বাজেট ২০২৪-২৫ অর্থবছর: পিপিপির তালিকায় যুক্ত হচ্ছে ৭৯ প্রকল্প
২১ মে ২০২৪ ০২:২৭
ঢাকা: আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য নতুন অর্থবছরে আসছে পিপিপির ৭৯টি উন্নয়ন প্রকল্প। এসব প্রকল্পের একটি তালিকা যুক্ত করা হচ্ছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি)। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে প্রয়েজন হবে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ বেশকিছু মেগা প্রকল্প স্থান পেয়েছে আগামী এডিপির তালিকায়। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক অর্থবছরেই যে এসব প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে, বিষয়টি এমন নয়। তবে এসব প্রকল্প পিপিপির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে বলে সরকার নির্ধারণ করেছে, সেটি চূড়ান্ত। কোনো বেসরকারি উদ্যোক্তা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আগ্রহী হলে পিপিপি অথোরিটির মাধ্যমে এখান থেকে কোনো প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণ করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, এডিপিতে যুক্ত হওয়া পিপিপি প্রকল্পের মধ্যে অনেকগুলোর কার্যক্রম বেশ এগিয়েছে। এর মধ্যে ১৪টি প্রকল্প রয়েছ প্রকিউরমেন্ট পর্যায়ে। এ ছাড়া চুক্তি সই-পরবর্তী শর্ত প্রতিপালনাধীন পর্যায় রয়েছে চারটি প্রকল্প, অপারেশনাল পর্যায়ে রয়েছে দুটি প্রকল্প। এর বাইরে বিস্তারিত সমীক্ষা চলছে ২৫টি প্রকল্পের। চুক্তি সই পর্যায়ে রয়েছে ছয়টি প্রকল্প। নীতিগত অনুমোদন পরবর্তী প্রাথমিক পর্যায়ে ৯টি, নির্মানাধীন পর্যায়ে আটটি এবং পরামর্শক নিয়োগ পর্যায়ে আরও ছয়টি প্রকল্প রয়েছে।
বেসরকারি বিনিয়োগে উৎসাহ দিতেই সরকার পিপিপি প্রকল্পে জোর দিচ্ছে বলে মনে করছেন সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘২০২৬ সালের পর অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরবর্তী ধাপে দেশকে নিয়ে যেতে হলে প্রচুর বেসরকারি বিনিয়োগ দরকার। সেক্ষেত্রে অন্যতম মাধ্যম হতে পারে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনাশিপ (পিপিপি)। সরকার এরই মধ্যে এটি সফল করতে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে। আশা করা হচ্ছে আগামীতে বেসরকারি উদ্যোক্তারা আরও বেশি করে এগিয়ে আসবেন। সেই সঙ্গে এডিপিতে ৩০ শতাংশ অবকাঠামো সংক্রান্ত প্রকল্প পিপিপিতে নেওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা দরকার।’
সূত্র জানায়, এর আগে প্রকাশিত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, পিপিপির পরিবেশ তুলনামূলক বাংলাদেশ পরিণত (পরিপক্ক) হলেও এখন অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে। পিপিপিকে আরও গতিশীল করা এবং ব্যয় সাশ্রয়ের স্বার্থে প্রতিযোগিতামূলক নিলামে পিপিপি প্রকল্পের সংখ্যা বাড়াতে সরকারের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
সংস্থাটির ‘পিপিপি মনিটর’ শীর্ষক প্রতিবেদনের বাংলাদেশ প্রকাশনায় পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে পিপিপি বিনিয়োগর প্রায় ৭৬ শতাংশ জ্বালানি খাতে। এ ছাড়া বন্দর খাত বিনিয়োগের ১২ শতাংশের বেশি আকৃষ্ট করেছে পিপিপি। সরকার পিপিপি বিনিয়োগ প্রতি বছর জিডিপির ১ দশমিক ৮ শতাংশে পৌঁছানো এবং পিপিপি পদ্ধতির অধীনে ৩০ শতাংশ অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু সে লক্ষ্য এখনো পূরণ হয়নি।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের এডিপিতে যুক্ত হতে যাওয়া পিপিপি প্রকল্পগুলোর অন্যতম হলো— ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প। এটি বর্তমান নির্মাণাধীন। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া ঢাকা ইস্টওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। এটি বর্তমানে নীতিগত অনুমোদন পরবর্তী প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
মেঘনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে সাত হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা। এটি নির্মাণে বিস্তারিত সমীক্ষা চলছে। গাবতলী-সাভার-নবীনগর চার-লেন এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পটি ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৮৯০ কোটি টাকা। এর জন্যও বিস্তারিত সমীক্ষা চলমান। ঢাকা (জয়দেবপুর)-ময়মনসিংহ হাইওয়েতে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। এটি বাস্তবায়নের জন্য পরামর্শক নিয়োগ পর্যায়ে রয়েছে। আর রাজধানীতে আউটার রিং রোড নির্মাণে ব্যয় হবে ১২ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। বর্তমানে এটি বাস্তবায়নে বিস্তারিত সমীক্ষা চলমান।
এ ছাড়া হাতিরঝিল-রামপুরা-বনশ্রী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ হয়ে আমুলিয়া-ডেমরা হাইওয়ে সড়ক চার-লেনে উন্নীত করার প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ২১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। পিপিপির জন্য রাখা এই প্রকল্পটি চুক্তি সই-পরবর্তী শর্ত প্রতিপালনাধীন পর্যায়ে রয়েছে। ২২ হাজার ৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে রেলওয়ের জন্য কমলাপুরে মাল্টিমোডাল হাব নির্মাণের প্রকল্প পরামর্শক নিয়োগ পর্যায়ে আছে। আর ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বিমানবন্দর মাল্টিমোডাল হাব নির্মাণ প্রকল্প রয়েছে পরামর্শক নিয়োগ পর্যায়ে।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ পিপিপি বাজেট বাজেট ২০২৪-২৫