ঈদ কেনাকাটায় হিমশিম খাচ্ছে মধ্য-নিম্নবিত্তরা
৫ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:৩০
বরিশাল: বরিশালে জমে উঠেছে ঈদ কেনাকাটা। ছোট-বড় মার্কেট, শোরুম ও শপিং মলগুলোতে পোশাকের সমাহার, আর বাইরে রঙিন বাতির ঝলকানি। সকাল ১১টার পর থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা এবং সন্ধ্যা ৭টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দোকানগুলোতে গত কয়েকদিন ধরে জমেছে বেচাকেনা। ২০ রমজানের পর বরিশালে ঈদের বাজার জমেছে। যা অন্যান্য বছর ১০ রমজানের পরেই লক্ষ্য করা যেত। অন্য বছরগুলোর তুলনায় এবার বিক্রি অনেকটাই কম বলে জানিয়েছেন শোরুম ও শপিং মলের মালিক ও কর্মচারীরা।
এদিকে সাধ্যের সঙ্গে না মেলায় তৈরি পোশাক থেকে শুরু করে অনেক পণ্য কিনতে বেশিরভাগ ক্রেতাই এবার ফুটপাত ও হকার্স মার্কেটের দোকানগুলো বেছে নিচ্ছেন। নগর ভবন সংলগ্ন ফজলুল হক অ্যাভিনিউ থেকে চকবাজারের ফুটপাত এবং মহসিন মার্কেটে ক্রেতাদের যে ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে, সে তুলনায় কাটপট্টি, গীর্জামহল্লা, সদর রোড ও চকবাজারের স্থায়ী দোকানগুলোতে ক্রেতা সমাগম কম। ক্রেতাদের দাবি, শোরুমগুলোতে সব পোশকের দাম অনেক বেশি। সে তুলনায় ফুটপাতের দোকানে অনেক সাশ্রয় হচ্ছে। সীমিত লাভে তারা পণ্য বিক্রি করছেন।
এছাড়া বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে শৌখিন ক্রেতারা ঈদের কেনাকাটা করার জন্য বরিশাল নগরীতে ছুটে আসছেন। সে কারণেও নগরীতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।
এরই মধ্যে কেনাকাটার চাপ বেড়ে যাওয়ায় নগরীর গীর্জা মহল্লা ও চকবাজার এলাকায় রিকশাসহ সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে স্বস্তিতে কেনাকাটা করতে পারছেন বরিশালের ক্রেতারা। তবে গত বছরের চেয়ে এ বছর পোশাকসহ সকল পণ্যের দাম বেশি বলে দাবি করেছেন ক্রেতারা। তারা বলছেন, কোনো পোশাক পছন্দ হলেই নিতে পারছে না তারা। কারণ দামের সঙ্গে বাজেট না মেলায় কেনা সম্ভব হচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভ্যাপসা গরমের কথা মাথায় রেখে আরামদায়ক শাড়ি খুঁজছেন নারী ক্রেতারা। দেশীয় বুটিকস, হাতে কাজ করা শাড়ি, থ্রি-পিস ও পাঞ্জাবির দোকানগুলোতে ভিড় বেশি দেখা যাচ্ছে। ছেলেদের পাঞ্জাবি ছাড়াও শার্ট, গেঞ্জি, জিন্স প্যান্ট, গ্যাবার্ডিন, ইন্ডিয়ান সুলতাল পাঞ্জাবির চাহিদা বেশি। পাশাপাশি জুতার শোরুমে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। ১০ রমজানের পর থেকে নগরীর জনপ্রিয়’সহ অলিগলির টেইলার্সগুলো পোশাক তৈরির অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
চকবাজারে দেশীয় শাড়ি ক্রয় করতে আসা গৃহিণী আনোয়ারা আক্তার বলেন, ‘বাঙালির যেকোনো উৎসবে নারীর প্রথম পছন্দ শাড়ি ও থ্রি-পিস। ঈদে শাড়ি আর পাঞ্জাবির আবেদন কোনো দিন শেষ হয়ে যাবে না। এবারের ঈদেও এ দুইটি পোশাকই প্রাধান্য পেয়েছে।’
বিভিন্ন শোরুম ঘুরে আমিনুর রহমান নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘এবারে অনেকগুলো শোরুম নতুন হয়েছে। সেই হিসেবে প্রত্যেক জায়গাতেই সুন্দর সুন্দর জামা-কাপড় আসছে। তবে দামটা বেশি মনে হওয়ায় ঘুরে ঘুরে দেখছি সবখানে। পছন্দ আর সাধ্যের সমন্বয়ে যেটা হবে সেটাই কিনব।’
অধরা বস্ত্রালয় ও শাড়ি মিউজিয়ামের শাড়ি ও থ্রি-পিস বিক্রয়কর্মী নাহিদ ও হানিফ জানান, এ বছর ঈদুল ফিতরে দেশীয় তৈরি জামদানি ও তাঁতের শাড়ি নারীদের বেশি পছন্দ। দেশীয় তৈরি জামদানি ও তাঁতের শাড়ির কথা মাথায় রেখেই এবারের ঈদে হরেক রকমের শাড়ির সমাগম ঘটিয়েছেন তারা। আর দাম সহনীয় বলে বেচাকেনা হচ্ছে। তবে গত বছরের চেয়ে অনেক কম।
নগরীর টপটেন শোরুমের ম্যানেজার মো. রাজু বলেন, ‘বেচা বিক্রি মোটামুটি ভালো, তবে গত কয়েক বছরের তুলানায় কম। আমরা ক্রেতাদের সব দিক মাথায় রেখে কালেকশন বাড়িয়েছি। এবারের ঈদে নায়রা, সারারা, গারারা, সাদা বাহার, সুতি ও সিল্কসহ নানা নামের থ্রি-পিস কিনছেন তরুণীরা।’
এদিকে সাধ ও সাধ্যের ফারাকে কিছুটা বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ। এসব মানুষের ভরসাস্থল নগরীর মহসিন মার্কেট ও সিটি মার্কেট ভিড় দেখা গেছে। নগর ভবন সংলগ্ন সড়কের ফুটপাত জুড়ে বসেছে ভ্যানগাড়িতে অস্থায়ী দোকান। এখানে সব বয়সী মানুষের জন্য রয়েছে পছন্দের পোশাক। ফুটপাতে অল্প আয়ের মানুষ সাধ্যের মধ্যে পণ্য কিনতে পেরে যেমন খুশি, তেমনই দোকানিরাও পণ্য বিক্রি করে খুশি।
তবে এবার ফুটপাতের দোকানগুলোতে মধ্যবিত্ত পরিবারকেও দেখা যাচ্ছে। এতে অনেকটা বিপাকে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ। এতে বিক্রেতারা সহজে পণ্যের দাম কমাচ্ছেন না। ভ্যানে সন্তানের জন্য কাপড় পছন্দ করছিলেন জেসমিন বেগম। তিনি বলেন, ‘মার্কেট ঘুরে এসে এখান থেকে কিনতেছি। এখানকার পোশাকগুলো ভালো, দামও কম তাই এখান থেকেই কিনে নিলাম।’
বিক্রেতা আব্দুল জলিল বলেন, ‘আমরা অল্প দামে বিক্রি করতে পারছি, তাই তারা নিচ্ছেন। দোকানে তো ভাড়াসহ অন্যান্য বিষয় আছে, যার কারণে তাদের খরচও বেশি। আমাদের বাড়তি খরচ না থাকায় বেশি দাম রাখি না।’
এদিকে ঈদ বাজারে ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা দিতে ও যানজটমুক্ত রাখতে মেট্রোপলিটন পুলিশ সদস্যরা সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে ইতোমধ্যে পুরো নগরীজুড়ে ২৬০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জিহাদুল কবির জানান, ক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পোশাকে, সাদা পোশাকের পাশাপাশি বিশেষ নজর রাখাসহ নির্বিঘ্নে কেনাকাটা করতে বাড়তি ট্রাফিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সারাবাংলা/জিএমএস/এনএস