চুক্তিভঙ্গ করায় কেএনএফ’র সঙ্গে আলোচনা স্থগিত করল শান্তি কমিটি

বান্দরবান: সম্প্রতি সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) তিন ব্যাংকে হামলা, সোনালী ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর ১৪টি অস্ত্র লুটের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বান্দরবান শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি। একইসঙ্গে চুক্তিভঙ্গ করে সশস্ত্র কার্যক্রম অব্যাহত রাখায় সংগঠনটির সঙ্গে সব ধরনের আলোচনা স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে শান্তি কমিটির নেতারা।

বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) পার্বত্য জেলা পরিষদে সম্মেলল কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এই নিন্দা জানায় বান্দরবান শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি। সংবাদ সম্মেলন সভাপতিত্ব করেন বান্দরবান পার্বত্য জেলাপরিষদ ও শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহ্বায়ক ক্য শৈ হ্লা।

ক্য শৈ হ্লা বলেন, কেএনএফ’কে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য গত বছরের ২৯ মে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর নেতাদের উপস্থিতিতে অরুণ সারকী টাউন হলে মতবিনিময় সভা আয়োজন করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৯ জুন নেতাদের সমন্বয়ে ১৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠিত হয়। পরবর্তীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি ও কেএনএফ’র মধ্যে কয়েক দফা ভার্চুয়াল মিটিংয়ের পর সরাসরি সংলাপে বসার সুযোগ সৃষ্টি হয়। গত ৫ নভেম্বর এবং চলতি বছরের ৫ মার্চ দুই দফা সরাসরি সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

তিনি বলেন, উভয় সংলাপে কেএনএফ’র সকল প্রকার সশস্ত্র কার্যক্রম হতে বিরত থাকা ও অন্যান্য বিষয় সংক্রান্ত দু’টি সমঝোতা স্মারক সম্পাদিত হয়। কিন্তু তারা সম্পূর্ণভাবে চুক্তি ভঙ্গ করে বিভিন্ন সময়ে সশস্ত্র কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। কমিটির তরফ থেকে এ বিষয়টির ব্যাপারে বারবার অবগতি করা হলেও তারা কর্ণপাত করেনি। বরং বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন সময়ে স্থানীয়দের উপর হামলা, অপহরণ ও চাঁদাবাজি চালিয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি ঘটনায় আমরা শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি তীব্রভাবে মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ। এ ঘটনায় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির চলমান সকল ধরনের প্রচেষ্টা পদানত ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে কেএনএফ শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সঙ্গে সংলাপ করার সকল ধরনের পথ বন্ধ করে দিয়েছে বলে মনে হয়। বিধায় আগামীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির পক্ষে সংলাপ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’

সর্বশেষ সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা জোরদারকরণ, রাষ্ট্রের সম্পত্তির সুরক্ষা প্রদান এবং অপহৃত সোনালী ব্যাংক ম্যানেজারকে নিঃশর্তভাবে সুস্থ্য ও নিরাপদে মুক্তির জন্য বান্দরবান শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির পক্ষে থেকে জোর দাবি জানান ক্য শৈ হ্লা।

এ সময় বান্দরবান জেলা পরিষদ সদস্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির মূখপাত্র কাঞ্চন জয় তঞ্চঙ্গ্যা, বম সোসাইল কমিটি সভাপতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠা লিয়াজ কমিটির সদস্য লাল জার বম ও সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম মনুসহ কমিটির ১৩ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, গত মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রুমা উপজেলায় তারাবির নামাজ পড়ার সময় মুসল্লিদের উপর হামলা করে সকারি কর্মকর্তা ও পথচারীদের জিম্মি করে কেএনএফ। এ সময় অর্থ লুটের উদ্দেশ্যে উপজেলার সোনালী ব্যাংকে হামলা, ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর ১৪টি অস্ত্র লুট করে নেওয়া সশস্ত্র সংগঠনটি। এরপর গতকাল বুধবার (৩ এপ্রিল) থানচি উপজেলায় স্থানীয়দের জিম্মি করে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ ও দু’টি ব্যাংক লুট করার চেষ্টা করে কেএনএফ।

আরও পড়ুন:

• রুমার সোনালী ব্যাংকের ভল্ট অক্ষত, লুট হয়নি টাকা
• এবার থানচিতে দিনদুপুরে ২ ব্যাংক লুট, বাজারে ফাঁকা গুলি
• রুমার সোনালী ব‌্যাংকের ম‌্যা‌নেজার‌কে উদ্ধা‌রে চেষ্টা চলছে
• রুমায় সোনালী ব্যাংকের কোটি টাকা লুট, ম্যানেজারকে অপহরণ

সারাবাংলা/এনএস

কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফ টপ নিউজ বান্দরবান বান্দরবান শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি