আমেরিকা ভ্রমণে চীনাদের হয়রানির সতর্কতা জারি
৩০ মার্চ ২০২৪ ১৭:০৭
যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়া চীনা নাগরিকদের জন্য ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে বেইজিং। তাদের নিরাপত্তা সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। বিমানবন্দরে অনাকাঙ্ক্ষিত অনুসন্ধানের মতো বিভিন্ন অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে তাদের।
শুক্রবার (২৯ মার্চ) চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম উইচ্যাটে বলেছে, ‘বেশ কিছু চীনা শিক্ষার্থী এবং কোম্পানির কর্মচারী সম্প্রতি মার্কিন বিমানবন্দরের আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের দ্বারা অনাকাঙ্ক্ষিত জিজ্ঞাসাবাদ ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। তাদের ফোন, কম্পিউটার এবং অন্যান্য লাগেজ পণ্য প্রতিটি ধরে ধরে তল্লাশি করা হয়েছে। বেশ কয়েকজনকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।’
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চীনা দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলো সেদেশে গৌরবময় প্রতিনিধিত্ব করছে। যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন তাদের এসব পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন হওয়ার জন্য স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সাহায্যের প্রয়োজনে চীনা নাগরিকদের দূতাবাস বা কনস্যুলেটে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে।’
চীনা সংবাদ মাধ্যমের একটি অনুসন্ধান সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে, গত নভেম্বর থেকে বৈধ কাগজপত্র নিয়েও শুধু ওয়াশিংটনের ডুলাস বিমানবন্দরে কমপক্ষে আটজন চীনা শিক্ষার্থী অনাকাঙ্ক্ষিত অনুসন্ধান ও জিজ্ঞাসাবাদের শিকার হয়েছেন। তাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
গত জানুয়ারিতে চায়না সায়েন্স ডেইলি নামের একটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে বলা হয়, জীববিজ্ঞানের একজন পিএইচডি শিক্ষার্থীকে ডিসেম্বরে ডুলেস বিমানবন্দরে কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেননি। ফলে তিনি চীনে ফেরত এসেছেন। ওই শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রেই পড়াশুনা করেছেন। তিনি পিএইচডি শেষ করার জন্য আবার যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চেয়েছিলেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই শিক্ষার্থীর দেহ তল্লাশি করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একটি কক্ষে আট ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। পরে আরও ১২ ঘণ্টা নির্জন কারাবাস করতে হয় তাকে।
ওই শিক্ষার্থী জানান, তিনি চীনে ফিরে আসার পর আরও ১০ জন চীনা শিক্ষার্থীর কথা জানতে পারেন। তাদেরও একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল। চীনের এসব শিক্ষার্থীদের প্রধানত চীন স্কলারশিপ কাউন্সিল থেকে তাদের স্নাতক স্কলারশিপ এবং গোপনীয় গবেষণায় বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল।
গত ৮ মার্চ চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেছিলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশের মধ্যে বুঝাপড়া ব্যাহত করেছে।’ গত বছর চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট দুই দেশের মধ্য ব্যক্তিগত যোগাযোগ চ্যানেল আবারও চালু করার বিষয়ে একমত হয়েছিলেন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং যুক্তরাষ্ট্রের এমন আচরণকে ‘রাজনৈতিক এবং বৈষম্যমূলক আইন প্রয়োগ’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এসব ঘটনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু লোকের স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতার কারণে ঘটেছে।’
গত মাসে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেছিলেন, ‘মার্কিন কর্তৃপক্ষ একাডেমিক গবেষণাকে অস্ত্রীকরণ করছে। জাতীয় নিরাপত্তার ধারণাকে অতিমাত্রায় প্রসারিত করছে। চীনা শিক্ষার্থীদের নিপীড়ন করছে এবং জনগণের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বিনিময়ের পরিবেশ বিষাক্ত করছে।’
গত কয়েক মাসে দুই দেশ শিক্ষাগত এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বিনিময় উৎসাহিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। নভেম্বরে মার্কিন সফরের সময় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঘোষণা করেছিলেন, চীন আগামী পাঁচ বছরে ৫০ হাজার তরুণ আমেরিকানকে পড়াশোনার জন্য আমন্ত্রণ জানাবে।
চলতি সপ্তাহে মার্কিন ব্যবসায়ী, একাডেমিয়া এবং নীতি নির্ধারকদের একটি প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন শি জিনপিং। এসময় তিনি বলেছেন, ‘চীন-মার্কিন সম্পর্ক বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কগুলোর মধ্যে একটি মনে করেন।উভয় দেশের সকল খাতের লোকরা আরও বেশি পরিদর্শন এবং বিনিময়ে অংশ নিতে পারে।’
সারাবাংলা/আইই