বাসে শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানি, ৫ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ
১৩ মে ২০২৪ ২৩:৪৫ | আপডেট: ১৪ মে ২০২৪ ০১:২৭
যশোর: যাত্রীবাহী বাসে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) এক নারী শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানির ঘটনায় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা তারা সড়ক অবরোধ করে রাখলে ওই সড়ক দিয়ে চলাচল ব্যাহত হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জড়িতদের শাস্তির আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন।
সোমবার (১৩ মে) দুপুরের দিকে যবিপ্রবির প্রধান ফটকের সামনে যশোর চৌগাছা সড়কে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন। পরে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার (১২ মে) যশোর থেকে চৌগাছাগামী লোকাল বাসে করে যবিপ্রবির ওই নারী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছিলেন। পথে চুড়ামনকাটি থেকে মাসুদ নামে এক তরুণ বাসটিতে ওঠেন। তিনি ওই শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়ান এবং একপর্যায়ে তার শরীর স্পর্শ করেন। ওই শিক্ষার্থী নিষেধ করলেও মাসুদ কথা শোনেননি। এ নিয়ে বাসের মধ্যেই যাত্রীরা এক দফা মীমাংসার চেষ্টা করেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রোববারই মাসুদের নামে যবিপ্রবি প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। এ সময় ভুক্তভোগীর নিজ বিভাগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করার জন্য প্রশাসনিক ভবনে অবস্থান করলে সেখানে যবিপ্রবি উপাচার্য ড. মো. আনোয়ার হোসেন সেখানে উপস্থিত হন। তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীকে গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, এরপর ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও অভিযুক্ত গ্রেফতার না হওয়ায় সোমবার দুপুর থেকে আবারও বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক আটকে দেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশ প্রশাসন একাধিকবার কথা বলেও বিক্ষোভ বন্ধ করাতে পারেননি। শিক্ষার্থীরা এ সময় ছয় দফা দাবিতে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো— শ্লীলতাহানির ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে অপরাধীর বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; চৌগাছা বাস মালিক সমিতিকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে; যশোর-চৌগাছা রুটের সব বাসের চালক ও সহকারীকে যাত্রী নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে (বিশেষত নারী ও শিশু); ওই রুটের সব বাসে সামনের সারিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসন নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে; এবং ভবিষ্যতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে যশোর-চৌগাছা বাস মালিক সমিতিকে পূর্ণ দায়ভার গ্রহণ করতে হবে।
এসব দাবি পূরণ না করলে যবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতি ঘণ্টায় শহর থেকে (চাঁচড়া, মনিহার) শাটল বাস সার্ভিস ব্যবস্থা চালু করতে হবে এবং অতিদ্রুত এ দাবি কার্যকর করতে হবে। এই ছয় দফা দাবি পূরণ না হলে শিক্ষার্থীরা কঠোর আন্দোলন করবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন।
পরে বিকেলে সাড়ে ৫টার দিকে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন ঘটনার বিচারের আশ্বাস দেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা অবরোধ কর্মসূচি তুলে নেন।
শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, শাটল বাস দেওয়ার সক্ষমতা এ মুহূর্তে আমাদের নেই। তবে অভিযুক্ত যেখানেই থাকুক, তাকে গ্রেফতার করা হবে। যশোর-চৌগাছা বাস মালিক সমিতির সঙ্গে কথা বলে আমরা শিক্ষার্থীদের অন্য দাবিগুলো পূরণের ব্যবস্থা করব।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। অভিযুক্তকে আটকের জন্য পুলিশ কাজ করছে।
সারাবাংলা/টিআর
বাসে শ্লীলতাহানি যবিপ্রবি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানি