ছাত্রাবাসে শিক্ষার্থীকে রাতভর পিটিয়েছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা
৬ জুন ২০২৪ ২১:৪৮
যশোর: মারধরের ঘটনায় ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ তুলে নিতে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার রাতে যবিপ্রবির শহীদ মসিয়ূর রহমান ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার (৩০৬ নাম্বার) কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
সোহেল রানার নেতৃত্বে তার সমর্থকরা এই নির্যাতন চালিয়েছেন বলে ভুক্তভোগীর অভিযোগ। ঘটনার শিকার শিক্ষার্থী শাহরীন রহমান প্রলয় (২৪) বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রাবাসের আবাসিক বাসিন্দা। তাকে নির্যাতনের একপর্যায়ে মনে করেছিলেন, তিনিও হয়তো বুয়েটের আবরার ফাহাদের মতন মারা যাবেন।
তাছাড়া রাতভর নির্যাতনের পর ওই শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই শিক্ষার্থী বর্তমানে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রক্টর প্রফেসর ড. মো. হাফিজ উদ্দিনকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবে বলেও জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন।
বিশ্ববিদ্যালয় ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ জুন সোমবার ক্যাম্পাসে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে প্রলয়কে মারধর করেন শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান ২০২৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার অনুসারী শাহীনুর রহমান। এই ঘটনায় শাহীনুরের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দেন প্রলয়। এর জেরে মঙ্গলবার রাত দুইটার দিকে ছাত্রাবাসের নিজ কক্ষ থেকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে ছাত্রলীগের সভাপতির কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়।
এসময় ছাত্রলীগের সভাপতিসহ তার কয়েকজন অনুসারী উপস্থিত ছিলেন। সভাপতি সোহেল রানার কক্ষে প্রলয়কে এলোপাতাড়ি মারধর ও রড দিয়ে পিটানো হয়। রাত দুইটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত দফায় দফায় নির্যাতন করা হয়েছে দাবি বলে দাবি ওই শিক্ষার্থীর। এরপর ঘটনাটি যাতে ভুক্তভোগীরা কাউকে জানাতে না পারে, সে কারণে প্রলয় ও তার রুমমেট সহপাঠী আমিনুল ইসলামের ফোন কেড়ে নেন অভিযুক্তরা।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী শাহরীন প্রলয় জানান, সোমবারের ঘটনায় আমি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম। এই ঘটনায় ঘুম থেকে তুলে রাত দুইটাই ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা ভাইয়ের নির্দেশে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে যায় ছাত্রলীগকর্মী আমিনুল ইসলাম ও সিয়াম। সভাপতির কক্ষে প্রবেশ করার সাথে সাথেই ছাত্রলীগনেতা আশিকুজ্জামান লিমন, ইসাদ, রায়হান রহমান রাব্বি, বেলাল হোসেন, শেখ বিপুল, রাইসুল হক রানাসহ প্রায় ১০-১৫ জন আমাকে মারধর শুরু করে। এসময় রুমের মেঝেতে লুটিয়ে পড়ি। তখন তারা আমাকে পা দিয়ে লাথি মারতে থাকে। এসময় তারা আমাকে বলতে থাকে কেনো প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিস? এসময় তারা আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। একপর্যায়ে তারা আমার সারা শরীরে পেটাতে শুরু করে। ভোর পাঁচটা পর্যন্ত চলে দফায় দফায় এমন নির্যাতন। এমন সময়ে আমার মনে হচ্ছিল আমিও মনে হয় বুয়েটের আবরার ফাহাদের মতো মরে যাবো।’
প্রাণে বাঁচতে আমি ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা ভাইয়ের পা জড়িয়ে ধরে বাঁচার আকুতি জানাই। এসময় সোহেল রানা বলেন, ‘কালকের মধ্যে অভিযোগ তুলে নিবি, না হলে তোকে গুলি করে মারবো।’ এসময় সোহেল আমাকে বুকে লাথি মেরে আমাকে মেঝেতে ফেল দেয়। ভোর হওয়ার সাথে সাথে ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ি চলে যাবি বলে নির্দেশ দেয়।
হাসপাতালে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার ও আমার পরিবার হুমকির মুখে আছে। অভিযুক্তরা আমার পরিবারের উপর বোমা মারারও হুমকি দিচ্ছে। এই ঘটনায় বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপিং-দ্বন্দ্ব থাকে। এসব গ্রুপিংয়ে বারবার আমার নামে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। ঘটনার দিন আমি ক্যাম্পাসে ছিলাম না। যশোরের বাইরে ছিলাম। রাজনীতিকভাবে আমি প্রতিহিংসার শিকার।’
যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে দেখে এসেছি। সে আমার কাছে অভিযোগ জানিয়েছে। ছাত্রলীগ নেতা সোহেল রানা ও তার সমর্থকরা এই নির্যাতন চালিয়েছে বলে সে অভিযোগ করেছে। এ ঘটনা তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি জানান, ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. মো. হাফিজ উদ্দিনকে প্রধান করে এবং সংশ্লিষ্ট হল প্রভোস্ট ও ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দফতরের পরিচালককে সদস্য করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবে।
সারাবাংলা/এমও
ছাত্রলীগ ছাত্রাবাস যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি)