ঈদ আনন্দ নেই জিম্মি নাবিক নাজমুলের পরিবারে
৬ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৩৬
সিরাজগঞ্জ: আর কয়েকদিন পরই মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ঈদল ফিতর। সবাই ঈদের কেনাকাটা করলেও সোমালিয়ার জলসদ্যুদের হাতে জিম্মি নাবিক সিরাজগঞ্জের নাজমুল হকের পরিবারে নেই ঈদের আনন্দ, হয়নি কেনাকাটা। পরিবারের উপার্জনশীল ব্যক্তি বন্দি থাকায় ঈদের খুশি ম্লান হয়ে গেছে তাদের। প্রতিটি মুহূর্তে নামজুলের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। কখন জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হয়ে সন্তান বুকে ফিরে আসবেন সেই চিন্তা নাজমুলের মা-বাবার।
জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিক নাজমুল হকের বাড়ি সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট ইউনিয়নের চর-নূরনগর গ্রামে। তিনি আবু শ্যামা ও নার্গিস দম্পতির একমাত্র ছেলে।
জানা যায়, নাজমুল হকের বয়স মাত্র ২৩ বছর। দুই ভাই-বোনের মধ্যে তিনিই বড়। ছোটবেলাতেই মারা গেছেন তার তিন ভাই-বোন। মাত্র ২০ বছর বয়সেই জাহাজে চাকরি পাওয়ার সুবাদে পরিবারের মুখে ফুটিয়েছেন হাসি। কিন্তু গত ১২ মার্চ অপহৃত হওয়ার পর থেকেই ছেলের মুক্তির সংবাদের প্রতীক্ষায় সময় পার করছেন নাজমুলের মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যরা। তাদের সন্তান ফিরে পেতে নামাজ, রোজা ও দোয়া করে সময় পার করছেন তারা। দিনরাত ছেলের ছবি এবং মোবাইলে কোনো সংবাদ এলো কি না তা দেখছেন তারা। প্রতীক্ষার প্রহর যেন শেষ হয় না। অপহৃতের পর থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন নাজমুলের বৃদ্ধ বাবা আবু শ্যামা। কান্না ও আহাজারিতে রাতদিন পার হচ্ছে মা নার্গিস ও বোন নাজমার।
নাজমুলের প্রতিবেশী ও স্বজনেরা জানান, নাজমুল খুবই ভদ্র ও ভালো ছেলে। পড়াশোনা করা অবস্থাতেই চাকরি হয়ে গেছে। নাজমুল ছাড়া ওদের পরিবারকে দেখার আর কেউ নেই। প্রতিবছর ঈদের কেনাকাটা করলেও এবার কিছুই হয়নি তাদের। ছেলের সুস্থতা আর নিরাপদে ফিরে আসার অপেক্ষা করছে তার বাবা-মা। প্রশাসনসহ অনেকেই তাদের খোঁজখবর নিতে আসে। শুধু সান্ত্বনা দিয়েই যায়। সরকার ২৩ জন নাবিককে ঈদের আগে ফিরিয়ে আনবে এমন প্রত্যাশা তাদের।
নাজমুলের মা নার্গিস বেগম বলেন, ‘নাজমুলের আয়েই আমাদের সংসার চলে। মাসে ৯০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পাঠাত। জিম্মি হওয়ার আগের মাসে ৯১ হাজার টাকা দিয়েছে। আমার ছেলেটা এখনো বিয়ে করেনি। নাজমুল অনার্সে ভর্তির পরেই চাকরি হয়েছে। চাকরি হওয়ার পরে প্রথমে গিয়ে তিন বছর ছিল। এরপর এসে আবার মাস তিনেক হলো গেছে। ঢাকা থেকে বিমানে দক্ষিণ কোরিয়া গিয়ে ওখান থেকে জাহাজে উঠেছিল নাজমুল।’
তিনি বলেন, ‘যখন তারা জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হয় তখন আমার বুকের মানিক বলেছিল- মা ২০ থেকে ২৫ দিনের খাবার আছে, আর ২০০ মেট্রিক টন পানি আছে। দস্যুরা কথায় কথায় মাথায় বন্দুক ধরে রাখে, জাহাজে খাবার সংকট, পানি সংকট- এমন নানা দুশ্চিন্তায় আমার ঘুম আসে না।’
নার্গিস আরও বলেন, ‘ছেলে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি। ছেলেকে ছাড়া কিভাবে ঈদের কেনাকাটা করব, ভালো খাবার খাব আপনারাই বলেন?’ ছেলেকে ঈদের আগে ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান তিনি।
কামারখন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শাহীন সুলতানা বলেন, ‘জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার পর থেকেই জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে তাদের পরিবারের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি। অপহৃত নাবিকদের উদ্ধারের বিষয়টি নিয়ে সরকার ও জাহাজ মালিকের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা চলছে। পরিবারের একমাত্র ছেলে নিখোঁজ থাকলে তাদের তো আসলে ঈদ বলতে কিছুই থাকে না। তারপরও আমরা তাদের পাশে আছি। দু-তিনদিনের মধ্যেই নাজমুলের পরিবারকে আমরা সহযোগিতা করব।’
প্রসঙ্গত, এমভি আবদুল্লাহ নামে জাহাজটি চট্টগ্রামের কেএসআরএম গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন। গত ১২ মার্চ (মঙ্গলবার) দুপুর ১২টার দিকে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজটি সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। ওই জাহাজের ২৩ নাবিককে জিম্মি করা হয়। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার নাজমুল হকও রয়েছেন।
আরও পড়ুন:
- জিম্মি নাবিক সাইদুজ্জামানের সঙ্গে কথা হচ্ছে পরিবারের
- জলদস্যুদের হাতে জিম্মি সাইদুজ্জামান, ঈদের আনন্দ নেই পরিবারে
- জলদস্যুদের কবলে টাঙ্গাইলের সাব্বির, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় পরিবার
- জিম্মি জাহাজের জলদস্যুদের ছবি প্রকাশ করল ভারত
- ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে বাংলাদেশি জাহাজ
সারাবাংলা/এনএস