ফৌজদারি অপরাধে দোষী ট্রাম্প কি নির্বাচন করতে পারবেন?
৩১ মে ২০২৪ ১৩:৫৫
যৌন সম্পর্কের তথ্য প্রকাশ না করতে পর্ন তারকাকে ঘুষ দিয়ে সেই লেনদেনের তথ্য গোপন ও ব্যবসায়িক তথ্য জালিয়াতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ মামলায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা করা হবে আগামী ১১ জুলাই। এ বছরও তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী হতে যাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, সাজাপ্রাপ্ত হলে ট্রাম্প কি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে পারবেন?
বিবিসির খবরে বলা হয়, বৃহস্পতিবার (৩০ মে) ১২ সদস্যের বিচারকমণ্ডলী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লেনদেনের তথ্য গোপন ও জালিয়াতির মামলার রায় ঘোষণা করেন। তারা বলেন, সাক্ষ্য-প্রমাণে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। বিচারপতি জুয়ান মার্চেন এই মামলার সাজা ঘোষণার জন্য ১১ জুলাই দিন নির্ধারণ করেছেন।
এই রায়ের ফলে ট্রাম্পই প্রথম ব্যক্তি, যিনি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কোনো ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলেন। তিনিই ফৌজদারি অপরাধে দোষী প্রমাণিত প্রথম প্রেসিডেন্ট প্রার্থী, যিনি প্রধান একটি দল থেকে দেশটির আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছেন।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মামলায় ট্রাম্পের সর্বোচ্চ চার বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। বিচারকরা এর চেয়ে কম মেয়াদের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ডও সাজা হিসেবে দিতে পারেন। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, কারাদণ্ডিত হলে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে পারবেন কি না।
আরও পড়ুন- পর্ন তারকাকে ঘুষের মামলায় ট্রাম্প দোষী, সাজা ১১ জুলাই
মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের জন্য যেসব যোগ্যতা প্রয়োজন সেগুলো হলো— প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ৩৫ বছর হতে হবে, প্রার্থীকে জন্মগতভাবে মার্কিন নাগরিক হতে হবে এবং প্রার্থীকে কমপক্ষে ১৪ বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতে হবে।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে অপরাধমূলক রেকর্ডের কারণে প্রার্থী হতে না পারার নিয়ম যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে নেই। ফলে ট্রাম্প তথ্য গোপন ও লেনদেনের তথ্যে জালিয়াতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হলেও প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে তার জন্য বাধা নেই বলে মনে করছেন অনেকেই।
সিএনএনে সাংবাদিক জাচারি বি উলফ বলেন, সংবিধানে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর জন্য যে তিনটি যোগ্যতার কথা উল্লেখ রয়েছে তার তিনটিই ট্রাম্প পূরণ করেন। তবে মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীতে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি এর আগে শপথ নিয়েছেন এবং বিদ্রোহে যুক্ত হয়েছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সরকারি কর্মকর্তা হতে পারেন না। শেষ বিষয়টি অবশ্য ট্রাম্পের দোষী সাব্যস্ত হওয়া মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন মেথডিস্ট ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর প্রেসিডেনশিয়াল হিস্ট্রির পরিচালক জেফরি অ্যাঙ্গেল বিবিসিকে বলেন, কী ঘটতে যাচ্ছে, তার ইঙ্গিত খুঁজে পেতে আমরা প্রায়ই ইতিহাসের দিকে তাকাই। কিন্তু ইতিহাসে এমন কোনো রেকর্ড নেই, যা দিয়ে এই বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
অন্যদিকে এই মামলায় কারাদণ্ড দেওয়া হলেও ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে পারবেন বলে মনে করছেন মার্কিন থিংক ট্যাংক কনস্টিটিউশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি সেন্টারের প্রেসিডেন্ট এলিজাবেথ ওয়াইড্রা। লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসকে তিনি বলেন, এই মামলায় যে সাজাই দেওয়া হোক না কেন, ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে এবং এমনকি নির্বাচিত হতেও কোনো বাধা নেই। এমনকি কারাদণ্ডিত হয়ে নির্বাচনের সময় যদি তিনি কারাগারেও থাকেন, তবু তিনি ভোট করতে এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারবেন।
ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার পক্ষেই বেশির ভাগ মতামত এলেও কারাদণ্ডিত হলে তার নিজের ভোট দেওয়াই শঙ্কার মুখে পড়তে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কিছু রাজ্যে ফৌজদারি অপরাধে কারাদণ্ডিতদের ভোট দেওয়ার বিধান আছে। আবার ট্রাম্প বসবাস করেন ফ্লোরিডায়। সেখানে বিধানটি হলো, ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডি ব্যক্তি সাজার মেয়াদ পূর্ণ করলে বা সব ধরনের অর্থদণ্ড পরিশোধ করলে তবেই ভোট দিতে পারবেন।
আবার যে রাজ্যে ব্যক্তিকে সাজা দেওয়া হয়েছে, সেই রাজ্যের আইনর প্রতিও সম্মান দেখিয়ে থাকে ফ্লোরিডা। এ ক্ষেত্রে ট্রাম্পের সাজা হয়েছে নিউইয়র্কে। সেখানকার আইন বলছে, ফৌজদারি অপরাধে কারাদণ্ডিত অবস্থায় কেউ ভোট দিতে পারবেন না। অর্থাৎ ট্রাম্পকে যদি এই মামলায় কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং নির্বাচনের দিনও যদি তার কারাদণ্ডের মেয়াদ শেষ না হয়, তাহলে তার পক্ষে ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকবে না। তবে অর্থদণ্ড সাজা হলে তিনি ভোট দিতে পারবেন।
অন্যদিকে এই মামলার সাজা ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকেও প্রভাবিত করতে পারে ব্যাপকভাবে। ট্রাম্প গত জানুয়ারিতে রিপাবলিকান দল থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতা নিশ্চিত করেছেন। ১১ জুলাই সাজা ঘোষণার যে দিন ঘোষণা করেছেন বিচারপতি জুয়ান মার্চেন, এর চারদিন পরই রিপাবলিকান জাতীয় সম্মেলন থেকে ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা করার কথা রয়েছে। তিনি প্রার্থী হলেও সাজা পেলে নভেম্বরের নির্বাচনে গিয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
এ বছরের শুরুর দিকে ব্লুমবার্গ ও মর্নিং কনসাল্ট একটি জরিপ চালিয়েছিল। ওই জরিপে দেখা যায়, দোদুল্যমান বা কোনো নির্দিষ্ট দলের সমর্থকদের প্রাধান্য নেই এমন অঙ্গরাজ্যগুলোতে ৫৩ শতাংশ ভোটার বলেছেন, ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে ভোট নাও দিতে পারেন তারা।
চলতি মে মাসেই কুইনিপিয়াক বিশ্ববিদ্যালয় আরেকটি জরিপ করে। তাতে উঠে এসেছে ট্রাম্পের জন্য আরও ভয়াবহ তথ্য। জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের অভিমত, দোষী সাব্যস্ত হলে ট্রাম্পের পক্ষের ৬ শতাংশ ভোটারেরও তাকে ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা কম।
সারাবাংলা/টিআর
ঘুষের মামলা ডোনাল্ড ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত নথি জালিয়াতি পর্ন তারকাকে ঘুষ ব্যবসায়িক তথ্য গোপন