Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১২ ঘণ্টার মাথায় চট্টগ্রামসহ ৫ জেলার পরিবহণ ধর্মঘট স্থগিত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:২৩

দিনভর ধর্মঘটে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পর চট্টগ্রাম মহানগরী ও পাঁচ জেলায় চলমান পরিবহণ ধর্মঘট স্থগিত করেছে গণপরিবহণ মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। তবে ভাঙচুর ও গাড়িতে আগুন দেওয়ার মতো ঘটনা পুনরায় ঘটলে তারা ধমর্ঘটে যাবেন বলে হুঁশিয়ার করেছেন।

ধর্মঘট শুরুর ১২ ঘণ্টার মাথায় রোববার (২৮ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কর্মসূচি স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানান চট্টগ্রাম গণপরিবহণ মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী।

বিজ্ঞাপন

চার দফা দাবিতে রোববার ভোর ৬টা থেকে চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলা, কক্সবাজার এবং তিন পার্বত্য জেলায় ৪৮ ঘণ্টার ধমর্ঘট শুরু করে ঐক্য পরিষদ। দাবিগুলো হলো— কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়কে গাড়ি চলাচলে নিরাপত্তা প্রদান, গাড়ি পোড়ানোর বিষয়ে তদন্তসাপেক্ষে ক্ষতিপূরণ দেওয়া, অবৈধ গাড়ির বিষয়ে ব্যবস্থা এবং শ্রমিকদের আসামি করে অকারণে মামলা না করা।

ধমর্ঘটের মধ্যেই দুপুর আড়াইটায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বৈঠকে যোগ দেন ঐক্য পরিষদের নেতারা। সভায় দাবি তুলে ধরে সংগঠনের নেতারা বলেন, চুয়েটে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে তার বিচার আইনি প্রক্রিয়ায় হবে। তবে এর পরিপ্রেক্ষিতে গাড়ি ভাঙচুর ও পোড়ানো পরিবহণ মালিক-শ্রমিকদের ভোগান্তিতে ফেলেছে। চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে পুলিশ পরিবহণ শ্রমিকদের হয়রানি করছে। উল্টো পুলিশ কোটি কোটি টাকা পরিবহণ খাত থেকে চাঁদা নিচ্ছে।

আরও পড়ুন- পরিবহণ ধর্মঘটে বিচ্ছিন্নপ্রায় চট্টগ্রাম, তীব্র ভোগান্তি

বৈঠকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী মারা গেছে। তাদের সহপাঠীরা ক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তা ব্লক করে কিছু ঘটনা ঘটিয়েছে। যারা মারা গেছে তারা বিখ্যাত বিদ্যাপীঠের দুজন মেধাবী শিক্ষার্থী। দুর্ঘটনার পরপরই আমরা বসেছি। বাস মালিক, শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতারা সে সভায় ছিলেন। চুয়েটের ভিসিও ছিলেন।’

বিজ্ঞাপন

‘সভায় ছাত্রদের পক্ষ থেকে ১০টি দাবি জানানো হয়েছিল, যার সাতটিই ছিল বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক। সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয় পূরণ করবে। বাকি তিনটি দাবির মধ্যে ছিল চালককে গ্রেফতার করা। ওই চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন আমরা চাই, ওখানকার পরিস্থিতি আগে শান্ত হোক। আর সড়কে চাঁদাবাজিতে যদি কোনো পুলিশ সদস্য জড়িত থাকে, তার ব্যবস্থা পুলিশ নেবে। আপনারা অভিযোগ দেন। আর আপনারা কাপ্তাই রোডে গাড়ি চালান। আপনাদের নিরাপত্তা আমরা দেবো। সার্বক্ষণিক পুলিশ সেখানে নিয়োজিত থাকবে,’— বলেন জেলা প্রশাসক।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (অপারেশন) নোবেল চাকমা বলেন, ‘মামলা প্রত্যাহারের যে দাবি তোলা হয়েছে সেটি আসলে তদন্তের আগে জানানো সম্ভব নয়। আর গাড়ি পোড়ানোর বিষয়ে মামলা কেউ করতে চাইলে করতে পারবে।’

