দেশে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার পৌনে ৪ লাখ মানুষ
৩১ মার্চ ২০২৪ ২১:২৮
ঢাকা: দেশে কর্মক্ষেত্রসহ পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন তিন কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। আর তিন কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে প্রতিবছর প্রায় এক লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া বছরে ৬১ হাজার শিশু তামাকজনিত রোগে ভুগে থাকে।
রোববার (৩১ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন যুগোপযোগী করার দাবিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ। মূল প্রবন্ধে তামাক আইন সংশোধনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো উপস্থাপন করেন তিনি।
ডা. নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ বলেন, তামাক জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় হুমকি। গবেষণার তথ্য মতে, বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারিতে অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ী রোগীদের মৃত্যুর হার তিন গুণ বেশি ছিল এবং ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে মৃত্যু হয়েছে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি রোগীর। পরোক্ষ ধূমপানের শিকার ব্যক্তির ক্ষেত্রেও কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর আশঙ্কা ৪০ শতাংশেরও বেশি ছিল। তাই আমরা স্পষ্টতই বলতে পারি, করোনার মতো সংক্রামক মহামারি এবং অন্যান্য অসংক্রামক রোগের কবল থেকে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় বিদ্যমান আইনকে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই।
সংবাদ সম্মেলনে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে যে তিনটি বিশেষ দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন তার মধ্যে অন্যতম হলো বর্তমান আইনকে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উন্নীত করা। এই আলোকে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ যুগোপযোগী করে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে ছয়টি সুপারিশ জানানো হয়।
সুপারিশ ছয়টি হলো— সব পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহণে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্য বিক্রির স্থানে তামাকজাত পণ্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির যেকোনো ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট বা কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা; বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন ও খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা; এবং ই-সিগারেটসহ সব ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন মনে করছে, এসব সুপারিশ অনুসরণ করে সংশোধনীটি পাস হলে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি বৈশ্বিক মানদণ্ডে উন্নীত হবে, একই সঙ্গে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তিও আরও উজ্জ্বল হবে এবং তামাকের ক্ষতি থেকে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার পথ সুগম হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সংসদ সদস্য আবু সালেহ মোহাম্মদ নাজমুল হক বলেন, তামাক জনস্বাস্থ্য ও দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। জনস্বাস্থ্যের সার্বিক উন্নয়নে আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। দেশের জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতি রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া এবং সর্বসম্মতিক্রমে যে তামাক নিয়ন্ত্রণে যে সুপারিশগুলো করা হয়েছে, তা দ্রুত বাস্তবায়ন করার দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম।
সারাবাংলা/আরএফ/টিআর
তামাক নিয়ন্ত্রণ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পরোক্ষ ধূমপান স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন