মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় অবাক হয়েছি: সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ
২১ মে ২০২৪ ২০:৩৮
ঢাকা: বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার (২০ মে) রাতে ইউনাইটেড স্টেট ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এ ঘটনার পর দেশের একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমাকে যে দুই কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তার কী কোনো ভিত্তি আছে? তারা বলেছেন, আমি আমার পদপদবি দিয়ে আমার ভাইকে নাকি সহযোগিতা করেছি।’
তিনি বলেন, ‘সেনাপ্রধান হিসেবে এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ভাই বা আত্মীয়দের কন্ট্রাক্ট দিয়েছেন—কেউ প্রমাণ করতে পারলে যে কোনো কনসিকোয়েন্স মেনে নিতে প্রস্তুত রয়েছি। তবে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় আমি খুবই অবাক হয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি কোনো অপরাধ করিনি যে, শাস্তি পেতে হবে। তারা আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তুলেছে, তার কোনো প্রমাণ থাকলে আমাকে দিক।’
আজিজ আরও বলেন, ‘ভাইদের সম্পদশালী করতে আমি কোনো ক্ষমতা অপব্যবহার করিনি। তারা আমার বিরুদ্ধে প্রমাণ করুক।’
ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতিতে বলেছেন, দুর্নীতিতে উল্লেখযোগ্য সম্পৃক্ততার কারণে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নিয়েছে পররাষ্ট্র দফতর। তার (জেনারেল আজিজ) কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসকে ক্ষুণ্ন করতে ভূমিকা রেখেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে— আজিজ আহমেদ তার ভাইকে বাংলাদেশে অপরাধমূলক কার্যকলাপের জন্য জবাবদিহিতা এড়াতে সাহায্য করেছেন। এটি করতে গিয়ে তিনি সরকারি প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে জড়িত হয়েছেন। এ ছাড়া অন্যায়ভাবে সামরিক খাতে কন্ট্রাক্ট পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য তিনি তার ভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। একইসঙ্গে নিজের ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য সরকারি নিয়োগের বিনিময়ে ঘুষগ্রহণ করেছিলেন।
ম্যাথিউ মিলার বলেন, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং আইনের শাসনকে শক্তিশালী করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে তা আবারও নিশ্চিত করা হলো। সরকারি সেবা আরও স্বচ্ছ ও নাগরিকদের সেবা লাভের সুযোগ তৈরি করার পাশাপাশি ব্যবসা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং অর্থপাচার ও অন্যান্য অর্থনৈতিক অপরাধের অনুসন্ধান ও বিচার নিশ্চিতে সক্ষমতা তৈরিতে সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশে দুর্নীতিবিরোধী প্রচেষ্টায় সহায়তা করে থাকে যুক্তরাষ্ট্র।
আল জাজিরার তৈরি ডকুমেন্টারি বানোয়াট দাবি করে সাবেক সেনাপ্রধান বলেন, ‘২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি আল জাজিরায় অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস ম্যান নামক একটি নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল। তার সঙ্গে এই নিষেধাজ্ঞা সম্পৃক্ত ওতপ্রোতভাবে। অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন অনুষ্ঠানে যে অভিযোগ দুটি আনা হয়েছিল। যদিও এখানে অত কিছু বিস্তারিত বলা হয়নি কিন্তু একই জিনিস।’
আজিজ আহমেদ বলেন, ‘প্রথম অভিযোগ হলো, আমি আমার ভাইকে বাংলাদেশের প্রচলিত যে আইন আছে। তার অপরাধ কর্মকাণ্ড থেকে সে যাতে এড়িয়ে চলতে পারে সে জন্য আমি আমার পদবি ব্যবহার করে তাকে সহযোগিতা করে দুর্নীতি করেছি। দ্বিতীয় হলো, আমি সেনাপ্রধান হিসেবে আমার ভাইকে সামরিক কন্ট্রাক্ট দিয়ে ঘুষ নিয়েছি; আমি আরেকটি দুর্নীতি করেছি। প্রথম অভিযোগের বিষয়ে বলব, আমার সেই ভাই, যদিও এখানে নাম উল্লেখ করা হয়নি, আমি জেনারেল হওয়ার অনেক আগে থেকে বিদেশে এবং নিশ্চয়ই সে বৈধ পাসপোর্ট নিয়েই বিদেশে গিয়েছে। সেখানে দেশ থেকে চলে যাওয়ার বা দেশের প্রচলিত আইন ফাঁকি দেওয়ার ক্ষেত্রে আমি আমার পথ-পদবি ব্যবহার করেছি এই অভিযোগ আমি মেনে নিচ্ছি না। মেনে নিতে পারি না।’
দ্বিতীয় অভিযোগের ক্ষেত্রে সাবেক সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমি বিজিবির মহাপরিচালক এবং সেনাপ্রধান থাকাকালীন আমার কোনো ভাই বা নিকটাত্মীয় এই দুই প্রতিষ্ঠানের কোথাও ঠিকাদারি করেছে তার তথ্য প্রমাণ দিতে পারলে আমি সব মেনে নেব। শুধু তাই নয়, এই প্রতিষ্ঠান দুটিতে তাদের কোনো লাইসেন্স ছিল সেটার প্রমাণ দিতে পারলেও আমি সব শাস্তি মেনে নেব।’
নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাবেন কিনা জানতে চাইলে সাবেক সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমার জানানোর কোনো প্রয়োজন নেই।’
সারাবাংলা/একে
আল-জাজিরা মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ম্যাথিউ মিলার সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