প্রস্তাবিত বাজেট অর্থনীতি সংকটের চক্রেই ঘুরপাক খেতে থাকবে: বাসদ
৬ জুন ২০২৪ ২২:৩৩
ঢাকা: বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটকে সংকটের চক্রে ঘূর্ণায়মান দিশাহীন বাজেট বলে আখ্যায়িত করে বলেছেন বিগত বছরের অর্থনৈতিক সংকটের কারণ চিহ্নিত করে দূর না করার দিক নির্দেশনা বাজেটে না থাকায় অর্থনীতি সংকটের চক্রেই ঘুরপাক খেতে থাকবে। তিনি বলেন, ‘সরকারের দুর্নীতি, অপচয় ও লুণ্ঠনমূলক নীতির দায় জনগণের ওপর চাপিয়ে কর ও ভ্যাট বৃদ্ধির বাজেট জনজীবনে দুর্ভোগ আরও বহুগুণ বাড়াবে।’
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আইএমএফ এর পরামর্শ মেনে আগামী অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে, যা জিডিপির ১৪ দশমিক ২০ শতাংশ। জিডিপির অনুপাতে এটি গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ছোট বাজেট। বাজেট ছোট হলেও সরকারি ব্যয় কমবে না বরং জনগণের ওপর কর ভ্যাটের বোঝা চাপিয়ে আয় বাড়ানোর নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। গত অর্থবছরে জনজীবনে দুর্ভোগ বয়ে নিয়ে এসেছিল দ্রব্যমুল্য, মূল্যস্ফীতি, টাকার মানের অবনমন, ডলার সংকট ও ডলার পাচার, বিদেশি ও দেশি ঋণ এবং তাদের সুদাসল পরিশোধ খাতে ব্যয় বৃদ্ধি, রিজার্ভ সংকট ও ব্যাংক খাতে লুটপাট। এসব নিয়ে এত আলোচনার পরও এই সংকট নিরসনে পদক্ষেপ না নেওয়ায় এবং বাজেটেও সমাধানে কোনো দিক দিশা না থাকায় সংকট আরও ঘনীভূত হবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী তিন মাসেই ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। গত মার্চের শেষে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৯ শতাংশ। অর্থনীতিবিদদের মতে খেলাপী ঋণের পরিমাণ বাস্তবে ৪ লাখ কোটি টাকার বেশি। দেশে এর আগে খেলাপি ঋণ বেড়ে কখনও এতটা হয়নি। একদিকে ঋণ খেলাপি বাড়ছে অন্যদিকে সরকার বাজেটে দেশের ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ফলে দেশের অর্থনীতিতে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে।’
ফিরোজ বলেন, ‘একদিকে ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের স্লোগান অন্যদিকে ক্রমাগত মুঠোফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট সেবার উপর ক্রমবর্ধমান ভ্যাট আরোপের নিন্দা করে তিনি বলেন, ১০০ টাকার টক টাইম পেতে এখন গ্রাহককে দিতে হবে ১৩৯ টাকা। বহুল প্রচারিত মেট্রো রেলেও ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। যা জনজীবনে ভোগান্তি বাড়াবে।’
শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য ও কর্ম সংস্থানকে প্রধান গুরুত্ব দেওয়ার দাবি থাকলেও এ সব খাতে গতানুগতিক বরাদ্দের নিন্দা করে তিনি বলেন, ‘এর ফলে বিদেশ নির্ভরতা আরও বাড়বে এবং সাধারণ মানুষের জীবন দুর্ভোগ বাড়বে। দুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, টাকা পাচার, ব্যাংক লুটের যে মিলিত চক্রে দেশের মানুষের দুর্দশা বাড়িয়েছে তা নিরসনে কোনো উদ্যোগ না নিয়ে জনগণের ওপর কর-ভ্যাটের বোঝা চাপানোর প্রতিবাদ করে বলেন, বাজেট নিয়ে সরকারী মহলের বাগাড়ম্বর দিয়ে অর্থনীতির সংকট দূর হবে না।’
তিনি ঋণনির্ভর ঘাটতি বাজেট না করে গণমুখী বাজেট প্রণয়নের দাবি জানান।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে