বিজ্ঞাপন

জন্মদিবসে বীরকন্যা প্রীতিলতাকে শ্রদ্ধায় স্মরণ

May 5, 2024 | 9:55 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ভাস্কর্যে শ্রদ্ধা, আলোক প্রজ্বালন, আলোচনা সভাসহ নানা আয়োজনে অগ্নিযুগের বিপ্লবী বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ১১৪তম জন্মদিবস পালন হয়েছে। প্রীতিলতা ট্রাস্ট, বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার স্মৃতি পরিষদ, ‘পূর্ণেন্দু,অর্ধেন্দু, সুখেন্দু ও প্রীতিলতার জন্মভিটা সংরক্ষণ স্মৃতি পরিষদ’, বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চসহ আরও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জন্মদিবসের প্রথম প্রহরে শনিবার (৪ মে) দিবাগত মধ্যরাতে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে জন্মস্থানে প্রীতিলতা ট্রাস্ট ভবনে আলোক প্রজ্বালন করা হয়। ট্রাস্টের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্যসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ এতে অংশ নেন।

রোববার (৫ মে) সকালে ট্রাস্ট প্রাঙ্গণে প্রীতিলতার আবক্ষ ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর ‘বিপ্লবীদের কথা’ শিরোনামে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রীতিলতা ট্রাস্টের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে অংশ নেন নাট্যজন শিশির দত্ত, কবি অভীক ওসমান, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক, রাজনীতিক রাশেদ মনোয়ারসহ বিশিষ্টজনেরা। এ ছাড়া গান ও নৃত্য পরিবেশন করেন ট্রাস্টের সদস্য শিল্পী ও বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বিজ্ঞাপন

সভায় বক্তারা বলেন, ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা আমাদের জাতীয় জীবনে চেতনার উৎস। আমরা রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো অশুভ শক্তির কবলে পড়লে প্রীতিলতার ভাস্কর্যের কাছে শক্তি আহরণ করতে ছুটে আসি। একইভাবে কোনো সংগ্রামে জয়ী হতে পারলেও শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে আসি। কারণ, প্রীতিলতা হচ্ছে আমাদের সংগ্রাম ও শক্তির উৎস। এভাবেই যুগে যুগে প্রীতিলতা বাঙালিকে সংগ্রামের অনুপ্রেরণা দিয়ে যাবেন।’

এ সময় তারা প্রীতলতা ওয়াদ্দেদারের জন্ম ও আত্মাহুতি দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের আহ্বান জানান।

ধলঘাট ইউনিয়নের দক্ষিণ সমুরা গ্রামে ‘পূর্ণেন্দু,অর্ধেন্দু, সুখেন্দু ও প্রীতিলতার জন্মভিটা সংরক্ষণ স্মৃতি পরিষদ’ সদস্যরা স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

বিজ্ঞাপন

এদিকে সকালে নগরীর পাহাড়তলীর ইউরোপিয়ান ক্লাবের সামনে প্রীতিলতার ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার স্মৃতি পরিষদ। এরপর অনুষ্ঠিত হয় পথসভা।

পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সিঞ্চন ভৌমিকের সভাপতিত্বে ও অর্থ সম্পাদক তপন ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ জিনবোধি ভিক্ষু। আরও বক্তব্য রাখেন হিউম্যান ফার্স্ট মুভমেন্টের সাধারণ সম্পাদক হামিদ উদ্দিন, মোাহাম্মদ ফরিদ, মোহাম্মদ জাকির হোসেন।

পথসভায় বক্তারা বলেন, বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার অকুতোভয় সংগ্রামের অনুপ্রেরণার নাম। প্রীতিলতার বীরত্বগাঁথা, সংগ্রামী ধারা বাঙালিকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে অনুপ্রেরণা দিয়ে যাবে। ইতিহাসবিদরা ১৯০৫ থেকে ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময়কে বিপ্লবের অগ্নিযুগ ঘোষণা করেছিলেন। প্রীতিলতা সেই অগ্নিযুগের প্রথম বিপ্লবী নারী শহিদ। বীরকন্যার আত্মাহুতির স্মৃতিধন্য ইউরোপিয়ান ক্লাবকে নামে জাদুঘর না রেখে বাস্তবে জাদুঘরে রূপান্তর করতে হবে।’

বিকেলে ইউরোপিয়ান ক্লাবের সামনে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ, চট্টগ্রাম। সংগঠনের উপদেষ্টা আল কাদেরী জয়, জেলা সংগঠক উম্মে হাবিবাসহ নেতাকর্মীরা এ সময় ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়া বাসদ (মার্কসবাদী), চট্টগ্রাম জেলা নারীমুক্তি কেন্দ্র, মাস্টারদা সূর্য সেন স্মৃতি রক্ষা কমিটি, বীরকন্যা প্রীতিলতা স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটিসহ আরও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

উল্লেখ্য, ১৯১১ সালের ৫ মে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাটে জন্ম নেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে বৃটিশ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন প্রীতিলতা। ১৯৩২ সালে চট্টগ্রাম শহরের পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণে নেতৃত্ব দেন তিনি। এই ক্লাবে একটি সাইনবোর্ড লাগানো ছিল, যাতে লেখা ছিল ‘কুকুর ও ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ’। প্রীতিলতার দল ক্লাব আক্রমণ করে এবং পরবর্তী সময়ে পুলিশ তাদের আটক করে। আটক এড়াতে প্রীতিলতা সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন।

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন