‘থ্রেট নেই, তবে খারাপ পরিস্থিতি হলে মোকাবিলায় প্রস্তুত’
১৩ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৩২
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় জানিয়েছেন, পহেলা বৈশাখ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা নেতিবাচক প্রচারণা থাকলেও সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকি নেই। এরপরও যে কোনো ধরনের খারাপ পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ প্রস্তুত আছে।
শনিবার (১৩ এপ্রিল) সকালে চট্টগ্রামে নববর্ষ উদযাপনের বিভিন্ন ভেন্যুতে নিরাপত্তা প্রস্তুতি পরিদর্শনের পর তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
নিরাপত্তার প্রস্তুতি বিষয়ে সিএমপি কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, ‘অতীতে আমাদের যে গৃহীত ব্যবস্থা সেটা পর্যালোচনায় নিয়ে এবারও নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রণয়ন করা হয়েছে। পোশাকি ব্যবস্থা তো আছেই, সাদা পোশাকের ব্যবস্থাও প্রণয়ন করা হয়েছে। পাশাপাশি যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমাদের স্পেশালাইজড ইউনিট, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এবং সোয়াতের সদস্যরা প্রস্তুত থাকবে।’
আয়োজকদের নিজস্ব নিরাপত্তা জোরদারের তাগিদ দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনুষ্ঠানে নারী-পুরুষ যাতে আলাদাভাবে প্রবেশ করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা আয়োজকদের রাখার জন্য বলা হয়েছে। ছিনতাই এবং ইভ টিজিংয়ের মতো অপরাধ মোকাবিলায় আমাদের পোশাকি এবং সাদা পোশাকের ব্যবস্থা থাকবে। এর বাইরে আয়োজকদের নিজস্ব প্রস্তুতিও রাখার কথা বলা হয়েছে।’
দর্শকদের অতিরিক্ত কিছু বহন না করার অনুরোধ করে সাংবাদিকদের মাধ্যমে সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘অনুরোধ করছি, আপনারা যখন আসবেন খালি হাতেই আসবেন। অতিরিক্ত কোনো ব্যাগ-পোটলা নিয়ে আসবেন না। যারা মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেবেন, বিশেষ করে যারা বিভিন্ন ধরনের মুখোশ ধারণ করবেন, তারা যেন পূর্ব থেকে আয়োজকদের পরিচিত থাকেন। তাহলে এটার সুযোগ নিয়ে কেউ কোনো অঘটন ঘটানোর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারবে না।’
‘নগরবাসীর সহযোগিতা নিয়ে এবং আমাদের সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে আমরা যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রণয়ন করেছি, তাতে আশা করছি আগামীকালের দিনটি খুব ভালো যাবে। আমরা আশা করছি, আমাদের গৃহীত ব্যবস্থা এবং যারা দর্শক আসবেন, তাদের সহযোগিতার মধ্য দিয়ে নিরাপদ পরিবেশে উৎসবমুখরভাবে নববর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠানগুলো সম্পন্ন হবে।’
বাংলা নববর্ষ উদযাপনে যারা বিশ্বাস করে না, তাদের তৎপরতার প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নানা ধরনের কথাবার্তা আছে। আমরা সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখি। তবে আমি এটা বলতে চাই, আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো থ্রেট নেই। তবে যে কোনো ধরনের খারাপ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি আছে। আমাদের তিনস্তরের নিরাপত্তা থাকবে। পর্যাপ্ত পোশাকের পুলিশ এবং সাদা পোশাকের পুলিশ থাকবে। সংখ্যাটা আমরা বলতে চাই না।’
চট্টগ্রাম নগরীতে ডিসি হিল এবং সিআরবির শিরিষতলায় বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণের সবচেয়ে বড় আয়োজন হয়। সকালে সিএমপি কমিশনার শিরিষতলা ঘুরে ডিসি হিলে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।
এর আগে, গত ৮ এপ্রিল সিএমপি কমিশনারের সভাপতিত্বে নববর্ষ উদযাপন কমিটির প্রতিনিধিদের নিয়ে পহেলা বৈশাখের নিরাপত্তা সমন্বয় সভা হয়। এতে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে পহেলা বৈশাখের আয়োজন শেষ করার নির্দেশনা দেন সিএমপি কমিশনার।
সভায় জানানো হয়, নগর পুলিশ সিআরবি শিরিষতলা, ডিসি হিল ও শিল্পকলা একাডেমিকে মূল ভেন্যু ধরে নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। অনুষ্ঠান চলাকালীন ডিসি হিল ও সিআরবি শিরিষতলা এলাকা পুরোপুরি যানবাহনমুক্ত থাকবে। ডিসি হিলের আশপাশে চারটি স্পট এবং সিআরবি শিরিষতলার আশপাশে তিনটি স্পটে পুলিশের ব্যারিকেড থাকবে, যাতে কোনো ধরনের যানবাহন প্রবেশ করতে না পারে।
প্রতিটি ভেন্যুতে থানার সার্বক্ষণিক টিম ও মোবাইল টিম, ফুট পেট্রোল, চেকপোস্ট, সাদা পোশাকে পুলিশ, ডিবি টিম, সোয়াট টিম, কুইক রেসপন্স টিম, ডগ স্কোয়াড কে-নাইন ও বোম্ব ডিজপোজাল ইউনিট মোতায়েন থাকবে। এছাড়া পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হবে। প্রবেশপথে আর্চওয়ে থাকবে, মেটাল ডিটেক্টর দিয়েও তল্লাশি করা হবে। মঙ্গল শোভাযাত্রার সম্মুখ, মধ্য ও শেষ- তিনভাগে পুলিশ মোতায়েন থাকবে।
এছাড়া সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করা, আয়োজকদের পক্ষ থেকে প্রতিটি ভেন্যুতে সিসি ক্যামেরা ও পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবকের ব্যবস্থা করা, আজান-নামাজের সময় মাইক অথবা লাউডস্পিকার বন্ধ রাখাসহ ১১ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়।
সিআরবির শিরিষতলায় নববর্ষ উদযাপন পরিষদ- চট্টগ্রাম, ডিসি হিলে সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদ এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বর্ষবরণের আয়োজন হবে। এর বাইরে রবীন্দ্রসঙ্গীত উদযাপন পরিষদ, চট্টগ্রাম প্রথমবারের মতো নগরীর এনায়েত বাজার মহিলা কলেজ মাঠে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের আয়োজন করেছে। এছাড়া সিআরবির শিরিষতলায় শনিবার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে বর্ষবিদায়ের আয়োজনও আছে।
সারাবাংলা/আরডি/এনইউ