ইউপি চেয়ারম্যানের জামিন হয়নি, জেলে গেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ
১৯ মে ২০২৪ ২১:০২
মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি মো.গোলজার হোসেনের উপর হামলার মামলায় হোসেন্দি ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠুর জামিন নামঞ্জুর করে এবং জেল গেটে এনে জিজ্ঞেসাবাদের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আজ রোববার(১৯ মে) বিকেলে ৪ টার দিকে গজারিয়া আমলি আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহীদুল ইসলাম এ আদেশ দেন।
এর আগে রোববার (১৯ মে) দুপুরে সাংবাদিক গোলজার হোসেনের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে প্রধান আসামি মনিরুল হক মিঠুকে আদালতে তোলে পুলিশ। আসামি ও বাদীর উপস্থিতিতে শুনানি হয়।আসামী পক্ষের ১০-১২ জন আইনজীবী নানা যুক্তি দেখিয়ে আদালতের কাছে আসামি রিমান্ড বাতিল করে জামিন চায়। শুনানি শেষে পর্যালোচনা করে পরবর্তীতে বিকাল ৪ টার দিকে জামিন না মঞ্জুর করে একদিনের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেল গেটে এনে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন বিচারক।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক গোলজার হোসেন মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি। অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠু উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা আ.লীগের সভাপতি আমিরুল হকের (আনারস) পক্ষের হয়ে কাজ করছিলেন।
গত ৮ মে প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে নির্বাচনে হোসেন্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠু, তাঁর ভাই গাজীপুর আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইকবাল হক ও ভাতিজা তানভীর হকরা ওই ইউনিয়নের ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করতে কেন্দ্রের বাইরে জড়ো হচ্ছিলেন । ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্য সোহেল রানা সবাইকে সরে যেতে বলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে চেয়ারম্যান মনিরুল হকের নির্দেশে সোহেলকে মারধর শুরু করেন তার ভাতিজা তানভীর এবং তাদের লোকজন।
ওই ঘটনার সময় পাশ থেকে ছবি ও ভিডিও করছিলেন গোলজার হোসেন। পরে তারা গোলজারের ওপর হামলা করেন। তার মুঠোফোন, পকেটে থাকা টাকা, আইডি ও পর্যবেক্ষক কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে মারধর করতে থাকেন। অন্য সাংবাদিকেরা এসে তাকে উদ্ধার করেন। পরে সাংবাদিকেরা ভোটকেন্দ্রের ভেতর আশ্রয় নেন। সেখানে তাদের মারধরের জন্য তেড়ে আসেন মনিরুল হক, তার ভাই ইকবাল হক সহ তাদের লোকজন। সাংবাদিকদের হত্যা ও হাত-পা কেটে ফেলার হুমকি দেন তারা।
এ ঘটনায় পর দিন বৃহস্পতিবার রাতে ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুলকে প্রধান করে তিনজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন গোলজার।
এছাড়াও ভোটের দিন মনিরুল হকের নেতৃত্বে হোসেন্দি বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে দখল, ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সিল মারেন মনিরুল হকের লোকজন। পুলিশ বাধা দিলে ককটেল ফাটিয়ে, তাদের ওপর অস্ত্র নিয়ে হামলাচায় মনিরুল হকরা। এতে পুলিশের দুই সদস্যকে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে পুলিশের গাড়িও ভাঙচুর করে তারা। সে ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে চেয়ারম্যান মনিরুল হককে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০-২০০ জনকে আসামি করে আরো একটি মামলা করা হয়। ১১ মে শনিবার রাত ৯টার দিকে পুলিশের মামলায় ঢাকার শাহজাহানপুরের একটি বাড়ি থেকে মনিরুল হককে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেদিন থেকে জেল হাজতে রয়েছেন মনিরুল হক।
এ সব ঘটনার প্রেক্ষিতে গত বুধবার স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউপি শাখা-১ এ আদেশ জারি করে চেয়ারম্যান পদ থেকে মনিরুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
সারাবাংলা/একে