Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ব্যয়-মেয়াদ বাড়িয়েও শেষ হচ্ছে না ‘বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন’

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট 
১৩ মে ২০২৪ ০৮:৩৮

ঢাকা: ‘বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প’ যথাসময়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। প্রায় ৭ বছর পার হলেও এর বাস্তব অগ্রগতি ৫৭ শতাংশ এবং চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় ৮১৪ কোটি ২৭ লাখ ১০ হাজার টাকা। সেই সঙ্গে বেড়েছে ব্যয় ও মেয়াদ দুটোই। সর্বশেষ নির্ধারিত সময়  ২০২৫ সালের জুনে বাস্তবায়ন শেষ করা নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়। এখন আবার ২০২৭ সালের জুনে বাস্তবায়নের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

‘বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, চট্টগ্রাম জোন (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পে বিরাজ কছে এমন চিত্র।

সূত্র জানায়, প্রকল্পের মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ২ হাজার ৫৫১ কোটি ৯০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। সেখান থেকে প্রথম সংশোধনীতে হয়েছে ২ হাজার ৬০০ কোটি ৬১ লাখ ২৩ হাজার টাকা। এখন আবার দ্বিতীয় সংশোধনীতে ১ হাজার ৭৮৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বেড়ে মোট ব্যয় ৪ হাজার ৩৮৬ কোটি ১৬ লাখ ২৯ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা ও ডলার সংকটের ধাক্কায় প্রকল্পে বিরাজ করছে ধীরগতি। এর দ্বিতীয় সংশোধনীর জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। আগামী ১৩ মে অনুষ্ঠিত হবে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। সেখানে নানা বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হবে। ওই সভায় সভাপতিত্ব করবেন পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) মোস্তাফিজুর রহমান।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র সারাবাংলাকে জানায়, করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে না উঠতেই ডলার সংকটের কারণে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় দরপত্র দিয়েও ঠিকাদাররা কাজ করতে পারেননি। এর ফলে অতিরিক্ত সময় যাচ্ছে।

প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি সম্পর্কে বলা হয়েছে, অনুমোদিত প্রথম সংশোধিত প্রকল্পে প্যাকেজ নং জিডি-১ এর আওতায় টার্ন-কী কাজের ৪টি লটে ২২টি ৩৩/১১ কেভি নতুন উপকেন্দ্র, ৭টি বিদ্যমান উপকেন্দ্রের আপগ্রেডেশন, গ্রীড উপকেন্দ্র ৩৬টি ৩৩ কেভি বে নির্মাণ এবং ৬৫ কিলোমিটার আন্ডার গ্রাউন্ড ক্যবল স্থাপন সংস্থান আছে। এই ৪টি লটে সর্বনিম্ন দরদাতার দর ও বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার অনুসারে প্রকল্পটি দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাবে প্রকল্পের মোট ব্যয় বৃদ্ধি পাবে ১ হাজার ৭৮৫ কোটি ৮৫ লাখ ৫৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে মালামালের মূল্য বৃদ্ধির কারণে ৯৬৯ কোটি ৮ লাখ ৬৯ হাজার টাকা এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বৃদ্ধির কারণে ৮১৬ কোটি ৪৬ লাখ ৩৭ হাজার টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।

অনুমোদিত প্রথম সংশোধিত প্রকল্পের তুলনায় দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাবে ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র (নতুন) অঙ্গে ৫৬১ কোটি এক লাখ টাকা, ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র (আপগ্রেডেশন) অঙ্গে ১৮৫ কোটি ৫৬ লাখ ৪২ হাজার টাকা, বে-এক্সটেনশন অঙ্গে ২৩ কোটি টাকা, ৩৩ কেভি আন্ডারগ্রাউন্ড লাইন অঙ্গে ৩২২ কোটি ৫৪ লাখ ৬৭ হাজার টাকা, রাজস্ব খাতে ৬ কোটি ৩ লাখ ৮৬ হাজার টাকা, কাস্টমস ডিউটি, কর, ও ট্যাক্স অঙ্গে ৩৩৪ কোটি ৮২ লাখ ৩৭ হাজার টাকা, নির্মাণকালীন সুদ অঙ্গে ৭৮ কোটি ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা, ৩৩ কেভি লাইন (নতুন) অঙ্গে এক কোটি ৩৮ লাখ ৪৬ হাজার টাকা, ৩৩ কেভি লাইন (রিনোভেশন) অঙ্গে ৪৬ লাখ  ৮৪ হাজার টাকা, ১১ কেভি লাইন (নতুন) অঙ্গে ৫ কোটি ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ১১ কেভি লাইন (রেনোভেশন) অঙ্গে ৮৬ লাখ টাকা, ১১/০.৪ কেভি লাইন (নতুন) অঙ্গে ৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, ১১/০.৪ কেভি লাইন (রেনোভেশন) অঙ্গে এক কোটি ১৯ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ০.৪ কেভি লাইন (নতুন) অঙ্গে ৩ কোটি ৫৫ লাখ ৮১ হাজার টাকা, ০.৪ কেভি লাইন (রিনোভেশন) অঙ্গে এক কোটি ৮৪ লাখ ২৭ হাজার টাকা, প্রাইস কনটিনজেন্সি অঙ্গে ৭.৫ শতাংশ হারে ২৩২ কোটি ৯২ লাখ ৭৮ হাজার টাকা ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।

অন্যদিকে অনুমোদিত প্রথম সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবের (ডিপিপি) তুলনায় দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাবে ডরমেটোরি অঙ্গে ৬৫ হাজার টাকা, ০.৪ কেভি ২৫০ কেভিএ (নতুন) বিতরণ ট্রান্সফরমার অঙ্গে ৭ কোটি ৫৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা ব্যয় কমেছে।

প্রথম সংশোধিত ডিপিপির প্যাকেজ নং জিডি-১ এর আওতায় টার্ন-কী কাজের ৪টি লটে ২২টি ৩৩/১১ কেভি নতুন উপকেন্দ্র ৭টি বিদ্যমান উপকেন্দ্রের আপগ্রেডেশন, গ্রিড উপকেন্দ্র ৩৬টি ৩৩ কেভি বে নির্মাণ এবং ৬৫ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যবল স্থাপন (ডাবল সার্কিট) করার কথা বলা আছে।

প্যাকেজের আওতায় টার্ন-কী কাজের জন্য আহ্বান করা ও মূল্যায়িত আন্তর্জাতিক দরপত্রের মূল্য প্রাক্কলিত মূল্য থেকে অনেক বেশি হওয়ায় গত বছরের ২৯ মে অনুষ্ঠিত বিউবোর ১৯৯৬তম বোর্ড সভায় এই দরপত্রগুলো বাতিল করে বিদ্যমান বাজার মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পুনঃপ্রাক্কলন প্রস্তুত করা পুনঃদরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

প্রকল্পের উপর গত বছরের ১১ জুলাই অনুষ্ঠিত প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটির সভায় বিদ্যুৎ বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুসারে দাপ্তরিক পুনঃপ্রাক্কলন প্রস্তুত করে গত বছরের ২ আগস্ট অনুষ্ঠিত বিউবোর ২০০৫তম বোর্ডসভায় উপস্থাপন করে অনুমোদনের পর গত বছরের ৩ আগস্ট প্যাকেজ নং জিডি-১ এর আওতায় টার্ন-কী কাজের ৪টি লটের পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হয়।

দাখিল করা দরপত্রগুলোর কারিগরি মূল্যায়ন সমাপ্ত শেষে বর্তমানে আর্থিক মূল্যায়ন করা হয়েছে। ৪টি লটের পুনঃদরপত্রে প্রাপ্ত সর্বনিম্ন দর অনুমোদিত প্রথম সংশোধিত প্রকল্পের সংস্থান থেকে বেশি হওয়ায় সর্বনিম্ন দরদাতাদের সঙ্গে টার্ন-কী চুক্তি স্বাক্ষরের আগে ডিপিপির সংশোধন, ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন ও চুক্তি স্বাক্ষর পর্যন্ত আরও প্রায় ৫ থেকে ৬ মাস এবং চুক্তি স্বাক্ষরের পর টান-কী কাজের মালামালের এলসি খুলতে আরও প্রায় ৩ থেকে ৪ মাস সময় লাগতে পারে।

টার্ন-কী কাজগুলোর বাস্তবায়নকাল ৭৩০ দিন, যার শুরু এলসি ওপেন করার তারিখ থেকে হবে। এ পরিস্থিতিতে প্রকল্পের মেয়াদ আরও ২ বছর বৃদ্ধি অর্থাৎ ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত প্রস্তাব করা হয়েছে।

সারাবাংলা/জেজে/এমও

বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা ব্যয়-মেয়াদ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর