ঈদগাহ উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে মারামারিতে জড়াল ছাত্রলীগ, আহত ৩
১৪ জুন ২০২৪ ২৩:৫৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও ২ সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে সিটি করপোরেশনের একটি অনুষ্ঠান শেষে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে দু’জন ছুরিকাহতসহ তিনজন আহত হয়েছেন।
শুক্রবার (১৪ জুন) বিকেল ৫টার দিকে নগরীর পাঁচলাইশ থানার মুরাদপুরে এ ঘটনা ঘটেছে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে মেয়র এবং সংসদ সদস্য আবদুচ ছালাম ও মহিউদ্দিন বাচ্চু দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন বলে জানা গেছে।
এদিন বিকেলে মুরাদপুরে আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভারের নিচে নতুন তৈরি করা ঈদগাহ ও জানাজার স্থান উদ্বোধন উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সিটি করপোরেশন। সেখানে মেয়র প্রধান অতিথি এবং দুই সংসদ সদস্য বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন।
জানা গেছে, অনুষ্ঠানস্থলে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী পৌঁছানোর আগে নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক উপকমিটির সদস্য নুরুল আজিম রনির নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি অংশ পৌঁছে।
মেয়র অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছার পর নগরীর ওমরগণি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান তারেক ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াছ উদ্দিনের নেতৃত্বে আরেক অংশ সেখানে পৌঁছে। এ অংশটি এমইএস কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সদস্য আরশেদুল আলম বাচ্চুর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
মেয়র গাড়ি থেকে নামার সময় উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীরা সেখানে জড়ো হলে মহিউদ্দিন নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীকে আরাফাত হোসেন নামে একজনের ‘ধাক্কা দেওয়া’ থেকে উত্তেজনার সূত্রপাত হয় বলে জানা গেছে।
ঘটনাস্থলে থাকা নগর ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ইমাম উদ্দিন নয়ন সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রথমে একজন আমাদের গ্রুপের এক কর্মীকে ধাক্কা দেয়। তখন আমরা কিছুই বলিনি। মেয়র মহোদয় এবং দুজন মাননীয় এমপির বক্তব্যসহ অনুষ্ঠান সুন্দরভাবে শেষ হয়। আমরা যখন মেয়র মহোদয়কে বিদায় দিয়ে গাড়িতে তুলে দিচ্ছিলাম, তখন নুরুল আজিম রনির গ্রুপের কর্মীরা আমাদের ওপর হামলা করে। এসময় উনি (রনি) সেখানে ছিলেন। তিনি হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেননি।’
ঘটনাস্থল থেকে ছুরিকাঘাতে আহত অবস্থায় মো. সাজিদ ও সুমন নামে দুজন এবং আয়াত হোসেন নামে আরও একজনকে ঘুষিতে রক্তাক্ত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনজনই ওমরগণি এমইএস কলেজের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানান ইমাম উদ্দিন নয়ন।
এ বিষয়ে নুরুল আজিম রনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘শুরু থেকেই তারা অনুষ্ঠানস্থলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছিল। এটা সিটি করপোরেশন আয়োজিত একটি ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ প্রোগ্রাম। আমি সেখানে এলাকাবাসী হিসেবে বক্তব্য রেখেছি। মূলত আমি কেন বক্তব্য রেখেছি, সেটা তারা সহ্য করতে পারেনি। সেজন্য অনুষ্ঠান ভণ্ডুল করার চেষ্টা করেছে। মেয়র মহোদয়ের ইমেজ ক্ষুন্নের চেষ্টা থেকে নিজেরা বিশৃঙ্খলা করে আমাদের ওপর দায় চাপাচ্ছে। অনুষ্ঠান শেষে তারা আমাদের ছেলেদের ওপর হামলার চেষ্টা করে। আমরা সবাইকে শান্ত রেখে সুন্দরভাবে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে যাই।’
জানা গেছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সিটি করপোরেশন তাদের আয়োজন সংক্ষিপ্ত করে। মেয়র, দুই সংসদ সদস্য এবং সভাপতি হিসেবে স্থানীয় কাউন্সিলর মোবারক আলী ও এলাকার দুজন প্রতিনিধি বক্তব্য রাখার পর তড়িঘড়ি করে অনুষ্ঠান শেষ করা হয়। এসময় ফ্লাইওভারের পশ্চিমপাশে হামলা পাল্টা হামলা চলছিল। অন্যপাশ দিয়ে গাড়িতে উঠে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন মেয়র ও দুই সংসদ সদস্য।
জানতে চাইলে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটা কোনো রাজনৈতিক প্রোগ্রাম ছিল না। সিটি করপোরেশনের প্রোগ্রাম ছিল। অনুষ্ঠান সুন্দরভাবে হয়েছে। এরপর কয়েকজন দর্শকের মধ্যে হয়তো সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এটা বড় কোনো ঘটনা নয়।’
সারাবাংলা/আরডি/এমও