বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা অপরিবর্তিত থাকছে
১৬ মে ২০২৪ ১০:০২
ঢাকা: মুদ্রাস্ফীতির কারণে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় প্রতিনিয়ত বাড়লেও আগামী অর্থ বছরের (২০২৪-২৫) প্রস্তাবিত বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ছে না। চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণীর করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা আগামী বাজেটেও বহাল থাকছে। তবে করদাতা হয়রানি কমাতে আয়কর রিটার্ন অ্যাসেসমেন্টের বিধান বাতিল করা হচ্ছে। এ জন্য বাজেটে আয়কর আইনে বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এ সিদ্ধান্তের ফলে ব্যক্তি ও কোম্পানি-দুই শ্রেণির করদাতাই কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন। তবে উচ্চ আয়ের করদাতা অর্থাৎ ধনী শ্রেণির কাছ থেকে আরও কর আদায়ে সর্বশেষ স্তরের করহার ২৫ থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ শতাংশ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। অর্থমন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্র থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
সূত্র অনুযায়ী, বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়লে বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠী আয়করের আওতার বাইরে চলে যাবে। মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, সেইসঙ্গে আনুপাতিক হারে মানুষের আয়ও বেড়েছে। তাই সীমা বাড়ানোকে যৌক্তিক মনে করছে না সংস্থাটি। ফলে আগামী অর্থবছরের (২০২৪-২৫) প্রস্তাবিত বাজেটেও ব্যক্তিশ্রেণীর করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা অপরিবর্তিত রাখা হচ্ছে।
সর্বশেষ চলতি অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা তিন লাখ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা করা হয়েছে। এর আগে ২০২০-২১ সালে করমুক্ত আয়ের সীমা আড়াই লাখ থেকে বাড়িয়ে তিন লাখ এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দুই লাখ ২০ লাখ হাজার থেকে বাড়িয়ে আড়াই লাখ টাকা করা হয়।
জানা গেছে, বর্তমানে নারী করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা চার লাখ টাকা, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের করদাতাদের চার লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের করদাতাদের করমুক্ত সীমা পাঁচ লাখ টাকা। আগামী বাজেটেও তাদের করমুক্ত আয়সীমায় কোনো পরিবর্তন আসছে না। ফলে উল্লেখিত করমুক্ত আয়ের সীমার ওপর বাড়তি আয়ের জন্য নির্ধারিত হারে আয়কর দিতে হয়। তবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বাসিন্দাদের পাঁচ হাজার টাকা, অন্য সিটি করপোরেশন এলাকার ক্ষেত্রে চার হাজার টাকা এবং অন্য জেলা, উপজেলা ও গ্রামাঞ্চলের করদাতাদের জন্য তিন হাজার টাকা ন্যূনতম আয়কর ধার্য আছে। অবশ্য রাজস্ব বাড়াতে বিত্তশালীদের কাছ থেকে বাড়তি কর আদায়ে পরিকল্পনা নিয়েছে এনবিআর।
বর্তমানে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ। বছরে সাড়ে ১৬ লাখ টাকার বেশি আয় থাকলে ২৫ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হয়। এটিকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হচ্ছে। অর্থাৎ বিত্তশালী বা বড় চাকরিজীবীদের বাড়তি কর দিতে হবে।
উল্লেখ্য, আগামী ৬ জুন (বৃহস্পতিবার) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ করা হবে। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এই বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন। এটি হবে বর্তমান অর্থমন্ত্রীর প্রথম এবং আওয়ামীলীগ সরকারের টানা চতুর্থ মেয়াদের প্রথম বাজেট। এই বাজেটের সম্ভাব্য আকার হতে পারে সাত লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা টাকা। চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২০২৪) বাজেটের আকার সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। ফলে আগামী বাজেট চলতি বাজেট থেকে ৩৫ হাজার ১১৫ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি। আগামী বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা (অনুদান ছাড়া)।
এছাড়াও রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরের আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হতে পারে চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৫ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে চার লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে।
সারাবাংলা/জিএস/ইআ