বিআরটিএ চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক রায়হানা আক্তার বলেন, ‘দুর্ঘটনায় নিহত দুই শিক্ষার্থীর মাথায় হেলমেট ছিল না। মোটরসাইকেলেরও নিবন্ধন ছিল না বলে আমরা জানতে পেরেছি। এ ছাড়া যে বাসটি মোটরসাইকেলটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়েছে, সেটা ছিল ফিটনেসবিহীন। চালকের লাইসেন্স ছিল না।’

বৈঠকে মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘গত সভায় জেলা প্রশাসক মহোদয় নিহত ও আহত ছাত্রদের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা সহায়তা দিতে বলেছিলেন। সেটা আমরা দিয়েছি। বাসচালককে পুলিশের কাছে নিজেরা হস্তান্তর করেছি। কিন্তু চুয়েটের ছাত্ররা এরপর আমাদের তিনটি বাস পুড়িয়ে দিয়েছে। তারা যে দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে, তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আমরা ওই তিনটি গাড়ির ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।’

রোববার বিকেলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে চট্টগ্রাম গণপরিবহণ মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সঙ্গে প্রশাসনহ অন্যদের বৈঠক হয়। এই বৈঠক থেকেই পরিবহণ ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়। ছবি: সারাবাংলা

‘পাশাপাশি যারা গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসককে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। তিনটি গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় মামলা হওয়ার কথা, এখনো কেন মামলা হচ্ছে না? এখানে কোনো লুকোচুরি আছে কি না? আমরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করছি। তবে যদি আবার একই ঘটনা ঘটে, পুনরায় ধর্মঘট ডাকা হবে,’— বলেন মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খান, পূর্বাঞ্চলীয় সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মৃণাল চৌধুরী, রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অংগ্যজাই মারমা ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান মেহেবুব।

প্রসঙ্গত, ২২ এপ্রিল বিকেলে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের জিয়ানগর এলাকায় চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে শাহ আমানত পরিবহণের একটি বাস মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। মোটরসাইকেলে আরোহী ছিলেন চুয়েটের তিন শিক্ষার্থী।

এদের মধ্যে ঘটনাস্থলেই শান্ত সাহা (২০) ও তৌফিক হোসেন (২১) নামে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। শান্ত চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের ২০ ব্যাচের ও তৌফিক ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী। একই ঘটনায় আরেক শিক্ষার্থী জাকারিয়া হিমু গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন। দুর্ঘটনার দুদিন পর ২৪ এপ্রিল ঘাতক বাসের চালককে পুলিশ গ্রেফতার করে।

ঘটনার পর ২২ এপ্রিল বিকেল থেকে ২৫ এপ্রিল রাত পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে আসছিলেন। আন্দোলনের মধ্যে ২৫ এপ্রিল বিকেলে চুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে চুয়েটের পরীক্ষাসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সব একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকাল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এতে ছাত্রদের বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার মধ্যে এবং ছাত্রীদের শুক্রবার সকাল ৯টার মধ্যে হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।

এ ঘোষণার পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ক্যাম্পাসের স্বাধীনতা চত্বর ও মূল ফটকে রাখা শাহ আমানত পরিবহণের দুটি বাসে তারা আগুন ধরিয়ে দেন। এ ছাড়া বিকেলে প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। এ সময় উপাচার্য, সহউপাচার্য ও রেজিস্ট্রার প্রায় দুঘণ্টা ওই ভবনে অবরুদ্ধ হয়ে থাকেন।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ২০ জনের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতে বৈঠকে বসে প্রশাসন। বৈঠকে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ও হলত্যাগের নির্দেশনা পুনর্বিবেচনার আশ্বাস দেয় চুয়েট প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের হলে থাকারও অনুমতি দেওয়া হয়।

এরপর রাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলনে করে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন। এর মধ্য দিয়ে অবরোধ তুলে নিলে চার দিন পর চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

সারাবাংলা/আইসি/টিআর

চট্টগ্রাম ধর্মঘট পরিবহণ ধর্মঘট ভোগান্তি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর