Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যশোর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, মাঠ দখলে নামছে ‘কিশোর গ্যাং’

তহীদ মনি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১১ মে ২০২৪ ২২:৫৫

যশোর: যশোরের অন্য উপজেলায় নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সাড়া না থাকলেও সদর নিয়ে আলাদা মেরুকরণ চলছে। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কেউ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় দলের অভ্যন্তরে অলিখিত প্রভাব বিস্তারের জন্যে সক্রিয় রয়েছেন প্রার্থীদের পক্ষ। ফলে নির্বাচনের মাঠ দখল করাকে সম্মানজনক মনে করছেন নেতৃত্বদানকারীরা।

যদিও ইইভএমএ ভোট হবে, কোনোভাবেই একজনের ভোট অন্যের নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে কে কার অনুসারী সে হিসেবে ভোটের হিসেব কষতে ব্যস্ত সংশ্লিষ্টরা। এ জন্যে ফলাফল নিজেদের অনুকূলে নিতে কেউ কেউ ব্যস্ত। তাই অভ্যন্তরীণ কোন্দলের প্রকাশ্য রূপ না দিয়েও সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মাঠ দখল নিতে ব্যবহার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ‘কিশোর গ্যাং’কে। এ কারণে নির্বাচনের শুরু থেকে আলোচনায় রয়েছে ‘কিশোর গ্যাং’।

বিজ্ঞাপন

নির্বাচনকে ঘিরে নেপথ্যের বড়ভাইয়েরা কিশোর গ্যাং’কে মাঠে নামানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের টার্গেট নির্বাচনি মাঠে সন্ত্রাসের মাধ্যমে আতঙ্ক সৃষ্টি করা; যেন সাধারণ ভোটাররা ভোটকেন্দ্রমুখী না হয়। তবে প্রশাসনও সন্ত্রাস এবং কিশোর গ্যাং মোকাবিলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে। নির্বাচনের মাঠে যে কোনো অপতৎপরতার বিরুদ্ধে প্রশাসন ‘জিরো টলারেন্স’ নিয়ে মাঠে থাকবে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সারাদেশেই এখন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের হাওয়া বইছে। যশোরে প্রথম ধাপে এরইমধ্যে দুটি উপজেলার নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এরপর দ্বিতীয় ধাপে তিনটি উপজেলা এবং তৃতীয়ধাপে আরও তিনটি উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তৃতীয় ধাপে আগামী ২৯ মে যশোর সদর উপজেলার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

বিজ্ঞাপন

যশোর সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান জেলা যুবলীগ সভাপতি মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহিত কুমার নাথ, যুবলীগ নেতা তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু, যুব মহিলা লীগ নেত্রী ফাতেমা আনোয়ার, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল ও যুবলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম জুয়েল।

এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে সদরে মাঠে রয়েছেন সুলতান মাহমুদ বিপুল, কামাল খাঁ, মনিরুজ্জামান, শাহজাহান কবীর শিপলু ও শেখ জাহিদুর রহমান। আর মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা হলেন, জ্যোৎস্না আরা বেগম মিলি, বাশিনুর নাহার ও শিল্পী খাতুন। জেলার হেডকোয়ার্টারখ্যাত ‘সদর’ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে তাই গোটা জেলাজুড়েই নানা আলোচনা চলছে।

সূত্র জানিয়েছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে গত কয়েক মাস ধরেই যশোরে নির্বাচনি আবহ বিরাজ করছে। যদিও বিএনপিসহ বিরোধী কোনো দল নির্বাচনে আসেনি; কিন্তু ক্ষমতাসীনদের প্রার্থীরাই নির্বাচনি মাঠ গরমের চেষ্টা করছেন। সভা, সমাবেশ, গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে তারা জনগণকে নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। তবে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ‘ঘরের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা’ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এর মধ্যে ‘হাইব্রিড, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, কিশোর গ্যাংয়ের গডফাদার, অস্ত্র-মাদকের কারবারিও নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। আর এতে আতঙ্কিত বোধ করছেন নাগরিকেরা।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, যশোর শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় প্রায় অর্ধশত কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। একেকটি গ্রুপে অন্তত ৮ থেকে ১৬ জন করে সদস্য রয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় একাধিক গ্রুপও সক্রিয় রয়েছে। এসব গ্রুপের সাথে জড়িতদের বয়স ১৪ বছর থেকে ২১ বছর পর্যন্ত। বিভিন্ন অপরাধে জড়িত এই কিশোররা দেশি অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। পাশাপাশি চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা এমনকি অপহরণ, বোমাবাজি ও হত্যাকাণ্ডের মতো গুরুতর অপরাধেও জড়িত তারা।

যশোর কোতোয়ালি থানা সূত্রে জানা গেছে, যশোর শহরের ষষ্ঠীতলাপাড়া, পুরাতন কসবা, মুজিব সড়ক, তেঁতুলতলা, রেলগেট, তুলোতলা, রায়পাড়া, শংকরপুর, বকচর, বেজপাড়া, খোলাডাঙ্গা, চাঁচড়া, ভাতুড়িয়া, শংকরপুর বাস টার্মিনাল, রেল রোড, মণিহার, উপশহর, পালবাড়ি, ধর্মতলা, খড়কি, খড়কি কলাবাগান, রেল স্টেশন, বিরামপুর, নীলগঞ্জ, সিটি কলেজপাড়া, বারান্দিপাড়া, পুলেরহাট ও শেখহাটিতে গ্রুপভিত্তিক কিশোর অপরাধী বেশি।

এলাকাভিত্তিক কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছে, মোল্লাপাড়ায় তাসিকুর রাসেল, লোন অফিসপাড়ায় সাকিব চৌধুরী, জেলরোড এলাকায় সুজন ও রাসেল, ঘোপ এলাকায় শামীম, বিমানবন্দরের মোমিন, পুরাতন কসবা ঘোষপাড়ার রিপন, রায়পাড়ার সিফাত সজল, সুপারিবাগান এলাকার রেজওয়ান মিথুন, শংকরপুরের মোবাশ্বের আফ্রিদি, খড়কি পীরবাড়ি এলাকার বর্ষণ, খড়কি কারবালার মুস্তাক, এমএম কলেজ এলাকার হিমেল, মামুন, আরএন রোডের সাব্বির, বেজপাড়ার সাগর দত্ত, নীলগঞ্জের সুমন অধিকারী, উপশহর ই ব্লকের জাবের জাহিদ, বকচর স্কুল এলাকার মিজান, পুরাতন কসবা নিরিবিলি এলাকার রাসেল, বকচর আালামীন মসজিদ এলাকার মাহমুদ ইমরান, হাসান ওরফে খোড়া হাসান, বকচর স্কুলমাঠ এলাকার রমজান খান, কচুয়া নিমতলী এলাকার ইমরান আলী। সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের এক প্রার্থী এদের নেপথ্যের বড়ভাই বলে অভিযোগ রয়েছে। এদের অনেকই বিভিন্ন সময়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে, চুরি ছিনতাই, বোমাবাজি, ছুরিকাঘাতসহ নানা অভিযোগ রয়েছে, খুনের মামলার আসামিও অনেকেই। এলাকাভিত্তিক দ্বন্দ্বে এদেরকেই আগে মাঠে দেখা যায় দেশীয় অস্ত্রসহ, কারো কারো হাতে থাকে আগ্নেয়াস্ত্রও।ে তবে মাথার উপর আশীর্বাদ ও বড় ভাইয়ের ছায়া থাকায় তারা ছাড়া বা জামিন পেয়ে আবারও বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যশোরে সন্ত্রাসী তৎপরতা, খুন, চাঁদাবাজি, মাদকের কারবারসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ওই অর্ধশত ‘কিশোর গ্যাং’য়ের নাম জড়িয়ে রয়েছে। এই কিশোর গ্যাংয়ের নেপথ্যের একাধিক নিয়ন্ত্রণকারী এই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন বলে সূত্রের দাবি। এ কারণে এই প্রার্থীরা নির্বাচনী পরিবেশ ঘোলাটে করতে কিশোর গ্যাং’কে মাঠে নামানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। তাদের টার্গেট, নির্বাচনি মাঠে সন্ত্রাসের মাধ্যমে আতঙ্ক সৃষ্টি করা; যাতে সাধারণ ভোটাররা ভোটকেন্দ্রমুখী না হয়।

তবে প্রশাসন সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনি প্রচারণা বা ভোটগ্রহণের সময় কোনো ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বা অপতৎপরতা প্রশাসন বরদাস্ত করবে না। নির্বাচনী মাঠ সন্ত্রাসমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ রাখতে তারা বদ্ধপরিকর। যেকোনো অপতৎপরতার বিরুদ্ধে প্রশাসন ‘জিরো টলারেন্স’ নিয়ে মাঠে থাকবে।

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘যশোর সদরের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের সবগুলো টিম সার্বক্ষণিক অভিযান পরিচালনা করছে। যাদের বিরুদ্ধে অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে, তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। অপরাধ প্রস্তুতির খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ সেখানে অভিযান চালাচ্ছে।’

ওসি আরও বলেন, ‘কিশোর গ্যাং বা কোনো সন্ত্রাসী চক্রের নির্বাচনী মাঠে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া হবে না। যে কোনো অপতৎপরতা পুলিশ কঠোরভাবে দমন করবে।’

সারাবাংলা/একে

আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন কিশোর গ্যাং যশোর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর