আর এই ইতিহাসকে পঁচাত্তরের পরে বিকৃত করা হয়েছে। প্রকৃত ইতিহাসকে বিকৃত করে একটি ভিন্ন ইতিহাসকে সামনে আনার চেষ্টা করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আজকে যিনি বলেন যে একাত্তরের ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগ নেতারা সব পালিয়ে যান, সেই মঈন খানের বাবা মমিন খান খাদ্য সচিব ছিলেন। তিনি খাদ্য সচিবের দায়িত্ব পালনের সময় চুয়াত্তরের কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টিতে সফল হওয়ায় পরে জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করলে তার দ্বারা পুরস্কৃত হয়ে মন্ত্রীর মর্যাদায় জিয়াউর রহমানের উপদেষ্টা হয়েছিলেন। অথচ পঁচাত্তরের পর থেকে সারা বছরই বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষ লেগে থাকত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৮১ সালে প্রবাস জীবন থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হলে জোর করে দেশে ফেরার পর তিনি বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ঘুরেছেন এবং বছরের পর বছর দুর্ভিক্ষ দেখতে পেয়েছেন। তিনি বলেন, সত্তরের নির্বাচনে বিজয়ী জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সংসদ সদস্যরাই কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন করেন, যার রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদসহ সরকারের সদস্যরা মুজিবনগরে শপথ নেন এবং জাতির পিতা কারাগারে অন্তরীণ থাকায় তারা মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন।

জিয়াউর রহমান প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলা ও মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করার জন্য তৎকালীন সরকার বাংলাদেশকে বিভিন্ন সেক্টরে ভাগ করে একেকজনকে একেকটি সেক্টরের দায়িত্ব দেয়। সেক্টরের যিনি দায়িত্বে ছিলেন, তিনি আহত হওয়ার পর জিয়াউর রহমান একটি সেক্টরের দায়িত্ব পান। জিয়াউর রহমান সেখানে একজন বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বেতনভুক্ত কর্মচারী ছিলেন জিয়াউর রহমান। একজন সামান্য মেজর ছিলেন। এখান থেকে মেজর জেনারেল পর্যন্ত পদোন্নতি কিন্তু তাকে আওয়ামী লীগ সরকারই দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার আগে জিয়াউর রহমান পশ্চিম পাকিস্তানের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার হিসেবে কার্যাদেশ পেয়ে পূর্ববঙ্গে দায়িত্ব পালনরত ছিলেন। তার জন্ম ছিল কলকাতায়। এরপর পরিবার করাচিতে চলে যায় এবং তার লেখাপড়া ও সেনাবাহিনীতে যোগদান সবকিছুই পাকিস্তানে ছিল। কাজেই তার মনে ওই পাকিস্তানটাই রয়ে গেছিল, তার প্রমাণও আছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ২৫ মার্চ পাকিস্তান হানাদার বাহিনী যখন এখানে গণহত্যা শুরু করে, তারা কিন্তু চট্টগ্রামেও হত্যাকাণ্ড শুরু করেছিল। যারা ব্যারিকেড দিচ্ছিল জাতির পিতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে, তাদের ওপর গুলি চালিয়েছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। আর চট্টগ্রামে সেই সেনাবাহিনীর দায়িত্বে জিয়াউর রহমান ছিলেন। যারা সেই সময় ব্যারিকেড দিয়েছেন, জিয়াউর রহমান তাদের ওপরও গুলি চালিয়েছেন। শুধু তাই না, সোয়াত জাহাজ এসেছে পাকিস্তান থেকে অস্ত্র নিয়ে। সেই অস্ত্র খালাস করতে গিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। সেখানে এই যে সংগ্রাম পরিষদের নেতা ও অন্যান্য সাধারণ জনগণ, তারা তাকে পথে আটকায়। তাকে যেতে দেয়নি, বাধা দিয়েছিল এবং সেখান থেকেই ধরে নিয়ে আসে।

স্বাধীনতার ঘোষণা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে সর্বপ্রথম ২৬ মার্চ দুপুর ২টা-আড়াইটার সময় মান্নান সাহেব, চট্টগ্রামের সেক্রেটারি ঘোষণা দেওয়া শুরু করেন। একে একে আমাদের যারা নেতা, সবাই ঘোষণা পাঠ করেন। সে সময় জহুর আহমেদ সাহেব বলেন, আমাদের একজন মিলিটারি লোক দরকার। তখন মেজর রফিককে বলা হয়। তিনি তখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে আটকানোর জন্য অ্যাম্বুশ করে বসে আছেন। তিনি বলেন, আমি এখান থেকে নড়লে এই জায়গাটা ওরা দখল করে নেবে। ওই সময় জিয়াউর রহমানকে ধরে আনা হয় এবং তাকে দিয়ে ২৭ তারিখ সন্ধ্যার পরে জাতির পিতার পক্ষে ঘোষণাটা পাঠ করানো হয়। কাজেই এটা নিয়ে বড়াই করার তো কিছু নেই! তারা এটা নিয়েই বড়াই করে যাচ্ছে।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুর রাজ্জাক ও শাজাহান খান, দলের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, ঢাকা জেলা সভাপতি বেনজীর আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচিসহ অন্যরা আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন।

আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ ও সহপ্রচার সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আওয়াল শামীম। বাসস।

সারাবাংলা/টিআর

আওয়ামী লীগ সভাপতি জিয়াউর রহমান প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেখ হাসিনা স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা স্বাধীনতার ঘোষণা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর