আসছে বাজেট ভর্তুকি ১ লাখ কোটি টাকার নিচে নামিয়ে আনা হচ্ছে
১২ মে ২০২৪ ২০:৪০
ঢাকা : আগামী ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেটে বিভিন্ন খাতে ভতুর্কির পরিমাণ ১ লাখ কোটি টাকার নিচে নামিয়ে আনতে চায় সরকার। সে জন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানির খাতের ভর্তুকি কমিয়ে এনে দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এই লক্ষ্যে আগামী অর্থবছরে বিভিন্ন খাতে দেওয়া সরকারের ভতুর্কির পরিমাণ ৯০ হাজার কোটি টাকায় মধ্যে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে ভতুর্কির আকার ছিল ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। পরে সংশোধিত বাজেটের এর পরিমাণ কমিয়ে ৯৮ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রলালয় অর্থ বিভাগ সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, ভর্তুকি কমিয়ে আনলেও আগামী অর্থবছরের সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে বিদ্যুৎ খাতে। এর পরিমাণ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এরপরই রয়েছে কৃষি খাত। এ খাতে ভর্তুকির প্রস্তাব করা হয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকা। আমদানিকৃত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) খাতে ভর্তুকি দেওয়া হবে ৭ হাজার কোটি টাকা। খাদ্য খাতেও ভতুর্কি দেওয়া হবে ৭ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া রফতানি প্রণোদনায় ৭ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা এবং রেমিট্যান্স প্রণোদনায় ভতুর্কি বাবদ ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হবে।
জানা যায়, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটি’র বৈঠকে ভর্তুকি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে ভর্তুকির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চাপের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত বিদ্যুৎ, সার ও পানির দাম বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
বৈঠকে বলা হয়েছে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ভর্তুকির এত চাপ অর্থনীতি সহ্য করতে পারবে না। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়ানোর বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখানো হলেও এ মুহূর্তে সারের দাম বাড়ানোর সম্ভব নয় বলে সভায় বক্তারা অভিমত ব্যক্ত করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো ও প্রণোদনা খাতে ব্যয় বরাদ্দ কমিয়ে ভর্তুকি রাশ টেনে ধরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সূত্রমতে, ফলে আগামী বাজেটে বিদ্যুৎ ও এলএনজিসহ পেট্রোলিয়ামের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হবে। এরইমধ্যে ধাপে ধাপে বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর কাজটি করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ খাতে আগামী অর্থবছরে ভর্তুকি ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের বিষয়ে সূত্র জানায়, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের চাহিদার বিপরীতে ভর্তুকি অর্থ নিয়মিত পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এরইমধ্যে ভর্তুকি অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে ছয় মাস পিছিয়ে আছে সরকার। তাই ‘ক্যারি-অভার’ বা বকেয়া অর্থ পরিশোধের জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত প্রতি বছরই ভর্তুকির পরিমাণ বাড়ছে। গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ ছিল ৪৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর আগে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ছিল ৪২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৩৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
আগের অর্থবছরে (২০১৭-২০১৮) বাজেটে ভর্তুকি, নগত সহায়তা ও প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ ছিল ২৮ হাজার ৪৫ কোটি টাকা। এটি জিডিপি’র ১ দশমিক ৩ ভাগ। এর আগের অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা ছিল ২৬ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা, এটি জিডিপি’র ১ দশমিক ২ ভাগ। যদিও সংশোধিত বাজেটে এ ভর্তুকির পরিমাণ ২৩ হাজার ৮৩০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
এর আগে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, আগামী ৬ জুন (বৃহস্পতিবার) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ করা হবে। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এই বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন। এটি হবে বর্তমান অর্থমন্ত্রীর প্রথম এবং আওয়ামীলীগ সরকারের টানা চতুর্থ মেয়াদের প্রথম বাজেট। এই বাজেটের সম্ভাব্য আকার হচ্ছে ৮ লাখ কোটি টাকা।
সারাবাংলা/জিএস/একে