বকেয়া টাকা না পাওয়ায় দিশেহারা নওগাঁর চামড়া ব্যবসায়ীরা
১৬ জুন ২০২৪ ১২:০৫
নওগাঁ: ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে বছরের পর বছর বকেয়া টাকা না পাওয়ায় দিশেহারা নওগাঁর চামড়া ব্যবসায়ীরা। ফলে চলতি বছর চামড়া কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। কোরবানি উপলক্ষে পশুর চামড়া সংগ্রহের প্রস্তুতি শুরু করেনি চামড়া ব্যবসায়ীরা। এছাড়া চামড়া প্রস্তুতির প্রধান উপকরণ লবণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দুশ্চিন্তা আরও বেড়েছে।
চামড়া শিল্পকে রক্ষা করতে জেলাভিত্তিক চামড়া ব্যবসায়ীদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়াসহ সরকারের নজরদারি বাড়ানো গেলে আবারো ঘুরে দাঁড়াবে এই মূল্যবান চামড়া খাতটি, এমনটিই মনে করছেন উত্তরবঙ্গের চামড়ার অন্যতম মোকাম নওগাঁর ব্যবসায়ীরা।
ইতোমধ্যেই সরকার চামড়ার নতুন দাম নির্ধারণ করেছে। ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৬০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। গতবারের তুলনায় খাসির কাঁচা চামড়ার দাম ২ থেকে ৫ টাকা বাড়িয়ে প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ২৫ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম ৬ টাকা বাড়িয়ে ১৮ থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
নওগাঁ শহরের গোস্তহাটির মোড়ের পাশে ‘চামড়া পট্টি’। ঈদের দিন থেকেই চামড়া আড়তে ব্যবসায়ীদের হাকডাকে মুখরিত হয়ে উঠবে। কিন্তু কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া কেনার প্রস্তুতি এখনও শুরু করেননি তারা। জেলায় প্রতি মৌসুমে চামড়া লবণজাত করতে প্রয়োজন হয় অন্তত ৩৫০ মেট্রিক টন লবণ। যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৭৪ লাখ টাকা। প্রতিবস্তায় লবণের দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। মোটা লবণের দাম ৯০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা। এতে চামড়া সংরক্ষণের খরচ বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ১৫০ জন চামড়া ব্যবসায়ী আছেন। কয়েকজন ট্যানারি মালিকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সরকার চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিলেও ট্যানারি মালিকরা সে দামে কিনে না। সিন্ডিকেট থাকায় ব্যবসায়ীরা তাদের কাছে এক প্রকার জিম্মি। ২০০৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ১০ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে। এসব টাকা পেলে ঘুরে দাঁড়াবে চামড়া শিল্প। এবছরও চামড়া কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা।
শ্রমিকরা জানান, জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৩০টি চামড়া গুদাম ছিল। যেখানে সারা বছর প্রায় শতাধিক শ্রমিকদের কর্মসংস্থান হয়েছিল। বর্তমানে রয়েছে দুটি গুদাম। যেখানে কাজ করেন পাঁচজন। তবে কোরবানির মৌসুমে প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক কাজ করেন। চামড়া গুদামে কাজ করা অনেক কষ্টের হলেও সেই তুলনায় টাকা না পাওয়ার কারণে শ্রমিকরা ভিন্ন পেশা চলে গেছে।
জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সাবেক সভাপতি আলাউদ্দিন খান বলেন, গত প্রায় পাঁচ বছরে ঢাকায় ব্যবসায়ীর কাছে আমার প্রায় ১২লাখ টাকা বকেয়া পড়ে আছে। তাই পুঁজি হারিয়ে এখন দুর্বল হয়ে পড়েছি। কোরবানির সময় ধার-দেনা করে চামড়া কিনতে হয়। কিন্তু ধারের টাকা আমরা পরিশোধ করতে পারি না। অপরদিকে ব্যবসায়ীরাও আমাদের টাকা আটয়ে রাখে। এভাবে আসলে ব্যবসা চলে না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ তিনি যেন চামড়া শিল্পের দিকে নজর দেন।
নওগাঁ জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি মো. মোমতাজ হোসেন বলেন, গত বছর নওগাঁয় গরু-মহিষ ও ছাগল-ভেড়াসহ প্রায় এক লাখ ৬৫ হাজার পিচ চামড়া প্রস্তুত করা হয়েছিল। যার বাজার মূল্য প্রায় ৬ কোটি টাকা। এ বছরও একই পরিমাণ চামড়া কিনে প্রস্তুত করা হবে। গত পাঁচবছরে (২০১৯-২০২৩) জেলার অন্তত ১৫০ জন চামড়া ব্যবসায়ী ট্যানারি মালিকদের কাছে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে। বকেয়া টাকা পাওয়া গেলে আবারও ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়াবে।
সারাবাংলা/ইআ