সৌদির সঙ্গে মিল রেখে জেলায় জেলায় ঈদের জামাত
১০ এপ্রিল ২০২৪ ১০:৪৪
ঢাকা: দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় একদিন আগেই ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে প্রতি বছর এসব মুসল্লিরা আগাম রোজা ও ঈদের নামাজ আদায় করেন। সরকারি ঘোষাণা অনুযায়ী আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) সারাদেশে ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হবে।
বুধবার (১০ এপ্রিল) সকালে চাঁদপুর, ঝিনাইদহ, দিনাজপুর, ফরিদপুর ও টাঙ্গাইলের বিভিন্ন জেলায় এই ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। শত শত মুসল্লি এই নামাজে অংশ নেন।
ঝিনাইদহের তিন স্থানে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার সকাল সাড়ে ৭টায় হরিণাকুন্ডু উপজেলা শহরে ফুটবল মাঠ এলাকায় এ ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। ইমামতি করেন ঈদ জামাত কমিটির সভাপতি বজলুর রহমান। এই নামাজে উপজেলার শিঙ্গা, শিতলী, ভালকী ও পায়রাডাঙ্গাসহ আরও কয়েকটি গ্রামের শতাধিক মুসল্লিরা শরিক হন। এছাড়াও উপজেলার পায়রাডাঙ্গা ও নিত্যানন্দপুরেও ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ঈদ জামাতের আয়োজকরা জানান, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে কয়েক বছর ধরে তারা ঈদ জামাতের আয়োজন করেছে আসছেন। হরিণাকুন্ডু উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামসহ ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বংকিরা, শৈলকুপা উপজেলার ভাটই ও চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলা থেকে মুসল্লিরা আসেন ঈদের নামাজ পড়তে।
ঈদের জামাতের সাধারণ সম্পাদক শাখায়াত হোসেন বলেন, ২১ বছর ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা ও ঈদের নামাজ আদায় করছি। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মহানবীর (স.) সুন্নাহ অনুসরণ করার জন্যই এই ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়েছে।
হরিণাকুন্ডু থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমান বলেন, হরিণাকুন্ডুতে তিনটি জায়গায় সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে কিছু মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। নিরাপত্তার স্বার্থে ঈদের নামাজে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার দুইটি ইউনিয়নের প্রায় ১৫ গ্রামের মানুষ ঈদুল ফিতরের জামাত আদায় করেছেন। জামাতে পুরুষের পাশাপাশি নারী মুসল্লিরাও অংশ নেন। বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় উপজেলার জোতবানি ইউনিয়নের খয়েরবাড়ি-মির্জাপুর মসজিদে এবং একই সময় আয়ড়া মাদরাসা মাঠে জামাত দুটি অনুষ্ঠিত হয়। খয়ের বাড়ি জামে মসজিদে মো. দেলোয়ার হোসেন কাজী এবং আয়ড়া মাদরাসা মাঠে হাফেজ আব্দুল কাইয়ুম জামাতের ইমামতি করেন।
একদিন আগে ঈদ উদযাপন করার বিষয়ে জানতে চাইলে খয়ের বাড়ি জামাতের ইমাম মো. দোলোয়ার হোসেন কাজি বলেন, ‘সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সময়ের পার্থক্য মাত্র তিন ঘণ্টা। এই তিন ঘণ্টার ব্যবধানে দিনের পরিবর্তন হয় না। তাই এই নামাজ আদায় করা।’
বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রত কুমার সরকার বলেন, বিরামপুর উপজেলায় জোতবানি এবং বিনাইল দুটি ইউনিয়নে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে আগাম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখানে যেন কোনো বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। দুইটি জামায়াতের ২৪০ জন মুসল্লি অংশ নেন।
এদিকে টাঙ্গাইলে ৪০ পরিবার একদিন আগেই ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন। জেলার দেলদুয়ার উপজেলার শশীনাড়া গ্রামের বুধবার সকাল ৮টায় স্থানীয় মসজিদের মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ শেষে মুসলিম বিশ্বের জন্য দোয়া করা হয়।
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার প্রায় ১৩ গ্রামে ঈদ উদযাপন হচ্ছে। বুধবার (১০ এপ্রিল) সকাল ৮টার দিকে ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। এসব মুসল্লিরা চট্টগ্রামের মির্জাখিল শরীফের মুরিদান বলে জানা গেছে।
বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ জানান, শেখর ও রুপাপাত ইউনিয়নের প্রায় ১৩টি গ্রামের আংশিক মানুষ সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে রোজা ও দুইটি ঈদ উদযাপন করে আসছেন। গ্রামের অন্য সবাই সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) ঈদ পালন করবেন।
এছাড়া চাঁদপুরে বিভিন্ন উপজেলার অর্ধশত গ্রামে ঈদুল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার সকাল ৯টায় হাজীগঞ্জের সাদ্রা দরবার শরিফ মাঠে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন বর্তমান পীর মুফতি আল্লামা যাকারিয়া চৌধুরী আল মাদানী।
হাজীগঞ্জের পীরের অনুসারী হিসেবে ১৯২৮ সাল থেকে তার পরিবারের সদস্যরা নির্ধারিত তারিখের এক দিন আগেই ঈদ উদযাপন করে আসছেন। ড. বাকীবিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী জানান, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার সংবাদ নিশ্চিতের ভিত্তিতে ঈদুল ফিতর উদযাপন হয়ে থাকে।
বরিশাল মহানগরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আজ ঈদুল ফিতর উদযাপন করছে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার। বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে জেলার প্রায় অর্ধশত মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের তাজকাঠীর হাজী বাড়ির জাহাগিরিয়া শাহসুফী মমতাজিয়া জামে মসজিদে সকাল ৯টায় ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
বরিশাল নগরীর তাজকাঠি, জিয়া সড়ক, টিয়াখালী, হরিনাফুলিয়া এবং সদর উপজেলার সাহেবের হাট এলাকায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব হরিনাফুলিয়ার চৌধুরী বাড়ি শাহ মমতাজিয়া জামে মসজিদে সকাল ৯টা ২০ মিনিটে ঈদের নামাজ পড়ান হাফেজ মাওলানা মো. আবু জাফর।
এদিকে বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার খানপুরা, কেদারপুর, মাধবপাশাসহ ৫-৬টি গ্রামের এক হাজারের বেশি পরিবার ঈদ উদযাপন করছে। জেলার মুলাদী, হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় এবং সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন, পতাং ও লাহারহাট গ্রামের জাহাগিরি সুফী দরবারের প্রায় দুই হাজার অনুসারী রয়েছেন।
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে নোয়াখালীর ৪ গ্রামের মুসল্লি ঈদুল ফিতর উদযাপন করছে আজ। বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় দুই উপজেলার ৮টি মসজিদে একযোগে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। মসজিদগুলো হলো— বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বসন্ত বাগ গ্রামের সিনিয়র মাদরাসা জামে মসজিদ, বসন্তবাগ পোদ্দার বাড়ি জামে মসজিদ, বসন্তবাগ নগর বাড়ির দরজা জামে মসজিদ, বসন্তবাগ ভূঁইয়া বাড়ির দরজা জামে মসজিদ, পশ্চিম বসন্তবাগ গ্রামের মুন্সি বাড়ির দরজা জামে মসজিদ, ফাজিলপুর গ্রামের দায়রা বাড়ির জামে মসজিদ, জিরতলী ইউনিয়নের ফাজিলপুর গ্রামের জামে মসজিদ ও নোয়াখালী পৌরসভার হরিণারায়নপুর রশিদিয়া রহিমিয়া দরবার শরিফ মসজিদ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কয়েকটি গ্রামে ঈদুল ফিতর পালিত হচ্ছে আজ। বুধবার সকালে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জেলার সদর উপজেলার দেবিনগর ইউনিয়নের মোমিনটোলা ও চরবাগানপাঙ্গা এবং শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের হাজারবিঘি গ্রামের কিছু মানুষ ঈদের নামাজে অংশ নেন।
বাগেরহাটের মোংলায় আজ ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে। উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নের দুয়ারীজারা গ্রামের চটেরহাট জামে মসজিদে বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের জামাত হয়। এতে ঈমামতি করেন খতিব বেল্লাল সরাদর। এ সময় প্রায় ১০ গ্রামের নারী-পুরুষে ঈদের নামাজ আদায় করেন। পরে মসজিদ কমিটির সভাপতি এম নুরুল আমিন সেমাই দিয়ে সকলকে আপ্যায়ন করেন। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরেই সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে মোংলার চটেরহাটসহ বেশ কয়েক গ্রামে ঈদ উদযাপিত হয়ে আসছে বলে জানান গ্রামবাসী।
পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর দরবার শরীফ এলাকার কয়েকটি পরিবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছে। বুধবার সকাল ৯টায় বদরপুর দরবার শরিফে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন বদরপুর দরবার শরীফ মসজিদের খতিব মাওলানা মো. শফিকুল ইসলাম আবদুল গনি।
জানা যায়, ১০০ বছর পূর্বে থেকে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে একদিন আগে থেকে রোজা এবং ঈদ পালন করছেন তারা।
এলাকায় তারা হানাফি, মাজহার এবং চট্টগ্রামের এলাহাবাদ, বদরপুর ও কানটুপি অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
মুন্সীগঞ্জের ৯ গ্রামের প্রায় ৫ হাজার মুসল্লি ঈদুল ফিতরের পালন করছেন আজ। বুধবার সকাল ৮টার দিকে সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের আনন্দপুর গ্রামে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া সদর উপজেলার আনন্দপুর, শিলই, নায়েবকান্দি, আধারা, মিজিকান্দি, কালিরচর, বাংলাবাজার, বাঘাইকান্দির ও কংসপুরার গ্রামের অনেক মুসল্লি ঈদ পালন করছেন। গ্রামগুলোর জাহাঙ্গীর তরিকার লোকজন কয়েক বছর ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করছেন।
সারাবাংলা/এনএস