রাবিতে মাদক সেবনে বাধা দেওয়া নিয়ে মারামারি, আহত ৩ শিক্ষার্থী
১৭ মে ২০২৪ ০৯:০৭
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) চারুকলায় মাদক সেবনকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে তিনজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। মাদক সেবনে অভিযুক্তরা রাবি ছাত্রলীগের কর্মী।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) বিকেলে রাবির চারুকলার এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীরা হলেন— বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সৌরভ শেখ বন্ধন, গ্রাফিক ডিজাইন ও কারুশিল্প বিভাগের ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান পুলক এবং পেইন্টিং, ওরিয়েন্টাল আর্ট ও প্রিন্টমেকিং বিভাগের ২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অপু।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ঘটনায় জড়িতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের মুক্তমঞ্চের পেছনে গাঁজা সেবন করতে যান ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী সৌরভ শেখ বন্ধন ও তার দুই বন্ধু। এ সময় চারুকলা অনুষদের কিছু শিক্ষার্থী তাদের বাধা দেন। একপর্যায়ে তারা বাগ্বিতণ্ডা পেরিয়ে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, সৌরভ শেখ বন্ধনের মাথায় হেলমেট দিয়ে আঘাত করেন মেহেদী হাসান পুলক। এতে বন্ধনের মাথা কেটে গেলে রক্তপাত হয়। আহত অবস্থায় বন্ধন ফোন করে তার বন্ধুদের ডেকে নেন। তার ডাকে ১৫/২০ জন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। তারা রফিকের দোকানে অবস্থানরত পুলকের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকেন। এ সময় অপু ঘটনাটি জানতে চান এবং তাদের মধ্যে মীমাংসা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু বন্ধন ও তার বন্ধুরা পুলক-অপু দুজনকেই মারধর করেন, অপুর গাড়ি ভাঙচুর করেন। তাদের বিরুদ্ধে দোকানের ক্যাশ বাক্স থেকেও টাকা নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন দোকানি রফিক।
জানা গেছে, বন্ধন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মী। তিনি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী। অন্যদিকে পুলক বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট টিমের অধিনায়ক।
জানতে চাইলে মেহেদী হাসান পুলক বলেন, তারা চারুকলার মুক্তমঞ্চের পেছনে বসে গাঁজা সেবন করছিল। আমি আর অপু ভাই তাদের মানা করলে তারা আমার সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি শুরু করে। একপর্যায়ে ওরা আমকে মারধর করে। মারামারি করতে করতে আমরা পাশের রফিক ভাইয়ের দোকানে চলে যাই। পরে আমি সবাইকে ফোন দিয়ে আসতে বলি। এর মধ্যেই বন্ধনরা বাঁশ-লাঠি হাতে প্রায় ৪০/৫০ জন জড়ো হয়ে রফিক ভাইয়ের দোকানে আমাকে মারধর শুরু করে। অপু ভাইকেও মারধর করে। অপু ভাইয়ের গাড়ি ভাঙচুর করে।
পুলক আরও বলেন, আমি ফোন করে রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গালিব ভাইকেও আসতে বলি। তাদেরও বলেছি, গালিব ভাইয়েরা আসছেন। তারা এলে কথা বলি। কিন্তু তারা শোনেনি। তারা মারধর করতে থাকে। তারপর চিকিৎসার জন্য মেডিকেলে এসেও নামতে পারছিলাম না। ভাইয়েরা এলে তারপর চিকিৎসা নিতে পেরেছি।
জানতে চাইলে গাঁজা খাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে সৌরভ শেখ বন্ধন বলেন, চারুকলায় অবস্থানকালে হঠাৎ ক্যাম্পাসের কয়েকজন এসে বলে, ‘তোরা কারা? কী করতে এসেছিস এখানে?’ আমরা নিজেদের পরিচয় দেওয়ার পর তাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। তারপর সেখানে অপু ভাই ও পুলক ভাই উপস্থিত হয়। তারা আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। আমার কাপড় ধরে টানাটানি করেন এবং চড়-থাপ্পর দেন। আমার জামাও ছিঁড়ে যায়। তখন তাদের মধ্যে একজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করে।
এদিকে দোকানি রফিক বলেন, পলক ও অপু আমার দোকানে বসে ছিল। কিছুক্ষণ পর কয়েকটি ছেলে এসে তাদের জিজ্ঞাসা করে, তারা কোন সেশন। অপু বলল মাস্টার্স, আর পুলক ১৭-১৮ সেশন। এ কথা বলতেই তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং মারতে শুরু করে। মারামারির একপর্যায়ে তারা আমার দোকানের জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। ক্যাশ বাক্সে ছয় হাজার টাকার মতো ছিল। সেগুলোও লুট করে নেয়।
জানতে চাইলে রাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হক বলেন, বিষয়টি শোনার পর আমি দুজন সহকারী প্রক্টরকে সেখানে পাঠিয়েছিলাম। তারা আহতদের বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে প্রক্টর দফতরে নিয়ে আসেন। পরে দুপক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি সমাধান করেছি। মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
রাবি চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, আমি অফিসের কাজে ব্যস্ত ছিলাম। ঘটনা জেনে এখানে আসার পর শুনি, কয়েকজন নাকি বসে গাঁজা খাচ্ছিল। আমাদের কিছু ছাত্র এখানে বসা ছিল। তারা গাঁজা খেতে নিষেধ করাতে এখানে বাগবিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কি হয়। বিষয়টি প্রক্টর স্যারকে জানাই এবং উপউপাচার্য স্যারকে অবগত করি। তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়েছেন।
সারাবাংলা/টিআর