‘চাঁদাবাজি’ করতে গিয়ে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা গণপিটুনির শিকার
৩ জুন ২০২৪ ০১:৩৫
রাজধানীর পলাশী বাজারের ব্যবসায়ীদের হাতে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সাবেক সভাপতি মেহেদি হাসান ও তার সহযোগী শহীদুল ইসলাম। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মেহেদি ও তার সহযোগী শহীদুল সেখানে চাঁদাবাজি করতে গিয়েছিলেন।
রোববার (৩ জুন) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঘটনার সূত্রপাত। পরে গণপিটুনি দিয়ে ব্যবসায়ীরা ওই দুজনকে চকবাজার থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন।
মেহেদি হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। ছাত্রলীগের বদিউজ্জামান সোহাগ ও সিদ্দিকী নাজমুল আলম কমিটিকালীন সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
রোববার দিবাগত রাত ১টার দিকে পলাশী বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীদের মধ্যে তখনো উত্তেজনা কাজ করছে। প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, মেহেদি ও তার সহযোগী পলাশী বাজারে গিয়ে দোকান থেকে চাঁদাবাজি করতে শুরু করেন। এ সময় ওই বাজারের দুই ব্যবসায়ী নজরুল ও মাহবুব তাদের বাধা দেন। পরে ব্যবসায়ীরা ক্ষিপ্ত হয়ে মেহেদি ও শহীদুলকে গণপিটুনি দেন। পরে রাত ১২টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাদের দুজনকে চকবাজার থানায় নিয়ে যায়।
ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, চাঁদা চাইতে এলে আমরা তাকে বাধা দিই। তাতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রথম আমাকে ঘুষি মারে এবং পরে চাপাতি নিয়ে আসে। আমি সরে গেলে আর কিছু ঘটেনি। কিন্তু তাদের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পলাশী বাজারের কলা বিক্রেতা দেলোয়ারের কাছ থেকে এক হাজার টাকা নেন মেহেদি। কনফেকশনারি দোকানের মালিক সানাউল্লাহর কাছ থেকেও চাঁদা নেন, তবে তার পরিমাণ জানা যায়নি। এ ছাড়া প্রতিদিনই মেহেদি আর সহযোগীরা চাঁদাবাজি করেন বলে এই প্রতিবেদককে জানান পলাশী বাজারের একাধিক দোকান মালিক।
পলাশী দোকান মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাত ১১টার দিকে এসে এই ছাত্রলীগ নেতা আমাদের দোকানিদের থেকে চাঁদা দাবি করে। তাকে বাধা দিলে সে নজরুল নামে এক ব্যবসায়ী মারধর করে এবং চাপাতি দিয়ে কোপাতে যায়। পরে নজরুল পালিয়ে গেলে আমাকে চাপাতি দিয়ে মারতে আসে। আশপাশে থাকা দোকানিরা আমাকে উদ্ধার করে এবং তাদের ধরে ফেলে। তারপর সবাই মিলে গণপিটুনি দেয়। পরে আমরা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে তাদের নিয়ে যায়।
এদিকে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, অভিযুক্ত মেহেদি হাসান বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থী না হয়েও এখনো ওই হলেই থাকেন।
জানতে চাইলে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ইকবাল মামুন বলেন, ‘এটা প্রক্টোরিয়াল টিম দেখবে। সে এখন আর আমাদের ছাত্র নয়। তার ছাত্রত্ব মেই। সে অবৈধভাবে হলে থাকে। আমরা চিহ্নিত করতে পারলে তাকে তখনই বের করে দিতাম। একজন সাবেক ছাত্রের দায় তো বিশ্ববিদ্যালয় বা হল নেবে না।’
ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক মাকসুদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি শুনেছি এক সাবেক শিক্ষার্থীকে মার্কেটে চাঁদাবাজির অভিযোগে ধরে রেখেছে। তাকে পুলিশে দিয়েছে, সেটা মাত্র শুনলাম। যেহেতু সে হলে থাকে, সেটা হল প্রশাসন দেখবে। বর্তমানে সে যেহেতু আমাদের শিক্ষার্থী না তাই আমাদের এখানে কোনো দায় নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী তাকে কোনো শাস্তি বিশ্ববিদ্যালয় দিতে পারবে না।’
সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, এর আগেও একাধিক অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন মেহেদি হাসান। ২০১৪ সালে সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতিকে পদ থেকে তাকে সাময়িক অব্যাহতিও দেওয়া হয়েছিল।
সারাবাংলা/আরআইআর/টিআর
চাঁদাবাজি চাঁদাবাজির অভিযোগ টপ নিউজ পলাশী বাজার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা