দেবীদ্বার (কুমিল্লা) থেকে: ২৯ মে, বুধবার। ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের তৃতীয় ধাপ। কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার কেন্দ্রটির নাম তালতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। চারদিকে ঝোঁপঝাড়-বাগানে বেষ্টিত ছোট্ট একটি মাঠ। সেটি আবার সুতলি-বাঁশের সীমানা দিয়ে ঘেরা।
দুপুর দেড়টার দিকে সাংবাদিকদের গাড়িটি যখন কেন্দ্রের পাশে থামল, কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলা থেকে হুড়মুড়িয়ে নেমে যেতে দেখা গেল কিছু তরুণকে। তৎপর দেখা গেল মাঠের পাশের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার-পুলিশকেও। তারপর আধাঘণ্টা কেন্দ্রে অবস্থান করেন চার সদস্যের ওই সাংবাদিক দলটি।
ওই সময়ের মধ্যে কোনো ভোটারকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেখা যায়নি। দুই তলার বারান্দায় প্রার্থীদের এজেন্টদের জটলা। প্রিজাইডিং অফিসার ফোরকান আহমেদ বললেন, ‘ভোটারদের ভোট দিতে না আসার ব্যর্থতা প্রার্থীদের। আমি আমার কেন্দ্র সঠিকভাবে পরিচালনা করছি। এই কেন্দ্রে জাতীয় নির্বাচনেও আমি প্রিজাইডিং অফিসার ছিলাম। ওই সময় তো অনেক ভোটার ছিল। এখন নেই।’
কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বললেন, সকালের দিকে কিছু ভোটার ছিল। দুপুরে মধ্যাহ্নভোজনের সময় বলেই হয়তো ভোটারদের উপস্থিতি শূন্যের কোটায়। বিকেলে হয়তো ভোটার আসবে।
এরই মধ্যে খাবার চলে আসে। আনারস প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষের পোলিং এজেন্টদের তত্ত্বাবধানে প্যাকেট বিরিয়ানি নির্বাচনসংশ্লিষ্টদের হাতে পৌঁছে দিতে দেখা যায়।
দুপুর দেড়টা থেকে ২টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত এই ভোটকেন্দ্রে অবস্থান করেন সাংবাদিকরা। তবে এই ১ ঘণ্টা ১০ মিনিটে কোনো ভোটারকেই কেন্দ্রটিতে ভোট দিতে দেখা গেল না। এই সময়ের মধ্যে কেবল একটি ইজিবাইকে করে দুজন ও হেঁটে আরও দুজন নারী ভোটারকে কেন্দ্রে ঢুকতে দেখা যায়।
এ সময় প্রিজাইডিং কর্মকর্তা বাকি সব কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘যেহেতু ভোটার নাই, সবাই খেয়ে নিন। ভোটার এলে তাদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েন।’ তার কথামতো ভোটারদের উপস্থিতি না থাকার ‘সুযোগে’ দায়িত্বরত কর্মকর্তারাও মধ্যাহ্নভোজ সরে নিলেন।
সবশেষ দুপুর ২টায় তথ্য নিয়ে জানা গেল, ওই সময় পর্যন্ত তালতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই হাজার ৫২৪ ভোটের মধ্যে কাস্ট হয়েছে মাত্র ৫৬০ ভোট। সে হিসাবে ছয় ঘণ্টায় ভোট পড়েছে মাত্র ২২ শতাংশের কিছু বেশি। অথচ ততক্ষণে ভোট গ্রহণের সময় বাকি মাত্র দুই ঘণ্টা।
এর আগে সাংবাদিকদের দলটি ছোটনা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে যায়। সেখানকার চিত্রও ব্যতিক্রম কিছু ছিল না। সেখানেও ছিল না ভোটার। তবে সেখানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে এক ছাত্রলীগ কর্মীকে আটক করলে ভোটের উত্তাপে কিছুটা উত্তেজনা ছড়ায়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে ঘিরে জটলা তৈরি হয়।
সে উত্তেজনাও বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। ভোটারদের উপস্থিতি একেবারেই কম থাকা নিরুত্তাপ ভোটের মাঠ বলেই হয়তো ঘটনা বেশি দূর এগোয়নি। দায়িত্বরত কর্মকর্তারাও বললেন, অপ্রীতিকর তেমন কোনো ঘটনার মুখোমুখি তাদের হতে হচ্ছে না।