Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দেশে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে যুক্ত ১০ লাখ, গৃহকর্মী ২০ লাখ শিশু

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১ মে ২০২৪ ০৮:২০

ঢাকা: দেশে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ৩৫ লাখ ৪০ হাজার। এদের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে যুক্ত আছে ১০ লাখ ৭ হাজার শিশু। এর পাশাপাশি প্রায় ২০ লাখ শিশু গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করলেও তারা কোনো পারিশ্রমিকই পান না। চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ ৪৩ খাতের মধ্যে পাঁচটিতেই নিয়োজিত রয়েছে ৩৮ হাজার ৮ জন। এক্ষেত্রে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের শিশুশ্রমিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। অমানবিক পরিশ্রম করলেও এসব শিশু শ্রমিক পাচ্ছে না ন্যায্য মজুরি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা নির্যাতনের শিকার হলেও কোনো প্রতিকার মিলছে না।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পৃথক দু’টি জরিপ প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নীতি অনুসরণে এ জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে।

প্রতিবেদন তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত ‘সেক্টরভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শিশু শ্রম জরিপ-২০২৩’ এবং ‘জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ-২০২২’ এর ফোকাল পয়েন্ট অফিসার মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন খাঁন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ক্রমবর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে শিশু শ্রম বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। ২০২৫ সালের মধ্যে আবশ্যিকভাবে শিশু শ্রম নির্মূল করতে হবে। সরকার শিশু শ্রম বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসেবে যথাযথ অগ্রাধিকার দিচ্ছে।’

অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুদের বর্তমান প্রেক্ষাপট, বিন্যাস ও সংখ্যা নিরূপণের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু এর সমাধান আসতে এখনও আমাদের একটি একটি দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।

জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ-২০২২ এর প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী মোট শিশুর সংখ্যা ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৬ হাজার। এদের মধ্যে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ৩৫ লাখ ৪০ হাজার। এদের মধ্যে ১০ লাখ ৭ হাজারই ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত। ২ কোটি ৭৬ লাখ ৩ হাজার খানায় (পরিবারে) এসব শিশুর বসবাস। এই শিশুদের ৩৪.৮১ শতাংশ স্কুলে যায়।

জরিপে আরও বলা হয়, ২০ লাখ ১ হাজার শিশু গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে, যারা কোনো পারিশ্রমিক পায় না। কৃষি, শিল্প ও পরিষেবা খাতে যথাক্রমে ১০ লাখ, ১১ লাখ ৯০ হাজার ও ১২ লাখ ৭০ হাজার শিশু কাজ করে। গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ মে পর্যন্ত জরিপের তথ্য নেওয়া হয়েছে। ৩০ হাজার ৮১৬টি পরিবার থেকে জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

সেক্টরভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শিশুশ্রম জরিপ-২০২৩ এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাত্র পাঁচটি খাতেই নিয়োজিত রয়েছে ৩৮ হাজার ৮ শিশু। এ খাতগুলো হচ্ছে মাছ, কাঁকড়া, শামুক বা ঝিনুক সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ (শুঁটকি মাছ উৎপাদন), পাদুকা উৎপাদন (চামড়ার তৈরি পাদুকা শিল্প), লোহা ও ইস্পাত ঢালাই (ওয়েল্ডিং বা গ্যাস বার্নার মেকানিকের কাজ), মোটর যানবাহনের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত (অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ) এবং ব্যক্তিগত ও গৃহস্থালি সামগ্রীর মেরামত (অনানুষ্ঠানিক এবং স্থানীয় টেইলারিং ও পোশাক খাত)।

এর মধ্যে অটোমোবাইল ওয়ার্কশপে সবচেয়ে বেশি ২৪ হাজার ৯২৩ শিশু কাজ করে। অন্য ৪ খাতের মধ্যে শুঁটকি মাছ উৎপাদনে ৮৯৮ শিশু, চামড়ার তৈরি পাদুকা তৈরিতে ৫ হাজার ২৮১, ওয়েল্ডিং বা গ্যাস বার্নার মেকানিকের কাজে ৪ হাজার ৯৯ এবং অনানুষ্ঠানিক ও স্থানীয় টেইলারিং বা পোশাক খাতে ২ হাজার ৮০৫ শিশু কাজ করে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এই পাঁচ ঝুঁকিপূর্ণ খাতের মধ্যে শ্রমজীবী শিশুদের সবচেয়ে বড় অংশ নিয়োজিত রয়েছে অটোমোবাইল খাতে। এই খাতে কর্মরত শিশুর ৩৫.৭ শতাংশ গ্রাম এবং ৬৪.৩ শতাংশ শহর এলাকায় বসবাস করে। এই জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয় ২০২৩ সালের ৩ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত।

ঝুঁকিপূর্ণ খাতে কাজে নিয়োজিত শিশুদের মধ্যে ৯৭.৫ শতাংশ ছেলে এবং ২.৫ শতাংশ মেয়ে শিশু।

প্রতিবেদনে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন উল্লেখ করেছেন, সরকার শিশুদের কল্যাণ ও অধিকার সংক্রান্ত বিভিন্ন উদ্যোগ বিশেষ করে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক কনভেনশন, চুক্তি এবং কাঠামো অনুমোদন করেছে। ২০২৫ সালের মধ্যে সব ধরনের শিশুশ্রম নির্মূল করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সরকার। তাই দেশ থেকে শিশুশ্রম নির্মূলে কৌশল ও কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ-২০২২ পরিচালনা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘এটি শিশুশ্রম সংশ্লিষ্ট চতুর্থ জরিপ যা শ্রমজীবী শিশু, শিশুশ্রম এবং বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম তথ্য উপাত্ত সরবরাহ করবে। ২০১৮ সালের অক্টোবরে জেনেভায় অনুষ্ঠিত আইসিএলএস (ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব লেবার স্ট্যাটাটিকস) সম্মেলনে নেওয়া শিশুশ্রম সম্পর্কিত রীতি-পদ্ধতি ও নিয়ম অনুসরণ করে এ জরিপটি পরিচালনা করা হয়েছে।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, সেক্টরভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শিশুশ্রম জরিপ ২০২৩ মূলত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বাস্তবায়নাধীন প্রথম জরিপ। যেখানে সরকার ঘোষিত ৪৩টি ঝুঁকিপূর্ণ সেক্টর হতে পাঁচটি সেক্টর নির্ধারণ করে জরিপটি পরিচালনা করা হয়েছে। জরিপটি সেক্টরভিত্তিক ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশু শ্রমসংশ্লিষ্ট উপাত্ত প্রস্তুত করেছে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অক্টোবর ২০১৮ এ অনুষ্ঠিত ২০তম শ্রম পরিসংখ্যানবিদদের আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলন (আইসিএলএস) সুপারিশ করা মানদণ্ড ও নিয়ম মেনে জরিপটি পরিচালনা করা হয়।

সারাবাংলা/জেজে/এমও

শিশু শ্রমিক শিশুশ্রম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর