ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টি থাকবে ৩ দিন, তাপমাত্রা কমবে ৪ ডিগ্রি
২৫ মে ২০২৪ ২২:৫৮
ঢাকা: ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ এর প্রভাবে আগামী তিনদিন সারাদেশে কম বেশি ঝড়-বৃষ্টি দমকা হাওয়া বয়ে যাবে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও তাপপ্রবাহও বয়ে যেতে পারে।
শনিবার (২৫ মে) আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পূর্বাভাসে আরো বলা হয়— রোববার (২৬ মে) সকাল ৯ টা পর্যন্ত খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে, সেই সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এসময় সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।
অন্যদিকে শনিবার সারাদিন ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে গেল তা রোববারও অব্যাহত থাকতে পারে বলেও পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।
রোববার (২৬ মে) আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে— রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
এ সময় সারাদেশে দিনের এবং রাতের তাপমাত্রা ২ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে।
সোমবার (২৭ মে) রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। ওইদিনও সারাদেশে দিনের এবং রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। আর বর্ধিত ৫ দিনের আবহাওয়ার অবস্থা বলছে, বৃষ্টিপাতের প্রবণতা হ্রাস পেতে পারে এবং বাড়তে পারে তাপমাত্রাও।
উল্লেখ্য, পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে ঘনীভূত হয়ে শনিবার সকাল ৯টায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। যা রোববার (২৬ মে) দেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
পায়রা-মোংলায় ৭, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত
এদিকে আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মাদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, রেমাল পরিস্থিতি মোকাবিলায় পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সর্তক সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত (পুন:) ৭ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত (পুন.) ৬ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠী, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৫ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা/ঝড়ো হাওয়া সহ ভারী (৪৪-৮৮ মিমি) থেকে অতি ভারী (২৮৯ মিমি) বর্ষণ হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
সব জাহাজকে চট্টগ্রাম বন্দর ছাড়ার নির্দেশ
ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতের আশঙ্কায় চট্টগ্রাম বন্দরে ‘অ্যালার্ট-থ্রি’ অর্থাৎ বিপৎসংকেত জারি করা হয়েছে। বন্দরের জেটিতে অবস্থানরত সব জাহাজকে গভীর সাগরে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলা হয়েছে।
শুধুমাত্র কনটেইনার পরিবহন ছাড়া বন্দরের সবধরনের অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জেটিতে পণ্য খালাসে নিয়োজিত সরঞ্জামগুলোর ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, বহিঃনোঙ্গরে অবস্থানরত জাহাজগুলোকেও গভীর সমুদ্রে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে বহিঃনোঙ্গরে পণ্য খালাস পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় শতাধিক জাহাজ গভীর সমুদ্রে চলে যাওয়ায় বন্দর সীমানা এখন জাহাজশূন্য বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের সম্ভাব্য আঘাতের আশঙ্কায় ছয় নম্বর বিপৎসংকেত জারির পর শনিবার (২৫ মে) রাতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এসব পদক্ষেপ নিয়েছে। রোববার (২৬ মে) বেলা ১১টায় বন্দরে জরুরি সভা আহ্বান করা হয়েছে।
বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘সিগন্যাল-সিক্স জারির পর বন্দরেও আমরা অ্যালার্ট-থ্রি জারি করেছি। সাধারণত সংকেত ছয় কিংবা এর ওপরে গেলে আমরা বন্দরে বিপৎসংকেত জারি করি। জেটিতে জাহাজ যেগুলো ছিল, সবগুলোকে সাগরে পাঠিয়ে জেটি জাহাজশূন্য করা হচ্ছে। জেটিতে লোডিং-আনলোডিং বন্ধ আছে। ইয়ার্ড থেকে কনটেইনার মুভ আপাতত চলছে। আমরা বলেছি, আঘাতের আভাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জেটি এলাকা খালি করে দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বহিনোর্ঙ্গর থেকেও সব মাদার ভ্যাসেল গভীর সমুদ্রে পাঠানো হচ্ছে। এখন আমরা বন্দরের ইক্যুইপমেন্টগুলো সুরক্ষার ব্যবস্থা করছি। জাহাজ চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সাগর বিক্ষুব্ধ আছে। কর্ণফুলী নদীতে লাইটারেজ জাহাজ চলাচল ও ঘাটে পণ্য খালাস পুরোপুরি বন্ধ আছে। মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলো নদীতে অবস্থান করছে। সাগরে অবস্থানরত নৌকা-ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর।
সারাবাংলা/জেআর/একে
কক্সবাজার ঘূর্ণিঝড় চট্টগ্রাম বিপৎসংকেত মোংলা-পায়রা রেমাল সমুদ্র বন্দর