Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাজেট প্রণয়নে ৬ চ্যালেঞ্জ পেয়েছেন অর্থমন্ত্রী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৬ জুন ২০২৪ ১৮:৫১

ঢাকা: নতুন অর্থবছরের বাজেট জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এই বাজেট প্রণয়ন করতে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বাংলাদেশের জন্য ছয়টি চ্যালেঞ্জ পেয়েছেন তিনি। মূল্যস্ফীতি, সুদের হার, রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধি, পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ— এই ছয় চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় নিয়েই এই বাজেট প্রণয়ন করেছেন অর্থমন্ত্রী।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বিকেল ৩টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এই বাজেট উত্থাপন করেন। সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার এই বাজেট বাংলাদেশের ইতিহাসের বৃহত্তম।

মূল্যস্ফীতি

‘টেকসই উন্নয়নের পরিক্রমায় স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা’ শিরোনামের বাজেট বক্তৃতায় বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বাংলাদেশের জন্য ছয়টি চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী, যার শুরুতেই তিনি বলেছেন মূল্যস্ফীতির কথা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের একটি বড় প্রভাব এর ওপর রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন- বাজেটের লক্ষ্যও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ

অর্থমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯-এর বিরূপ অর্থনৈতিক প্রভাব সফলভাবে মোকাবিলা করে বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধির গতি পুনরুদ্ধার করেছিল। কিন্তু গত দুই বছরে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা নতুন ঝুঁকি তৈরি করেছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে ওই বছরের জুন মাস নাগাদ বিশ্ব বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম, গম ও সারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। বৈশ্বিক বাজারের এই অস্থিরতায় বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতি দ্রুত বাড়তে থাকে। ২০২২ সালের জুন নাগাদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যমস্ফীতির হার প্রায় ৯ শতাংশে পৌঁছায়।

মন্ত্রী বলেন, পরবর্তী সময়ে বৈশ্বিক পণ্য বাজারে সরবরাহ ঘাটতি প্রশমিত হয়ে এলে বিভিন্ন পণ্যের পরিমাণ বর্তমানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে এসেছে। তবে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় দেশের অর্থনীতিতে চাপ পড়ে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্গে টাকার বিনিময় হারের ওপর চাপ তৈরি হয়। ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে প্রায় ২৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। এতে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতির ওপর। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে মূল্যস্ফীতি গড়ে ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সুদের হার

২০২২ সালের জানুয়ারিতে সুদের হারের বিশ্বব্যাপী রেফারেন্স রেট হিসেবে স্বীকৃত সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট ছিল শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত প্রায় সব দেশ সুদের হার বাড়াতে থাকে। এতে এ বছরের মে মাসে ছয় মাসের গড় হিসাবে সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট বেড়ে ৫ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, এর প্রভাবে বাংলাদেশকে দুই ধরনের চাপ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। উন্নত বিশ্বে সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় একদিকে বাংলাদেশ থেকে মূলধনের বহিঃপ্রবাহের গতি বাড়ছে, পাশাপাশি অন্তঃপ্রবাহ কমার প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে। ফলে একদিকে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি বাড়ছে, অন্যদিকে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের দায় বাড়ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে বাৎসরিক ব্যয় ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলোতে সুদের হার কমার যে পূর্বাভাস রয়েছে, তা সঠিক না হলে এ ধারা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।

আরও পড়ুন-

রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধি

রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সমতুল্য অনেক দেশের তুলনায় পিছিয়ে থাকাকেও বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত ৮ শতাংশের কম। অথচ ২০২২ সালের হিসাবে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে এই অনুপাত ছিল যথাক্রমে ১৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ, ১১ দশমিক ৫৯ শতাংশ, ১৪ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ ও ১৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। মধ্যমেয়াদে আমাদের উন্নয়ন লক্ষ্য পূরণ করতে হলে ১০ শতাংশের বেশি কর-জিডিপি অনুপাত অর্জন করা জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন মন্ত্রী।

পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন

বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি মনে করা হয় প্রবাসীদের। তাদের আয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু আধুনিক সব প্রযুক্তির ব্যবহার ও যন্ত্রনির্ভর উৎপাদন ব্যবস্থার প্রসার ঘটেছে। এতে বাংলাদেশের প্রবাসীদের সিংহ ভাগ স্বল্প দক্ষ ও অদক্ষ হওয়ায় তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকুচিত হয়ে পারে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য ভবিষ্যতের বৈশ্বিক কর্মপরিবেশে খাপ খাইয়ে নেওয়ার মতো প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও জ্ঞান অর্জনের উপযোগী পরিবেশ এখন থেকেই তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। একইসঙ্গে আমাদের কর্মক্ষম জনগণের জন্য বৈশ্বিক চাহিদা অনুযায়ী তাদের দক্ষতার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। এর জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তন

পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশ নিম্ন সারিতে থাকলেও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের দিক থেকে সর্বোচ্চ ঝুঁকির মুখে রয়েছে। জার্মানওয়াচ প্রকাশিত গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেস্ক ২০২১ অনুযায়ী এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জলবায়ু-উদ্বাস্তু মানুষের সংখ্যা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ও চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার ফলে কৃষি জমি ও কৃষি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার চরম আশঙ্কাও রয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রভাব মোকাবিলাকেও অর্থমন্ত্রী বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, এ বিবেচনায় আমরা এরই মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছি।

আরও পড়ুন-

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ

গত দেড় দশকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক নানা সূচকে অতুলনীয় অর্জনের প্রেক্ষাপটে ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে। সেই উত্তরণের প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন হলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে যেসব সুবিধা পেয়ে থাকে, তার অনেক সুবিধাই আর বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য হবে না। রফতানিতে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা যেমন কমবে, তেমনি আমদানিতেও শুল্ক-কর কমিয়ে আনতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের পণ্য মুক্ত প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে।

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, পরিবর্তিত এ বাস্তবতায় স্থানীয় শিল্পকে নিজেদের দক্ষতা ও কৌশল দিয়ে বহির্বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হবে। উৎপাদনে নতুন ও উন্নততর প্রযুক্তি ব্যবহার করে পণ্যের মান উন্নয়ন করতে হবে, নতুন পণ্য উদ্ভাবন করতে হবে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণকে মসৃণ ও টেকসই করতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।

মন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এ রকম সম্ভাব্য সব ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় কৌশল প্রণয়নে সরকার উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে। কমিটি ও তার অধীনে গঠিত বিভিন্ন উপকমিটি এরই মধ্যে বিভিন্ন কৌশল নির্ধারণ করেছে, যার ভিত্তিতে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এসব চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় নিয়েই ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রণয়ন করেছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে উন্নত, টেকসই ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনি ইশতেহারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নই এই বাজেটের খাতভিত্তিক বরাদ্দ ও মধ্যমেয়াদি নীতি কৌশলের কেন্দ্রবিন্দু।

এ কৌশলের অধীনেই প্রস্তাবিত বাজেটের আকার করা হয়েছে সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে মাত্র ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ ও সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি। প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির গড় হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশে সীমিত রাখার লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। সব মিলিয়ে প্রস্তাবিত বাজেটটি সংকোচনশীল রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন-

সারাবাংলা/টিআর

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বাজেট বাজেট ২০২৪-২৫ বাজেট প্রণয়নের চ্যালেঞ্জ

বিজ্ঞাপন

খুলনায় যুবকের পেটে মিলল ইয়াবা
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর