মোংলা-ঘষিয়াখালী ক্যানেলের তীর দখল বাড়ছে, সংকটের শঙ্কা
১৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:০৫
বাগেরহাট: মোংলা-ঘষিয়াখালী ক্যানেলের তীরভূমি ও প্লাবনভূমির হাজার একর সরকারি চরভরাটি জমি দখল করে মাছ চাষের মহোৎসব চলছে। এসব জমি দখলে নিয়ে বড় বড় খামার করে মাছ চাষ করাসহ বাড়ি-ঘরও নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে সরকারের হাজার কোটি টাকা মূল্যের জমি বেহাত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি চ্যানেলের তীরভূমি ও প্লাবনভূমির পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় নতুন করে হুমকিতে পড়েছে চ্যানেলটি। এতে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন এবং মোংলা বন্দরও আবার হুমকিতে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পরিবেশবাদী সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বাগেরহাট জেলা কালেক্টর, বাগেরহাটের পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লুটিএ’সহ সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা ও নজরদারির অভাবে এত বিপুল জমি বা তীরভূমি বেহাত হতে চলেছে।
জানা গেছে, মোংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলটি ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ। এটি জলবায়ু পরিবর্তন ও মনুষ্যসৃষ্ট প্রতিবন্ধকতার কারণে নাব্য হারায়। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ব্যায়ে চ্যানেলটি খনন করে উম্মুক্ত করা হয়। চ্যানেলের নাব্য রক্ষায় মূল চ্যানেলটির ৫ কিলোমিটার এলাকা বাদ দিয়ে রোমজাইপুর পয়েন্টে লুফ কাট দিয়ে আলাদা করা হয়। পাঁচ কিলোমিটার এলাকা লম্বা ও প্রায় ৩০০ মিটার চওড়া নদীর মূল অংশ খনন না করায় এটি এখন শীর্ণকায় খালে পরিণত হয়েছে, যা মুজিবনগর ও রোমজাইপুর পয়েন্টের বড়দিয়া, ছোটদিয়া, কুমারখালী মৌজার কালিগঞ্জ এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।
পাঁচ কিলোমিটার চ্যানেলের অংশে ৬০ এর দশক থেকে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কারণে নদী ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়। এতে প্রায় হাজার একর জমি সরকারি খাস খতিয়ানভূক্ত হওয়ার কথা থাকলেও সেটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এটি রক্ষণাবেক্ষণেও সরকারের ভূমি ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্টদের নানান অসংগতি রয়েছে বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
নদী ভাঙনের পর চরভরাটি জমি কথিত ভূমিহীন ও ভূমিদস্যুরা রামপালের সেটেলমেন্ট অফিস ও রামপালের সহকারী কমিশনারের অফিসের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ‘তঞ্চকি কাগজপত্র’ তৈরি করে রেকর্ড করে নেন। এমনকি তারা কেউ কেউ আদালতে ভুয়া কাগজপত্র জমা দিয়ে জমিও হাতিয়ে নিয়েছেন। ব্যক্তি মালিকানার জমি ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে অপর পাড়ে চর হলেও সেটিও ভূমিদস্যুরা কাগজপত্র তৈরি করে মালিকানায় নিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নতুন করে মুজিবনগর পয়েন্টে ভূমিদস্যুরা আবারেও নদীর তীরভূমি ও প্লাবনভূমি দখল করে বাধ দেওয়া শুরু করেছে। গিলাতলার মিজান মল্লিকের নেতৃত্বে মুজিবনগর গ্রামের শেখ ইলিয়াসের ছেলে শেখ বেলাল, রুস্তুম শেখের ছেলে শেখ মুকুল, শেখ শরিফুল, শেখ সাইফুল ও শেখ সোলাইমানের ছেলে শেখ আরিফ এবং মৃত শেখ মাহাতাবের ছেলে মোজাফফর হোসেন বাঁধ দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে মল্লিক মিজানুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।
শেখ বেলাল, মুকুল, আরিফ ও শরিফুল বলেন, ‘সবাই সরকারি খাস জমি দখল করে বাধ দিয়ে মাছ চাষ করছে।সবাই জমি ঘিরেছে, আমরা ঘিরলে দোষ হচ্ছে।’
মোংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব মোল্লা আব্দুস সবুর রানা অভিযোগ করে বলেন, “বাগেরহাট জেলা কালেক্টর, সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডাব্লুটিএ’র নজরদারির অভাবে হাজার কোটি টাকা মূল্যের জমি বেহাত হয়েছে। নদীর নাব্য হ্রাস পাচ্ছে এবং হুমকির মুখে পড়েছে চ্যানেলটি।’
রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রহিমা সুলতানা বুশরা বলেন, ‘মোংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলের নাব্যতা রক্ষায় সব কিছু করা হবে। সরকারি জমি অবৈধভাবে দখলকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এসময় জনবল সংকটের কারণে ভূমি ব্যবস্থাপনায় বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে বলেও তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।
সারাবাংলা/এমও