বিজ্ঞাপন

জলদস্যুদের কবলে টাঙ্গাইলের সাব্বির, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় পরিবার

March 14, 2024 | 1:41 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

টাঙ্গাইল: জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশের এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজের ২৩ নাবিকের একজন টাঙ্গাইলের নাগরপুরের সাব্বির হোসেন। ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের হাতে জিম্মির খবর পাবার পর থেকেই উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে তার পরিবারের।

বিজ্ঞাপন

টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার সহবতপুর ইউনিয়নের ডাঙা ধলাপাড়া গ্রামে সাব্বিরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বাবা হারুন অর রশিদ আর মা সালেহা বেগম বিলাপ করছেন।

সাব্বিরের পরিবার গণমাধ্যমের খবরে জানতে পারেন জাহাজটি জলদস্যুরা আটক করে সোমালিয়ায় তাদের সুবিধামত জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। এমন খবরে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তার প্যারাইলাইজড বাবাসহ মা ও একমাত্র বোন।

বিজ্ঞাপন

একমাত্র ছেলের জিম্মির খবর শুনে বাবা হারুন অর রশিদ হাউ মাউ করে কাঁদছেন, মা সালেহা বেগম বিলাপ করছেন। একমাত্র বোন মিতু আক্তার ভাইয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করছেন। গ্রামের লোকজন ও আত্মীয়-স্বজনরা বাড়িতে এসে তাদের শান্তনা দিচ্ছেন। জিম্মির খবর পেয়ে স্বজনরা উদ্বিগ্ন রয়েছেন। সাব্বিরকে ফেরত পেতে সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।

সাব্বিরের চাচাতো ভাই আহম্মেদ হোসেন রানা বলেন, সাব্বিররা দুই ভাইবোন। তার পরিবার সচ্ছল নয়। অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না থাকায় সাব্বির ছোটবেলা থেকেই তার মামার বাড়ি সহবতপুর ইউনিয়নের কাজির পাচুরিয়ার এলাকায় থাকতেন এবং সেখান থেকেই পড়াশোনা করেছে।

তিনি আরও বলেন, সাব্বিরের বাবা মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ জনিত কারণে প্যারাইলাইজড হয়ে শয্যাশায়ী। সাব্বিরের চাকরি হওয়ার পর তার মা শয্যাশায়ী স্বামীকে নিয়ে সহবতপুর বাবার বাড়িতে বসবাস করছেন। সহবতপুরের ডাঙা ধলাপাড়া গ্রামে এখন কেউ আর থাকেন না। একমাত্র উপার্জনক্ষম সাব্বিরের কিছু হয়ে গেলে তাদের আর চলার উপায় থাকবে না।

বিজ্ঞাপন

এমভি আবদুল্লাহ নামে জাহাজটি চট্টগ্রামের কেএসআরএম গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বেলা ১২টার দিকে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজটি সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। ওই জাহাজের ২৩ নাবিককে জিম্মি করা হয়।

এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ মেহেরুল করিমের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাচ্ছিল। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সোমালিয়া উপকূল থেকে প্রায় ৫০০ নটিক্যাল মাইল দূর দিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছিল। কিন্তু দুপুর একটার দিকে ভারত মহাসাগরের গভীরে গিয়ে শতাধিক জলদস্যু একে–৪৭ রাইফেলসহ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। জাহাজে থাকা নাবিকরা হোয়াটস অ্যাপে বার্তা পাঠিয়ে জলদস্যু আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানান।

যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশন (ইউকে এমটিও) তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল পূর্বে বাংলাদেশি জাহাজটি আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে। দুটি নৌযানে (একটি বড় এবং আরেকটি ছোট) চড়ে জাহাজটির কাছাকাছি এসে জলদস্যুরা জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয়।

বিজ্ঞাপন

জাহাজে থাকা নাবিকেরা হলেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মো. শামসুদ্দিন, মো . আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুর উদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।

এর আগে, ২০১০ সালের ডিসেম্বরে আরব সাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল একই প্রতিষ্ঠানের আরেকটি বাংলাদেশি জাহাজ ‘জাহান মণি’। নিকেলভর্তি ওই জাহাজের ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করা হয়। সরকারি উদ্যোগসহ নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হয়। ১৫ মার্চ তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

সারাবাংলা/এনইউ

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন