যশোরে কাটা পড়বে ২ হাজার গাছ, দরপত্র আহ্বান
৫ মে ২০২৪ ১০:৪৭ | আপডেট: ৫ মে ২০২৪ ১৪:২৩
যশোর: অব্যাহত তাপপ্রবাহের মধ্যে যখন গাছ লাগানোর দাবি জোরালো হচ্ছে, তখন উল্টো যাত্রা করছে যশোরের বন বিভাগ। তারা যশোরের চারটি সড়কের দুই হাজারের বেশি গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সামাজিক বনায়নের এই গাছ কাটার জন্য এরই মধ্যে দরপত্রও আহ্বান করা হয়েছে। এ নিয়ে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো প্রতিবাদ জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত তিন সপ্তাহ ধরে তীব্র ও অতি তীব্র তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত যশোরের জনজীবন। বৃষ্টিহীন খরতাপে পুড়ছে এই অঞ্চল। প্রকৃতির এই বৈরি আচরণের জন্য অনেকগুলো কারণের মধ্যে গাছ কেটে ফেলাও একটি কারণ বলে চিহ্নিত করছেন পরিবেশবাদীরা। এ জন্য তারা বৃক্ষরোপণের উপরেও গুরুত্ব দিয়েছেন।
তবে সবাই যখন গাছ লাগানো দাবি জানাচ্ছে, তখন যশোরের ৪টি সড়কের ২ হাজার ৪৪টি বড় গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সামাজিক বন বিভাগ। গত ২৫ এপ্রিল বন বিভাগ যশোরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম স্বাক্ষরিত দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দু’টি স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সামাজিক বনায়নের আবর্তকাল উত্তীর্ণ বাগান ও অন্য উৎসের বনজদ্রব্য বিক্রির লক্ষ্যে নির্ধারিত শর্তানুসারে দরপত্র আহ্বান করা যাচ্ছে।’
জানা গেছে, যশোর সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর থেকে আন্দুলিয়া পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার সড়কের ২৪৩টি, চাঁচড়া-ভাতুড়িয়া-সাড়াপোল হয়ে তেঁতুলিয়া গ্রাম পর্যন্ত ৯ কিলোমিটারের ৯৭৯টি, কেশবপুর উপজেলার বড়েঙ্গা বাজার থেকে পাচারই বাজার পর্যন্ত ৪ কিলোমিটারে ৫০২টি ও বাঘারপাড়া উপজেলার ধোয়াখোলা বাজার থেকে তালবাড়িয়া পর্যন্ত ২ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশের ৩১০টি বর্ষীয়ান গাছ বিক্রি করা হবে।
এসব গাছের মধ্যে রেইন ট্রি, বকাইন, মেহগনি, সেগুন, বাবলা, খৈয়া বাবলাসহ বিভিন্ন ধরনের গাছ রয়েছে।
যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া এলাকার বাসিন্দা শামীম হোসেন জানান, চাঁচড়া-ভাতুড়িয়া সড়কের দু’পাশে অনেক গাছ থাকায় এই এলাকার পরিবেশ তুলনামূলক শীতল থাকে। সড়কের দু’পাশে সুন্দর পরিবেশ রয়েছে। গাছে অনেক পাখির বাসা রয়েছে। গাছগুলো কেটে ফেলা হলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে।
সামাজিক বন বিভাগ যশোরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম বলেন, ‘গাছগুলো সামাজিক বনায়নের। নির্দিষ্ট আবর্তকাল উত্তীর্ণ হলে এই গাছগুলো কেটে নতুন করে বনায়ন করা হয়। নিয়ম মেনেই গাছ কাটার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
তবে বন বিভাগের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে ‘যশোর রোড উন্নয়ন ও শতবর্ষী গাছ রক্ষা কমিটি’। কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার আজিজুল হক ও সদস্য সচিব জিল্লুর রহমান বিবৃতিতে জানান, বন বিভাগ সামাজিক বনায়নের দুই হাজারের বেশি বর্ষীয়ান গাছ বিক্রির দরপত্র আহ্বান করেছে। তারা বন বিভাগের এই অপরিণামদর্শী উদ্যোগের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। অবিলম্বে দরপত্র আহ্বান বাতিল করার দাবি জানাচ্ছেন। একইসঙ্গে পরিবেশ ও গাছবিধ্বংসীদের বিরুদ্ধে সচেতন মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
সারাবাংলা/এমও