Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘এক বিলিয়ন ডলার’ বিনিয়োগ নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে এল আবুধাবি পোর্ট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৬ মে ২০২৪ ২১:০৭

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বন্দরের বিকল্প বন্দর হিসেবে বিবেচিত বে-টার্মিনাল নির্মাণে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হলো আবুধাবি পোর্ট গ্রুপ। বিশ্বের খ্যাতনামা এ বন্দর কর্তৃপক্ষ বে-টার্মিনালের জন্য এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। একই প্রকল্পে সিঙ্গাপুর পোর্ট অথরিটি ও দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড ইতোমধ্যে দেড়’শ কোটি করে তিন’শ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে বছরজুড়ে আলোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার (১৬ মে) চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আবুধাবি পোর্ট গ্রুপের ‘ননবাইন্ডিং’ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। বিকেলে ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেলে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্‌মুদ চৌধুরীর উপস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েল ও আবুধাবি পোর্ট গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফ আল মাজরুই সমঝোতা স্মারকপত্রে স্মাক্ষর করেন।

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, বিদেশি বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ তার সব বন্দরের জানালা খুলে দিয়েছে। যে কেউ বিনিয়োগ করতে এলে সর্বোচ্চ সুবিধা দেয়া হবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমার শেষ প্রান্তে সিইপিজেডের পেছনে সাগরপাড় থেকে সাগরিকায় জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের অদূরে রাসমনিঘাট পর্যন্ত প্রায় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় ৯০০ একর ভূমিতে এই টার্মিনাল গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বে টার্মিনাল প্রকল্পের জন্য ৬৬ দশমিক ৮৫ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি ইতোমধ্যে অধিগ্রহণ করা হয়েছে। প্রায় ৫০১ একর খাস জমিও বরাদ্দের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। গত ২ মে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ৫০১ একর খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়ার জন্য প্রতীকী মূল্য হিসেবে বন্দরের কাছে তিন কোটি তিন টাকা পরিশোধের জন্য চিঠি দিয়েছে। একইভাবে আরও ৩০২ একর খাসজমি বরাদ্দের প্রক্রিয়া চলছে।

২০১৬ সালে বে টার্মিনাল নির্মাণের কারিগরি, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়। সমীক্ষায় কারিগরি ও অর্থনৈতিকভাবে এ টার্মিনাল গড়ে তোলার উপযুক্ত বলে মত দেওয়া হয়েছিল। এর প্রায় সাত বছর পর প্রণীত বে-টার্মিনালের মাস্টারপ্ল্যান ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। এর মধ্য দিয়ে বে-টার্মিনাল নির্মাণে মূল অগ্রগতি হয়।

মাস্টারপ্ল্যানে ১ হাজার ২২৫ মিটার দীর্ঘ দুটি কনটেইনার টার্মিনাল এবং দেড় হাজার মিটার দীর্ঘ একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনালসহ মোট তিনটি টার্মিনাল রয়েছে। তিনটি টার্মিনালের মোট দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৯৫ কিলোমিটার। এতে মোট ১১টি জেটি রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, আরব আমিরাতের আবুধাবি পোর্টস গ্রুপ বে-টার্মিনাল প্রকল্পের মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণে বিনিয়োগ এবং অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করবে। টার্মিনালটি চট্টগ্রাম বন্দর এবং আবুধাবী পোর্টস গ্রুপ যৌথভাবে নির্মাণ করবে। তবে কী পরিমাণ বিনিয়োগ আবুধাবি পোর্ট গ্রুপ করবে, সেটার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়নি।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ১ হাজার ২২৫ মিটার দীর্ঘ দুটি কনটেইনার টার্মিনালের একটিতে সিঙ্গাপুর পোর্ট অথরিটি এবং অপরটি দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড অর্থায়ন করার প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে। আবহাওয়া এবং সাগরের বড় বড় ঢেউ থেকে রক্ষা করতে একটি ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রেক ওয়াটার বা ঢেউনিরোধক বাঁধ নির্মাণ করা হবে, যাতে বিনিয়োগের প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

বন্দরের কর্মকর্তারা বলছেন, বে টার্মিনাল থেকে বন্দরের বহির্নোঙ্গরের দূরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ১০ থেকে ১২ মিটার ড্রাফটের ৬ হাজার কনটেইনার বহন ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ নোঙ্গর করা সম্ভব হবে। বন্দরের বিদ্যমান অবকাঠামোতে জেটিতে সর্বোচ্চ ১৮০০ একক ধারণক্ষমতার কনটেইনার জাহাজ ঢুকতে পারে। এখন বন্দরে জোয়ার-ভাটার ওপর ভিত্তি করে জাহাজগুলো জেটিতে ভেড়ে। কিন্তু বে টার্মিনালে ২৪ ঘণ্টাই জাহাজ ভিড়তে পারবে।

বছরে ৫০ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ২০২৬ সালে বে-টার্মিনাল অপারেশনে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে বন্দরের কর্মকর্তারা জানান।

সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বে-টার্মিনাল নির্মাণ হলে ২৪ ঘন্টা জাহাজ আসা-যাওয়া করবে। জোয়ার-ভাটার জন্য আর অপেক্ষা করতে হবে না। তখন চট্টগ্রাম বন্দর অন্য ধরনের উচ্চতায় চলে যাবে। বে-টারমিনালের সাথে রোড, রেলওয়ে কানেকটিভিটি থাকবে। পণ্য পরিবহন সহজলভ্য হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমরা মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণ কাজ শুরু করতে চাই। শুধুমাত্র আবুধাবি বন্দরের জন্য নয়, সবার জন্য আমাদের জানালা খোলা আছে। দেশের যে কোন বন্দরে বিনিয়োগের জন্য সব ধরনের সুযোগ সুবিধা আমরা দেব।’

চট্টগ্রাম বন্দর গত ১৫ বছরে আন্তর্জাতিক বন্দরের সক্ষমতা অর্জন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মোংলা বন্দরের আপগ্রেডেশন হচ্ছে। মোংলাও চট্টগ্রাম বন্দরের মতো সক্ষমতা অর্জন করবে। পায়রা বন্দরে নির্মাণাধীন জেটিতে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভিড়েছে। মাদার ভেসেলে পণ্য পরিবহনের জন্য আমাদের কলম্বো ও সিঙ্গাপুর বন্দরের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়।’

‘কিন্তু এখন মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মিত হচ্ছে। এতে কলম্বো-সিঙ্গাপুরের ওপর নির্ভরশীলতা কমে যাবে। মাতারবাড়ি বন্দর আঞ্চলিক হাব-এ পরিণত হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনার জন্য সৌদিআরবের রেড সী গেটওয়ে টার্মিনালের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। শিগগির কার্যক্রম শুরু হবে।’

অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন সচিব মোস্তফা কামাল, বাংলাদেশে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লা আলী আব্দুল্লা কাসিফ আল মৌদি, আবুধাবি পোর্টস গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল অফিসের রিজিওনাল চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার আহমেদ আল মুতায়া এবং তাদের এদেশীয় প্রতিনিধি মেসার্স সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার এম রুহুল আমিন উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/আরডি/এনইউ

টপ নিউজ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

দু’দিনে ভারতে ৯৯ টন ইলিশ রফতানি
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৩৪

সম্পর্কিত খবর