‘আ.লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের স্বাধীন অস্তিত্ব থাকবে না’
২ জুন ২০২৪ ১৭:১৪ | আপডেট: ২ জুন ২০২৪ ১৯:০৩
ঢাকা: আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের স্বাধীন অস্তিত্ব থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার (২ জুন) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এ আলোচনা সভা আয়োজন করে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ আমাদের দায়িত্ব হয়ে পড়েছে দেশকে রক্ষা করা, স্বাধীনতাকে রক্ষা করা, গণতন্ত্রকে রক্ষা করা। আমি আগেই বলেছি- এরা সরকার নয়, এরা বর্গী, ডাকাত, লুটেরা। এদের যদি আমরা প্রতিরোধ করতে না পারি, ঠেকাতে না পারি তাহলে আমাদের দেশের স্বাধীন অস্তিত্ব থাকবে না। আমার সমস্ত অভিজ্ঞতা দিয়ে আমি বলছি, আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে টিকে থাকতে পারব না। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই এবং দেশকে মুক্ত করার জন্য কাজ করি।’
তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের প্রত্যেকটি কাজ ছিল দূরদৃষ্টিসস্পন্ন। ফারাক্কা, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক, ইউরোপের সঙ্গে সস্পর্ক, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক- প্রতিটা বিষয়ে তিনি দূরদৃষ্টির পরিচয় দিয়েছেন। মেয়েদের কী করে উপরে তুলবেন, শিশুদের কী করে মানুষ হিসেবে তৈরি করবেন, ছাত্রদের কী করে সঠিক পথে নিয়ে যাবেন, সেই কাজগুলো জিয়াউর রহমান করেছেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, “জিয়াউর রহমানকে শুধু স্লোগানের ভাষা দিয়ে বিচার করা যাবে না। তাকে বুঝতে হলে, জানতে হলে তার কর্মের গভীরে যেতে হবে। ‘আমি মেজর জিয়া বলছি, আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি’- এই একটা কথার মধ্য দিয়ে তিনি সৈনিক থেকে মুহূর্তের মধ্য হয়ে গেলেন সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক নেতা। তিনি একটা জাতির জন্ম ঘোষণা দিয়ে দিলেন। এটাই চিরন্তন সত্য যে, এই জাতি যতদিন থাকবে, আমরা যতদিন থাকব জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা ততদিন থাকবে। এটা কোনো বির্তকের বিষয় না। এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য-ইউনির্ভাসেল ট্রুথ।’
তিনি বলেন, ‘পত্রিকা খুললে শুধু লুট আর লুট ছাড়া কিচ্ছুই পাবেন না। অদ্ভুত! কারা লুট করছে? যারা আমাদের সমাজে, রাষ্ট্রের বড় দায়িত্বে তারা। আর্মির সাবেক প্রধান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার প্রধান।তাদের অনেক কিছু বেরিয়ে আসছে। সংসদ সদস্য চোরাচালানির সঙ্গে জড়িত। টুকরা টুকরা হয়ে যায়। মাদকপাচারকারীও সংসদ সদস্য ছিল কক্সবাজারের টেকনাফে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক লুট হয়ে যায়। সোনা হারিয়ে যায়, ডলার রিজার্ভ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিয়ে চলে যাচ্ছে, ওদিকে ইন্টারন্যাশনাল হ্যাকিং হচ্ছে। মিলিয়ন ডলার নিয়ে চলে যাচ্ছে। কল্পনা করা যায়? শেয়ারবাজারে রথি-মহারথিরা লুটপাট করে শেষ করে দিচ্ছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিত (আবুল মাল মুহিত) বলেছিলেন, আমার কিছু করার নাই। ওদের হাত অনেক লম্বা। বাংলাদেশে এখন অনেক বড় বড় মানুষ, এত বড় বড় যে তাদের আশ-পাশে যাওয়া যায় না। কেউ দরবেশ, কেউ সন্ন্যাসী।’
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের একটি ব্যাংকের শাখা থেকে ১৪৯ ভরি সোনা লোপাট হয়েছে। এখন ১৪৯ ভরি সোনা তো কিছুই না। ব্যাংক থেকে তো টনকে টন সোনা চলে যাচ্ছে, হাজার হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। কোনো দিকে কোনো চিন্তা নাই জবাবদিহিতা নাই। একটাই চিন্তা ছিল, আমাকে ক্ষমতায় বসে থাকতে হবে। কেউ নাড়াতে পারবে না। ’
মির্জা ফখরুল বরেন, ‘দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা আমাদের প্রভু। এক প্রভু আজ কোথায় গেছে? পিস্তল দেখিয়ে বলত, এটা তোমাকে এমনি দেওয়া হয় নাই, এটা ব্যবহার করার জন্য দেওয়া হয়েছে। করেছেনও ব্যবহার। মানুষকে মেরেছে, গুম করেছে। এখন আপনি (বেনজীর আহমেদ) কোথায়? তার (বেনজীর আহমেদ) সম্পর্কে আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান বলছেন, আমি তার সম্পর্কে কিছুই জানি না। অর্থাৎ রাষ্ট্র কিছুই জানে না। তাহলে এটা রাষ্ট্র আছে এখন?’
তিনি বলেন, ‘ঋণ নিয়ে নিয়ে অর্থনীতিকে পুরোপুরি ঋণগ্রস্থ করে ফেলেছে। এদের যুক্তি হচ্ছে, ২০ বছর ধরে আমরা এটা করব। তারপরে আমরা নাই। যা হবার তাই হবে। এরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ঋণের ওপর রেখে যেতে চায়। ইতোমধ্যে সেই ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মাথাপিছু এক লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা। রুপপুরসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট করে দেশকে ঋণনির্ভর করে ফেলেছে। এসব প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ করতে করতে আমরা শেষ হয়ে যাব।’
জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে ও মাহবুব আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারী, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল আহসান, অধ্যাপক শামসুল আলম লিটন ও ডা. আবু নাছের প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম