তথ্যপ্রযুক্তিতে কর আরোপ না করার আহ্বান তরুণ উদ্যোক্তাদের
২২ মে ২০২৪ ১৯:০৬
ঢাকা: দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো দিনব্যাপী ইয়ুথ টেক সামিট। চার ঘণ্টাব্যাপী উদ্দীপনাময় বিভিন্ন সেশনে অংশ নেওয়া তরুণ শ্রোতাদের মধ্যে ছিল পিন পতন নীরবতা। আইটি খাতে এগিয়ে যাওয়ার বিভিন্ন টিপস শিখে নিতে গভীর মনোযোগী শ্রোতা ছিলেন তারা। অনুষ্ঠানে উঠে আসে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ভবিষ্যতের নানা দিক। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে তরুণ উদ্যোক্তারা প্ল্যাকার্ড হাতে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নতুন কর চাপিয়ে না দেওয়ার আহ্বান জানান।
‘আর উই রেডি ফর এআই?’ প্রতিপাদ্যে বুধবার (২২ মে) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি)-এ প্রথমবারের মতো এই সামিট অনুষ্ঠিত হয়। ১৪টি সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই সামিটে দুই শতাধিক তরুণ অংশ নেন।
অনুষ্ঠানের ২০ জন সফল ও তরুণ উদ্যোক্তা তাদের এগিয়ে যাওয়ার গল্প তুলে ধরেন। যেখানে নতুন প্রযুক্তি, বিশেষ করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে কৃষি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো প্রাধান্য পায়।
অনুষ্ঠানে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘দেশের ভবিষ্যৎ তরুণরাই তৈরি করবে। তরুণ তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের ফান্ডিং সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের গ্রুপ বিবেচনা করছে।’
বিডিজবস’র প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সে মতো নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে হলে তরুণদেরই নেতৃত্ব দিতে হবে। তরুণ উদ্যোক্তাদের সবধরনের সহায়তা দিতে হবে।’ আগামী বাজেটে যাতে তরুণ উদ্যোক্তাদের ওপর নতুন কোনো কর আরোপ না করা হয় সে ব্যাপারে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সভিত্তিক প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্টের জন্য প্রচুর নতুন বিনিয়োগ দরকার। এই পর্যায়ে নতুন করে আয়কর বা ভ্যাট আরোপ করলে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে।’
ভিসিপিয়াব সভাপতি ও ইজেনারেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম আহসান সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘গ্র্যান্ট বা ফ্রি মানি চাই না। আমরা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার জন্য একটা অনুকূল পরিবেশ চাই।’ এ জন্য আগামী বছর তিনেক কর অব্যাহতি রেখে পরে ধীরে ধীরে সহনীয় হারে কর আরোপের পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘এআইভিত্তিক ওপেন সোর্সের মডেল দিয়ে ১৮ কোটি মানুষের সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে বাংলাদেশকে গ্লোবাল এআই ইউজ কেইসের রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব। এত বিপুল জনসংখ্যার দেশের এআই ইউজ কেইস মডেল থেকে সারা বিশ্ব উপকৃত হতে পারে।’
বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরামের (বিআইজেএফ) সভাপতি নাজনীন নাহার বলেন, ‘আমরা ইন্ডাস্ট্রির ভালো গল্পগুলো বলতে পছন্দ করি। আজকের প্রতিটি গল্প আমাদের দেশের ও আমাদের সফলতার গল্প। একটি মঞ্চে ১২জন সফল উদ্যোক্তার এই গল্প দেশের আইসিটি ইন্ড্রাস্ট্রিতে নতুন মাইলফলক। এ ধরনের ইতিবাচক সব উদ্যোগের সঙ্গে আমরা আছি। তরুণরই দেশের ভবিষ্যৎ আইসিটি ইন্ড্রাস্ট্রিকে এগিয়ে নেবে।’
বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরামের আহ্বায়ক আরিফুল হাসান অপু বললেন, ‘সুযোগ পেলে আজকের তরুণরাই বিশ্বে দেশের মর্যাদাকে সমুন্নত করবে। দেশকে আরও এগিয়ে নেবে। এগিয়ে যাবে দেশের আইসিটি খাত।’
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী তরুণ উদ্যোক্তারা হলেন- ড্রিমজয় ল্যাবের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও তানভির হোসেন খান, ব্যাকস্পেসের প্রতিষ্ঠাতা সাইফুল রহমান, সিগমাইন্ড সিইও আবু আনাস শোভন, মার্কোপোলোর সিইও তাসফিয়া তাসবীন, শিখোর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও শাহির চৌধুরী, আইফার্মার সিইও ফাহাদ ইফাজ, ড. চাষি’র প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মেদিনা আলী, লার্ন উইথ সুমিতের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও সুমিত সাহা, উইন্ড অ্যাপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহাদ আহমেদ, ইন্টারঅ্যাকটিভ কেয়ারের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও রা আল সামির, মিত্র ফিনটেক লিমিটেড’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও কিশওয়ার হাসেমী, ইনোডক্স টেকনোলজিস লিমিটেডের সিইও মো. মুনিরুল আলম, ওস্তাদের সহ-প্রতিষ্ঠাতা সৌরভ বড়ুয়া, আমর ল্যাবের সহ-প্রতিষ্ঠাতা তাহরীন শাহ, ডেডস কোরের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও আশরাফুল ইসলাম, অ্যানিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও নুরুল আমিন, নয়ন আইটির ডিজিটাল মার্কেটার ও সিইও এ এইচ আলী,মুজেলডির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও নাসির উদ্দিন, এয়ারওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও সাযমে ফারুক, কোডম্যান বিডির প্রতিষ্ঠাতা মিনহাজুল আসিফ ও প্রোগ্রমিং হিরোর সিওও আব্দুর রাকিব প্রমুখ।
ইয়্যুথ টেক সামিটের সঞ্চালনায় ছিলেন গোলাম সামদানি ডন। ‘হোয়াট ইয়ং আইটি এন্টারপ্রেনার্স ওয়ান্ট ফ্রম গভর্নমেন্ট ইন দ্য আপকামিং বাজেট?’ শীর্ষক সেশনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিডিওএসএন সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান, জেসিআই বাংলাদেশের ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট ইমরান কবির, নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ইকবাল বাহার জাহিদ, বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরামের প্রেসিডেন্ট নাজনীন নাহার, বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরামের প্রেসিডেন্ট ও নাসা স্পেস অ্যাপস চেলেঞ্জ বাংলাদেশের উপদেষ্টা আরিফুল হাসান অপু, বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজের নির্বাহী পরিচালক কে এম হাসান রিপন, জে সি আই বাংলাদেশের হেড অব বিজনেস অ্যা এনগেজমেন্ট বিডিঅ্যাপস ন্যাশনাল অ্যাপসস্টোর ন্যাশনাল ট্রেনিং কমিশনার মো. আলটামিস নাবিল প্রমুখ।
সম্মেলনের আয়োজক হিসেবে ছিল বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরাম, জেসিআই বাংলাদেশ, বিআইজেএফ, নিজের বলার মতো একটি গল্প ফাউন্ডেশন, বিডিঅ্যাপস, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যান্ড প্রাইভেট ইক্যুইটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ভিসিপিয়াব), ইয়্যুথ ইন টেক, ফিরল্যান্সার্স অফ বাংলাদেশ, রাইজ অ্যাবাভ অল, বিওয়াইএলসি,জিইএন, ইয়্যুথ ফর পলিসি, বিওয়াইএলসি, গ্লোবাল শেপার, জেন বাংলাদেশ এবং ড্যাফোডিল নেটওয়ার্ক।
সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম